Posts

কিডজ ফ্যাক্টরি

এটি একটি ফ্যান্টাসি গল্প।যেখানে নায়ক আসতে আসতে গড লেভের পাওয়ার পায়

July 4, 2025

Shipu tanchangya

Original Author Shipu

117
View

প্রথম অধ্যায়: বনের আর্তনাদ ও বিদ্যুতের জন্ম
শুভ্রর ছোট্ট পা দুটি শুকনো পাতার উপর খসখস শব্দ তুলে বনের বুক চিরে অবিরাম ছুটে চলছিল। তার দশ বছরের শরীরটা ঘন ঝোপঝাড় আর গাছের ডালপালার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত, জামাকাপড় শতচ্ছিন্ন। প্রতিটি শ্বাস তার ফুসফুসে তীব্র যন্ত্রণা দিচ্ছিল, যেন দম ফুরিয়ে আসছে, কিন্তু থামার কোনো উপায় নেই। পিছনে তাদের অশুভ, হিংস্র চিৎকার ক্রমশ কাছে আসছিল—নেকড়ে ডেমনগুলো। তাদের প্রতিটি গর্জন যেন শুভ্রর হৃদপিণ্ডের উপর এক একটা হাতুড়ির ঘা দিচ্ছিল।
তাদের কথা মনে পড়তেই শুভ্রর রক্ত হিম হয়ে আসে। ধারালো দাঁত, জ্বলন্ত লাল চোখ আর লম্বা লোমশ শরীর—এক মুহূর্তে তার শান্ত, সবুজ গ্রামটাকে তারা নরকে পরিণত করেছিল। সে তার নিজের চোখে দেখেছে বাবা-মায়ের শেষ আর্তনাদ, দিদিমার কোলে বসে রূপকথার গল্প শোনার দিনগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার বীভৎস দৃশ্য। বন্ধুদের সাথে নদীর তীরে দুরন্তপনা, মেঠো পথে ছুটে বেড়ানো—সবকিছুই যেন এক নিমিষে ছাই হয়ে গিয়েছিল। সেই ভয়াবহ রাত, আকাশের রক্তিম আভা, আগুনের লেলিহান শিখা আর ডেমনদের উল্লাসনৃত্য—কোনোদিনও সে ভুলতে পারবে না। কেন? কেন তার গ্রামের নিরীহ মানুষগুলোর উপর এমন নৃশংস আক্রমণ হল? তাদের তো কারো কোনো ক্ষতি করেনি। তবে কেন ওই ক্ষুধার্ত ডেমনগুলো তাদের জীবন কেড়ে নিল? এই প্রশ্ন তার ছোট্ট মনে বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল, যার কোনো উত্তর সে খুঁজে পাচ্ছিল না।
দৌড়ানোর সময় তার চোখ ভিজে উঠছিল। অশ্রু তার ধুলোমাখা গাল বেয়ে নেমে আসছিল, কিন্তু সে থামতে পারছিল না। তার কানের পাশে তখনও যেন তার বাবা-মায়ের শেষ আর্তনাদ, প্রতিবেশীদের অসহায় চিৎকার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। এখন সে একা, সম্পূর্ণ একা। পিছনে ধাওয়া করছে সেই ভয়ংকর পশুগুলো, যাদের হাত থেকে বাঁচার কোনো আশা সে দেখতে পাচ্ছিল না। তার ছোট্ট হৃদয়টা ভয় আর ঘৃণায় পূর্ণ ছিল।
কিন্তু শুভ্র হার মানতে রাজি ছিল না। তার ছোট্ট মনে প্রতিশোধের এক তীব্র আগুন জ্বলছিল। সে বাঁচতে চায়, শুধু নিজের জন্য নয়, তাদের জন্য যারা আর নেই। তাদের আত্মার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য হলেও তাকে বেঁচে থাকতে হবে, শক্তিশালী হতে হবে। একদিন সে নিশ্চয়ই এর বদলা নেবে। তার ছোট্ট মুঠো শক্ত হয়ে উঠল, প্রতিজ্ঞার দৃঢ়তা তার কচি চেহারায় স্পষ্ট হয়ে উঠল।
