Posts

উপন্যাস

তৃষ্ণার্ত_চোখ

July 5, 2025

আয়শা রায়হান

Original Author আয়শা_রায়হান

70
View

বিয়ে বাড়িতে সোরগোল হচ্ছে জায়গায় জায়গায় মানুষ জমাট বেঁধে কানাঘুষা করছে। পরিবারের মহিলারা ঘরে বসে আছে আর পুরুষরাবএকসাথে দাড়িয়ে আছে উঠানে সাবার মুখে থমথমে অবস্থা বিরাজমান। পাশে বসা বর পক্ষ বসে আছে তাদের মধ্যে একজন লোক বলে উঠলো-
—আপনারা কি চিন্তা ভাবনা করলেন, কনতো দেহি?
মেয়ের বাবা মুখ তুলে তাকালেন -
—কি চিন্তা করুম বলেন আপনেরা যদি আগে জানাইতেন আপনেগো চাওয়া পাওয়া আছে তাইলে আমি জোগাড় করতে পারতা।
—এত কথা দরকার কি বলেনতো মিয়া, একেইতো মাইয়া কালা আবার খাটো বিয়া ভাঙলে আর কেমনে দিবেন তখন আরো বেশি কইরা যৌতুক দেওন লাগবো।
— এইয়া কি কইতাছেন ভাই বিয়া কেন ভাঙবো আমি সব দিমু, কিন্তু কিছু সময় দেয়োন লাগবো আমারে।
— বিয়ার পরে দেওনের মতলব আটছোনি।
—না না বিয়ার আগেই দিমু, টাকাতো নাই এহন তয় জোগাড় করতে যা সময় লাগে, তারপরে নয় বিয়া পরানো হইবো। তয় আপনেরা খাওয়ন খাইয়ালোন ভাই।
—হয়, তবে তাড়াতাড়ি কইরেন আমাগো তো আবার যাইতে হইবো,দূরের রাস্তা।
—আইচ্ছা, তাই করতাছি আপনেরা বসেন।
বাহিরের সব কথা বসে বসে শুনলো হোমায়রা।
🥀🥀
আজ ফাইরুজ হোমায়রার বিয়ে। গ্রামের মেয়ে হোমায়রা মুন্সিগঞ্জের একটি ছোটো গ্রামের তার বেড়ে ওঠা বাব, রায়হান শেখ ছোট একটি মুদির দোকান তার। মায়ের নাম কেয়া বেগম সে গৃহিণী সংসারেই তার সব কিছু। হোমায়রার একটি ছোট ভাই আছে মেহমেদ শেখ বয়স ৯ বছর এবার ৩য় শ্রেণির ছাত্র। হোমায়রা এইচএসসি দিয়েছে কিছু দিন হলো। গ্রাম অনুযায়ী বয়স হয়েছে অনেক এখনো বিয়ে হয়নি, কতো কথা শুনে মহিলাদের কাছে। তাইতো রায়হান শেখ তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাইছে এতে যেন ওনার মাথার বোঝা কিছুটা কমবে।

