Posts

উপন্যাস

ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা। পর্বঃ০৮

July 1, 2025

Nusrat Jahan Mou

64
View

ভাগ্যাকাশের ধ্রুবতারা।।।  পর্ব : ৮
কলমে ঃজাহান-Jahan

একটি নীরব নৈশভোজ, যার আড়ালে জমে থাকে চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাস আর অনুচ্চারিত প্রার্থনার সুর।।।

রাতের ঘরে আলো সোনালি। ছায়া পড়ে দেয়ালে, যেমন পড়ে জীবনের আলো-আঁধারিতে ভালোবাসার অস্পষ্ট রেখা।
ডাইনিং টেবিলের চারপাশে চারজন মানুষ—তবু যেন আলাদা গ্রহের বাসিন্দা। নিস্তব্ধতা এমন, যেন বাতাসেও শব্দ করতে লজ্জা লাগে। শুধু কাচের  চামচ প্লেটের গায়ে ধীরে ধীরে ধাক্কা খায়, নীরবতার পাঁজরে।

সুগন্ধে ভরে আছে ঘর—মরিচ-লবঙ্গ-মাংসের হালকা আঁচ।
হঠাৎই ছোট্ট জায়ান হাতের ভাত ফেলে হেসে কেলিয়ে মেঝেতে গড়ায়। দুইজন গৃহকর্মী তার পেছনে ছুটে যায়—হাসিমুখে, আদরের আনন্দে।
কিন্তু বাকিরা চুপচাপ, যেন সেই হাসিও এ ঘরে ঢুকতে সংকোচ বোধ করে।

মিসেস চৌধুরী খাবার তুলে দিচ্ছেন সন্তানের প্লেটে—আলগা মমতায়, এমন ভাবে যেন প্রতিটা দানাই আশীর্বাদ।
মি. চৌধুরী একটু ঝুঁকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— “ইকতিদার, একটু আর নাও, এইটুকুতে পেট ভরবে? এত কম কেন?”

ইকতিদার মাথা নাড়িয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,

— “এইটুকুই যথেষ্ট, বাবা। খিদেটা এমনিতেই... অনেক কমেছে।”

কথা ফুরোয়, আবার নীরবতা। ঘড়ির কাঁটা যেমন তার কাজ করে যায়—চুপচাপ, হিসেব করে।

হঠাৎ, মিসেস চৌধুরীর হাত থেকে চামচ পড়ে যায়। ধাতব শব্দটি যেন কারও মনের গভীরে ধাক্কা দেয়।

তিনি দৃষ্টি নামিয়ে শান্ত গলায় বললেন,

— “দোলনচাঁপা ফিরছে দেশে, শুনেছো তো? ক’দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। ওকে দেখার জন্য মনটা কেমন ছটফট করছে… আর ফারহিনের বিয়ের পর থেকে এই ঘরটা যেন… একটা শূন্য হলঘর হয়ে গেছে। সকালের আলো যেমন জানলায় নামে, তেমনি সরে যায়। আমি সারাদিন কাজ করি, সংসার চালাই, তবু যেন ভেতরে ভেতরে শুন্যতা জমে… ফারহিন তো মাসে একবারও আসে না। একা একা বড় কষ্টে থাকি রে, ইকতিদার।”

মি. চৌ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ফারহিন থামালেন কথার ধারা,

— “আহা মা, মন খারাপ করো না তো। তুমি যেভাবে আমাকে মানিয়ে  নিয়েছিলে… ভাইয়ের জন্যও তো একই রকম একটা ব্যবস্থা করা যায়। এখনকার যুগে নিজের পছন্দটাও তো একটা দায়িত্ব।”

ইকতিদার খাবার তুলে নিচ্ছিল, কিন্তু তার চোখে অন্যমনস্কতা।
চোখের সামনে প্লেট, কিন্তু মনে কোথাও যেন সমুদ্রের ঢেউ।

মিসেস চৌধুরী এবার গলা একটু চড়িয়ে বললেন,

— “তোমাকে কতবার বলেছি, ইকতিদার! যদি কাউকে পছন্দ করো—বলো। আমি কি কখনও মানা করেছি? বিদেশি হলেও আপত্তি করিনি। অফিসের কেউ, বন্ধুরা, এমনকি তোমার ফুফু বা খালার পরিচিত মেয়েরা—সবাই তো জানে, তুমি ভালো ছেলে। তবু… তুমি কিছুই বলো না। এমন নিঃশব্দতা কি স্বাভাবিক?”

একটু থেমে, যেন নিঃশ্বাস নিলেন ভেতর থেকে। তারপর দুঃখের আঁচড়ে বললেন,

— “তোমার বাবা আর আমি তো দিন দিন বুড়িয়ে যাচ্ছি… একদিন হঠাৎ চলে গেলে, হয়তো তোমার সামনে মরা মুখটাও থাকবে না। তখন কাঁদবে কাকে নিয়ে?”