বনটা ক্রমশ গভীর হচ্ছিল। সূর্যের আলো গাছের ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে সামান্যই প্রবেশ করতে পারছিল, চারপাশ একটা রহস্যময়, ভুতুড়ে অন্ধকারে ঢাকা। শুভ্রর মনে ভয় আরও বাড়ছিল। শুধু নেকড়ে ডেমনগুলোই নয়, এই অন্ধকার জঙ্গলে আরও কত বিপদ লুকিয়ে আছে কে জানে? বিষাক্ত সাপ, হিংস্র শ্বাপদ অথবা আরও ভয়ংকর কোনো অশুভ আত্মা—ভয় তার প্রতিটি স্নায়ুতে শীতল স্রোতের মতো বয়ে যাচ্ছিল। তার প্রতিটি পদক্ষেপে শুকনো পাতার মচমচ শব্দ যেন ডেমনদের কানে তার অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছিল।
হঠাৎ পিছন থেকে একটা তীক্ষ্ণ চিৎকার ভেসে এল। শুভ্র বুঝতে পারল, তারা আরও কাছে চলে এসেছে। তার পায়ের গতি আরও বাড়ল। ছোট ছোট শ্বাসগুলো এখন কান্নার মতো শোনাচ্ছে। তার ফুসফুস যেন ছিঁড়ে যাচ্ছিল, আর তার পা দুটি অবশ হয়ে আসছিল। সে আর কতক্ষণ দৌড়াতে পারবে, জানে না। কিন্তু তার ভেতরের এক অদৃশ্য শক্তি তাকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করছিল।
সামনে একটা ভাঙা গাছের গুঁড়ি পড়ে ছিল। শুভ্র কোনোমতে সেটা টপকানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার দুর্বল শরীরটা আর পারছিল না। হুমড়ি খেয়ে সে মাটিতে পড়ে গেল, হাঁটুতে তীব্র ব্যথা অনুভব করল। তার কপাল থেকে রক্ত ঝরছিল, আর তার চোখে অন্ধকার নেমে আসছিল।
"আর না..."—ছোট্ট শুভ্র হতাশায় ভেঙে পড়ল। তার মনে হল, এটাই বুঝি শেষ। সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু পারল না। তার পা যেন তার কথা শুনছিল না। চোখের জল তার গাল বেয়ে পড়ছিল, আর তার শরীর কাঁপছিল। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিল।
ঠিক তখনই, ঝোপের আড়াল থেকে দুটো জ্বলন্ত লাল চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখল। নেকড়ে ডেমন! তার এত কাছে! ডেমনটার মুখ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস তার মুখে এসে লাগল। তার ধারালো দাঁতগুলো যেন শুভ্রর রক্তপানের জন্য অপেক্ষা করছিল। ভয়ে শুভ্রর শরীর অসাড় হয়ে গেল। পালানোর আর কোনো শক্তি তার অবশিষ্ট ছিল না।
ডেমনটা ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে আসছিল, তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেন শুভ্রর অন্তিম মুহূর্তের বার্তা বহন করছিল। তার হিংস্র দৃষ্টি শুভ্রর দুর্বল শরীরটাকে যেন গিলে খাচ্ছিল। শুভ্র চোখ বন্ধ করে ফেলল, শেষ মুহূর্তের জন্য তার বাবা-মায়ের মুখটা মনে করার চেষ্টা করল।
কিন্তু তার চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই ভয়াবহ রাতের দৃশ্য—তার গ্রাম আগুনে জ্বলছে, ডেমনরা মানুষ মারছে, আর আকাশ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তার মনে প্রতিশোধের আগুন আবার জ্বলে উঠল। সে মরতে চায় না। সে বাঁচতে চায়, তাদের জন্য যারা আর নেই।
ঠিক সেই মুহূর্তে, আরও কয়েকটি নেকড়ে ডেমন ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। তারা শুভ্রকে ঘিরে ফেলল। তাদের জ্বলন্ত লাল চোখগুলো শুভ্রর উপর স্থির হলো। তারা ধীরে ধীরে শুভ্রর দিকে এগিয়ে আসছিল, যেন একটি ক্ষুধার্ত পশুর দল তাদের শিকারকে ঘিরে ধরেছে। তাদের সম্মিলিত গর্জন বনের নীরবতা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছিল।