আচ্ছা মেয়েরা কি বাবার কোনো কাজে আসেনা হয়তো আসেনা তাই আমাকে বাবা এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে। তারা তো যৌতুক দাবি করছে তাহলে বাবা কেন রাজি হলো বাবাতো এমন না তাহলে আমি কি সত্যি বাবার বোঝা হয়ে গেলাম,যে যৌতুক দিয়েও হলেও বোঝা মুক্ত হতে চাইছেন বাবা।
এমন হাজার চিন্তা মাথায় ঘুরছে হোমায়রার চিন্তা এতো মগ্ন ছিলো ওর মা ডাকছে তা শুনছে না। মেয়েকে এমন চুপ করে বশে থাকতে দেখে বেশ বিরক্ত হলেন কেয়া গলার স্বরে একটু উঁচু করে ডাকতে লাগলেন,
—হোমায়রা এই হোমায়রা।
মায়ে উচু স্বরে চিন্তা থেকে বেড়িয়ে আসে হোমায়রা
—হু,হু,মা বলো কি?
—কি চিন্তা করতাছোছ, নে এই শাড়িঠা পইরাল তো তারাতাড়ি করিছ বুজলি। কহন জানি আবার কাজি আইয়া  পরে।
বলেই কেয়া ব্যস্ত পায়ে বেড়িয়ে পরলেন ঘর হতে।
মায়ের এমন তাড়াহুড়ো দেখে একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল হোমায়রা, শাড়ি হাতে নিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো দরজা বন্ধ করার জন্য।
হঠাৎ মনে হলো আচ্ছা ছেলে কি আসেনি তার কোনো কথা শুনতে পারলাম না ছেলে ছাড়া মেয়ে নিতে কে আসে। নিজের এমন অদ্ভুত চিন্তায় নিজে বিরক্ত হোমায়রা। দ্রুত দরজা বন্ধ করে শাড়ি মেলে ধরলো, হাত কাপছে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে মনে হয় পাশে কেউ থাকলে শুনতে পেতো। এর আগে কতো বার শাড়ি পরেছে তখন এমন হয়নি তাহলে আজ কেনো হচ্ছে। বুঝতে পারে না হোমায়রা শরীর যেন অসার হয়ে যাচ্ছে,
পেটিকোট আর ব্লাউজ পরেই দাড়িয়ে থাকে, না নিজে আজ আর শাড়ি পরতে পারবে না ও।
বাহির থেকে কারো ডাক শুনে মনটা কিছু শান্ত হয়, দরজার আড়াল থেকে খুলে দিলো। কেয়া ঘরে ডুকে হতভম্ব হয়ে গেলেন মেয়েকে কখন শাড়ি পরতে বলে গেলেন তিনি । এই মেয়ে এখনো দাড়িয়ে আছে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন, হোমায়রা হাতের কাঁপন দেখে বুঝলেন মেয়ে আজ আর একা এই শাড়ি পড়তে পারবে না। তাই তিনিই নিজে শাড়ি হাতে নিয়ে যত্ন সহকারে পড়িয়ে দিলেন।
আয়নায় মেয়েকে দেখে কেয়ার চোখ আটকে গেলো যেন তার ছোট মেয়ে আজ বেনারসি পরে বউ বেশে বসে, বুকটা ভাড়ি হয়ে আসে। চোখে ভরে আসে কান্না আর আঁটকে রাখতে পারছেন না, তারাহুরো করে বের হয়ে গেলেন তিনি।
হোমায়রা বুঝলো মা তার কান্না দেখাতে চায়নি তাই পালিয়ে চলে গেলো। 
🔥🔥🔥
নিশ্চুপ বিয়ে বাড়িতে বাচ্চাদের চিৎকার শুনা যাচ্ছে বর এসেছে বর এসেছে, রায়হান গেটের কাছ দারিয়ে আছে। তার ভয়ে কোনো বাচ্চা গেট ধরে টাকা নেয়ার সাহস করেনি, তিনি নিজেই মেয়ের জামাইকে নিয়ে স্টেজে বসালেন।
ওয়াদী স্টেজ বশে হটাৎ উচু কন্ঠে ডেকে ওঠলো,
—আব্বা, আমি আমার সামনে আসুন কিছু জরুরি কথা রয়েছে আপনার সাথে।
ছেলের গম্ভীর কন্ঠ শুনে ছুটে আসলেন মিজানুর। ওয়াদী শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো
—শুনলাম আপনি যৌতুক চেয়েছেন।
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, কি করবে এখন ওয়াদী নিশ্চিত সবার সামনে অপমান করবে। ওয়াদীর কন্ঠ আরো গম্ভীর হয়
— বলেন, আমার টাকার কোনো অভাব রয়েছে। তাহলে আপনি কেনো চাইলেন টাকা।
মিজানুর কিছু বলেনা, সে বুঝতে পারছে আর কিছু তার হাতে নেই। তারও রাগ লাগছে রাগী চোখে তাকায় ছোট ছেলের দিকে জায়ান বাবার এমন চাহনি দেখে ফাঁকা ঢোক গিলে কিছু বলার নেই। ভাইকে অনেক চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারেনি কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে চলে আসছে। ওয়াদী বাবার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বলে উঠলো
—বিয়ের ব্যবস্থা করো, আমার হাতে বেশি সময় নেই তাই তাড়াতাড়ি করো।
মিজানুর ঘুরে হাটতে লাগলেন কিছু দূর যেতেই রায়হান শেখের দেখাও পেলেন। এখন আর তার কিছু করার নেই
—ভাই সাহেব বিয়ের ব্যবস্থা করেন। কাজি তো আছে তাহলে দেড়ি করা ঠিক হবেনা।
রায়হান শেখ শুধু বাকা হাসলেন, মুখে বললেন
—জামাই বাবা খাইবোনা, খাওন দাওন শেষে বিয়ে পারাইলে ভালো হইবো না।
—না না ভাই ছেলে খাওয়া দাওয়া করে এসেছে। আপনি শুধু বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
—আচ্ছা আমি তাই করতাছি আপনি বহেন গিয়া জামাইয়ের লগে।
—হু।

কাজি বসে আছে হোমায়রার সামন, অনেক বার বলার পরেও হোমায়রা কবুল বলছেনা। এতেই রেগে গেলেন রায়হান,
—তুমি কি চাইতাছো বিয়া করবা না, মানুষ হাসাইতে চাইতাছো।
বাবার মুখ থেকে এমন কতা শুনে বুকে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। সুন্দর করেতো বলতে পারতো এক বার মা বলেতো বলতে পারতো। বাবাতো এমন ছিলোনা তাহলে আজ কেনো এমন করছে মানুষের কথার ভয়ে বাবা এমন করবে চোখের জল আর ধরে রাখা সম্ভব নয়। গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে, পাশে মা নেই শুধু বাবা আর কাজি চারি পাশে চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে মাকে দেখার আশায়। কিন্তু হায় আজ মাও সাথে নেই নিজের মাঝেই ভাবছে তার মাঝে রায়হানের ধমকে কেপে উঠে হোমায়রা
—কি হইলো কবুল কইবিনা।
কাজি বলছে
—বলো মা আলহামদুলিল্লাহ কবুল।
হোমায়রা আর তাকায়নি বাবার দিকে, একরাশ অভিমান এসে ভর করে মনে আর চুপ করে থাকেনা বলে,
— আলহামদুলিল্লাহ কবুল।

তৃষ্ণার্ত চোখ
—আয়শা রায়হান
 

Comments

    Please login to post comment. Login