মি.চৌধুরী  ক্ষীণ স্বরে প্রতিবাদ করলেন,

— “ফায়জা, তুমি এমন কথা বলো কেন! আল্লাহর রহমতে আমরা ভালোই আছি।”

কিন্তু মিসেস চৌ থামলেন না। তার চোখে যেন অশ্রুর ধারা তৈরি হচ্ছিল—অভিমান আর মাতৃত্ব মিশে যাওয়া নদী।

— “তোমার বাবার বন্ধুদের কতো প্রস্তাব আসে! সবাই চায় ছেলেটাকে জামাই করতে। কিন্তু আমাদের ছেলে? কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। যেন সবার ওপরে একা দাঁড়িয়ে আছে। বয়স তো কম হলো না—একত্রিশ বছর হয়ে গেল! এই বয়সে তো মুসলমান ছেলেরা একটা সংসার গুছিয়ে ফেলে। আর তুমি…?”

মি. চৌ এবার নরম চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে শুধু বললেন,

— “ইকতিদার… বাবা, কিছু বলো…”

ইকতিদার চুপ করে উঠে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে সে হেঁটে চলে গেল নিজের ঘরের দিকে—নীরব পায়ে, যেন পায়ের শব্দেও কাউকে ব্যথা দিতে চায় না।

পেছনে রইলেন মিসেস চৌধুরী—চোখে দীপ্ত ক্রোধ, ঠোঁটে ক্ষীণ কাঁপা।
তিনি বললেন,

— “এই ছেলেকে নিয়ে আমি কী করবো বলো তো! একা একা যদি সব ঠিক না করি, তবে আমি ফায়জা রওশন চৌ নই!”

ফারহিন মায়ের হাত ধরে বলল,

— “মা, চিন্তা কোরো না। আমি ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবো। একটা না একটা পথ নিশ্চয় বেরোবে।”

★★★

রাত কিছুটা গড়ালে ফারহিন নরম পায়ে ভাইয়ের ঘরের বাইরে এসে দাঁড়াল।

— "ভাই… আসবো?"

ইকতিদার তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে, দৃষ্টিপাত শূন্যে।

সে ঘরে ফিরে বলল,
— "এসো…"

ফারহিন ঘরে ঢুকে ভাইয়ের পাশে বসে বলল,
— "ভাই, মন খারাপ করো না… আমি বেশি কথা বলতে পারি না, তাই ঘুরিয়ে বলবো না। তোমাকে বিব্রত করতে আসিনি—জায়ানকে শুইয়ে রেখে এসেছি। ছেলেটা ঘুমাবে।"

— "তুমি বড় হয়েছো। তোমার যদি পছন্দ থাকে, জানাও। তোমার সুনাম আছে, এমন কেউ নেই যে তোমাকে মেয়ে দেবে না। শুধু তুমি নিজেই অনিশ্চিত… কী করবে, বুঝতে পারছি না। কিন্তু এখন আল্লাহর নামে নিজেকে স্থির করো ভাই।"

ইকতিদার নিচু চোখে তাকিয়ে রইল। কোনো সাড়া নেই।

ফারহিন মজা করে হেসে বলল,
— "কোনো বিশেষ কারণ না থাকলে… তুমি কি তবে ছেলেদের প্রতি আসক্ত? যদি তাই হয়, আমাকে বলো। তোমার দুলাভাইকে বলবো—ঝাড়ফুঁকের ব্যবস্থা করুক! প্রয়োজনে ডাক্তার দেখাক—শেষমেশ সে-ই তো একমাত্র শালা!"

ইকতিদার মৃদু হেসে বলল,
— "এমন কিছু না, আপু…"

ঠিক তখনই জায়ানের কান্নার শব্দ শোনা গেল। ফারহিন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়াল।

— "বুঝতেই পারছো, ব্যাপারটা জরুরি… সময় থাকতেই ভেবে জানিও, ভাই।"

( To be continued… )

📣 আপনার মতামত দিন

গল্পটি কেমন লাগলো? কমেন্টে জানান।
লাইক ও ফলো করে পাশে থাকুন যেন পরবর্তী পর্ব মিস না হয়।

🔹 #ভাগ্যাকাশের_ধ্রুবতারা
🔹 #জাহান-Jahan
🔹 ✅ ফলো করুন লেখক#জাহান-Jahan
https://www.facebook.com/share/p/16kGUhZnny/
🔹 👥 যুক্ত হোন আমাদের গ্রুপে
@জাহানের গল্প- উপন্যাস - কবিতা সমগ্র
#followers
#everyone

Comments

    Please login to post comment. Login