শুভ্র তাদের হিংস্র মুখগুলো দেখল। তার চারপাশে ডেমনদের বৃত্ত ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল। সে বুঝতে পারল, তার পালানোর আর কোনো পথ নেই। তার ছোট্ট শরীরটা ভয়ে কাঁপছিল, কিন্তু তার চোখে তখনো এক অদ্ভুত দৃঢ়তা দেখা যাচ্ছিল। সে মরবে, কিন্তু সহজে নয়।
ডেমনগুলো তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য প্রস্তুত হলো। তাদের ধারালো নখর আর দাঁতগুলো শুভ্রর দিকে এগিয়ে আসছিল। শুভ্র চোখ বন্ধ করে ফেলল, তার শেষ মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছিল।
ঠিক তখনই, আকাশ থেকে এক তীব্র বজ্রপাত হলো!
বজ্রপাতের শব্দে পুরো বন কেঁপে উঠল। এক তীব্র নীল আলো চারদিক আলোকিত করে তুলল, যা এতটাই উজ্জ্বল ছিল যে শুভ্রর বন্ধ চোখ ভেদ করেও তার চোখে সাদা আলো প্রবেশ করল। ডেমনগুলো বজ্রপাতের শব্দে থমকে গেল, তাদের চোখগুলো ভয়ে বিস্ফারিত হলো।
বজ্রপাতের আলো এতটাই তীব্র ছিল যে চারপাশের সবকিছু মুহূর্তের জন্য সাদা হয়ে গেল। শুভ্র অনুভব করল তার শরীরে এক অদ্ভুত শক্তি প্রবেশ করছে। তার শিরা-উপশিরায় যেন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে, তার প্রতিটি লোমকূপ জেগে উঠেছে। তার শরীরের প্রতিটি কোষ যেন নতুন জীবন লাভ করছে। তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হলো, কিন্তু এবার ভয়ে নয়, এক নতুন শক্তির উন্মাদনায়।
আলো যখন কিছুটা ম্লান হলো, শুভ্র ধীরে ধীরে চোখ খুলল। তার চারপাশে ডেমনগুলো তখনও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, তাদের চোখগুলো ভয়ে বড় বড় হয়ে গেছে। কিন্তু শুভ্রর চোখ এখন আর ভীত নয়। তার চোখ থেকে এক উজ্জ্বল নীল বিদ্যুৎ রেখা বিচ্ছুরিত হচ্ছিল, যা রাতের অন্ধকারেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। তার ধূসর বাদামী চুলগুলো যেন বিদ্যুতের প্রভাবে সামান্য উপরে উঠে গেছে, আর তার শরীর থেকে এক প্রকার শক্তি বিচ্ছুরিত হচ্ছিল।
শুভ্র উঠে দাঁড়াল। তার শরীরে আর কোনো ব্যথা নেই, কোনো ক্লান্তি নেই। তার ছোট্ট শরীরটা এখন যেন বিদ্যুতের শক্তিতে পূর্ণ। সে অনুভব করল, তার প্রতিটি পেশী, প্রতিটি স্নায়ু যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। তার হাতে কোনো তলোয়ার ছিল না, কিন্তু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত থেকে নীল বিদ্যুৎ ঝলকাচ্ছিল।
নেকড়ে ডেমনগুলো শুভ্রর এই নতুন রূপ দেখে ভয়ে পিছিয়ে গেল। তারা বুঝতে পারছিল না কী হচ্ছে। এই সামান্য মানব শিশুটি কিভাবে এমন শক্তি লাভ করল? তাদের লর্ড, যে এতক্ষণ তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সেও শুভ্রর এই নতুন রূপে হতভম্ব হয়ে গেছে। তার চোখগুলো ভয়ে ছোট হয়ে গেছে, আর তার গায়ের লোমগুলো ভয়ে খাড়া হয়ে গেছে।
শুভ্রর মনে তখন কোনো ভয় ছিল না। তার চোখে শুধু প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল। সে তাদের দিকে তাকাল, তার চোখ থেকে নির্গত বিদ্যুৎ রেখা ডেমনদের চোখে আঘাত হানল। ডেমনগুলো যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল।
শুভ্র অনুভব করল, সে যেন বিদ্যুতের সাথে মিশে গেছে। তার চারপাশে বাতাস যেন বিদ্যুতের শক্তিতে পূর্ণ। সে তার হাত উঁচু করল, আর তার হাত থেকে এক তীব্র নীল বিদ্যুৎ ডেমনদের দিকে ধাবিত হলো। বিদ্যুৎ রেখা ডেমনদের শরীরে আঘাত হানতেই তারা যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, তাদের শরীর থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে লাগল।
নেকড়ে ডেমন লর্ড এই দৃশ্য দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগল। সে বুঝতে পারল, এই ছেলেটি এখন আর সাধারণ মানব নয়। সে এক নতুন শক্তির অধিকারী। তার চোখগুলো ভয়ে বিস্ফারিত হলো, আর সে পিছিয়ে যেতে শুরু করল। তার অহংকার, তার শক্তি—সবকিছু যেন এই মুহূর্তে ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
"কে তুই?" ডেমন লর্ড কর্কশ স্বরে বলল, তার কন্ঠে ভয় স্পষ্ট। "তুই কি... বিদ্যুৎ দেবতার অবতার?"
শুভ্র কোনো উত্তর দিল না। সে কেবল ডেমন লর্ডের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাল। তার চোখ থেকে নির্গত বিদ্যুৎ রেখা আরও তীব্র হলো। সে জানত না সে কে, বা এই শক্তি কোথা থেকে এসেছে। কিন্তু সে জানে, এই শক্তি দিয়ে সে তার গ্রামের প্রতিশোধ নিতে পারবে।
ডেমন লর্ড শুভ্রর চোখে সেই প্রতিশোধের আগুন দেখল। সে বুঝতে পারল, এই ছেলেটি তাকে ছাড়বে না। সে তার বাকি ডেমনদের দিকে তাকাল, যারা ভয়ে কাঁপছিল। লর্ড এক তীব্র গর্জন করে বনের গভীরে পালিয়ে যেতে শুরু করল। তার অন্যান্য ডেমনগুলোও তাদের লর্ডের পিছু পিছু পালিয়ে গেল, তাদের ভয়েস বনের নীরবতাকে আরও ভারী করে তুলল।
শুভ্র তাদের পালিয়ে যেতে দেখল। তার শরীর থেকে নির্গত বিদ্যুৎ তখনও ঝলকাচ্ছিল। সে অনুভব করল, তার শরীরের প্রতিটি কণা যেন বিদ্যুতের শক্তিতে পূর্ণ। সে আর সেই আগের দুর্বল শুভ্র নেই। সে এখন বিদ্যুৎ দেবতার অবতার।
বনের বাতাস যেন শান্ত হয়ে এল। শুভ্র একা দাঁড়িয়ে রইল, তার চারপাশে বিদ্যুতের হালকা আভা। সে তার গ্রামের কথা ভাবল, তার বাবা-মায়ের কথা ভাবল। তার চোখে জল এসে গেল, কিন্তু এবার কষ্টের নয়, দৃঢ়তার। সে জানে, তার পথ সহজ হবে না। কিন্তু সে প্রস্তুত। তার হাতে কোনো তলোয়ার নেই, কিন্তু তার শরীর নিজেই এখন এক জীবন্ত অস্ত্র।
প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি, যেখানে শুভ্রর নতুন পরিচয় এবং তার প্রতিশোধের যাত্রা শুরু হয়। সে এখন আর শুধু একজন শিকার নয়, সে একজন শিকারী। তার সামনে এক নতুন পৃথিবী, যেখানে তাকে তার শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে এবং তার গ্রামের প্রতিশোধ নিতে হবে।

শুভ্র এর ভবিষ্যৎ কি হবে যদি জানতে চাও আমার সাথে জুরে থাকো।।।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Shipu tanchangya 5 months ago

    পড়ার পর কমেন্ট করে জানাইও কেমন লেগেছে আর পরবর্তী অধ্যায় অপেক্ষা করো