বেশ দেরিতে ঘুম থেকে উঠি। বিছানা ছাড়িনি। সাফিনকে ডেকে যাচ্ছে ওর মা। অনলাইনে ক্লাসের সময় চলে যাচ্ছে। বেচারার ঘুম ঠিক ভাবে কাটে নাই। মায়ের গলার আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে, অথচ ও ঝিম মেরে বসে আছে।
ছুটির দিনে সকালে বাজার করার চাপ থাকে। পেটে তিন বেলা কিছু না কিছু ঢালতে হয়। বাজারও করা লাগে। মুশকিল হয়, গিন্নি যখন বলে বেগুনের পোকা চোখে পড়েনি? মাছ পূরা পচা। তোমারেই পাইছে, মাশাআল্লাহ।
কিন্তু না, আজ বাজারের কোন হ্যাপা নেই। মুখ ঝামটার বিষয় নেই। তাই সুন্দর মত মুখ ধুয়ে ছেলের পাশে বসলাম। ক্লাসের সময় আশেপাশে না থাকলেই গাইগুই করে। দুইটা আম ধুয়ে চুষে খাওয়া শুরু করলাম। ছোট বেলার এই মজা সুযোগ পেলেই নিতে ভুলি না। চুষে আম খাওয়ার বিকল্প নাই। এখনও আগের মতই মজা পাই। সুমিষ্ট আম, আরও একটা নিলাম। ছেলে ক্লাসের ফাকে দেখে, হালকা করে হাসে। ক্লাসের জন্য উচ্চ হাসি দিতে পারছে না। এমনিতেও অত জোরে হাসবে না, বাপেরও অপমান হবে, সেটাও মাথায় আছে।
ক'দিন হয়েছে, একটা মেয়ে কাজ করছে। আজকে বেশ চটপটে কাজ করছে, খেয়াল করলাম। চলে যাওয়ার পর ছেলের মা এসে বলে, দেখছ? মেয়েটা ঝড়ের গতিতে কাজ করে চলে গেলো। জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কি?
সাফিয়া ঘুম থেকে উঠেনি। ক্লাস মিস করেছে। সাফিনেরও ক্লাসের টাইম চলে যাচ্ছে। অথচ ওর হ্যাতক্যাত নাই। দিলাম একটা চড়। সাফিনকে চড় দেওয়াতে কাজের মেয়েও কোন ঝামেলা ছাড়া কাজ শেষ করল। আগে মানুষ ঝিকে মেরে বউকে শেখাতো। এখন, ছেলেকে মেরে ঝিকে শেখাচ্ছে। জমানা খুব করে ডিগবাজি দিচ্ছে।
ছেলে সহ জুম্মার নামাজ পড়তে গেলাম। রংপুরে থাকতে সারা সপ্তাহে জমা খুচরা পয়সা ওর হাত দিয়ে অসহায়দের দেয়াতাম। আজকে নিজে মনে করে কিছু কয়েন নিয়ে এসেছে। নিজে নিজে দিতে লাগলো।
কে বা কারা মসজিদের জায়গা দখল নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। হুজুর জানিয়ে দিলেন সকলকে। সেই আলাপে জানলাম, একজন মাননীয় উপদেষ্টা মসজিদে আছে। জুম্মার নামাজ পড়তে এসেছেন।
সাফিন নামাজ শেষে উপদেষ্টাকে দেখতে চাইলো। আমিও উঁকিঝুঁকি দিলাম। কিছুই বুঝতে পারলাম না। বাইরে পুলিশ প্রোটকল দেখে বুঝলাম, উপদেষ্টা এখনও মসজিদ ত্যাগ করেন নি। পুলিশের গাড়ি দেখে সাফিন জানতে চাইলো, ওদের চলতে পুলিশের গাড়ি লাগে কেন?
উনারা অনেক সিদ্ধান্ত নেন, যা দুষ্ট লোকের বিরুদ্ধে যায়। এজন্য দুষ্ট লোকেরা সুযোগ পেলে উপদেষ্টাকে মারতে পারে। এই যুক্তি দাড় করালাম। এরপর হঠাৎ জানতে চাইলো, দেশের প্রেসিডেন্ট কে? চুপ করে নাম বললাম।
আজকে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, নুরজাহানে যাওয়ার প্লান ছিল। সবাই মিলে গেলাম। কিছু দরকারী কাজ ছিল। সাফিনকে নিয়ে নীলক্ষেত পুরাণ বইয়ের মার্কেটে ঢুকলাম। আমি দুই যুগের বেশি হয় এই পুরাণ বইয়ের দোকানে আমার যাতায়াত। আজ আরেকজন নতুন কাস্টমার ধরে আনলাম। ছেলে ২ টা বই পছন্দ করলো। মেয়ের জন্য কিনলাম The Alchemist ও The Kite Runner, খুব অল্প দামে।
ফেরার সময় আম্মা (শাশুড়ি)কে বললাম, চলেন সংসদ ভবন দেখবেন। উনার পা ব্যথা, তবু রাজি হলেন। সংসদে ঢোকার একটা অস্থায়ী পাশ আছে, সেটার উছিলায় ভিতরে গেলাম। আমাদের সংসদ ভবন খুবই সুন্দর। আজকে আবার অনুভব করলাম।
ওদের কাউকেই মেট্রোতে চড়াই নি। বললাম, চল চড়ে উদ্বোধন করি। রাজি হয়ে গেলো। বিজয় সরণি স্টেশনে উঠে দেখি, অবস্থা বেগতিক। গাজার মত মানুষের লম্বা সারি। টিকেটের জন্য। শুক্রবারে প্রচুর মানুষ বের হয়। মেট্রো কানেক্টেড প্লেস খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের শখ শিকেয় তুলে রাখতে হল। শখ আরেক দিন পূরণ হবে। সবাই নিচে নেমে এলাম। বাসায় চলে আসি। মেয়ের একটা বই বদলিয়ে আনতে হবে, পেজ মিসিং ছিল।
মেয়ের মা বলল, চেয়ারের কাভারগুলো সাইজ করে আনো। কি আর করা। খলিফাকে (টেইলার মাষ্টার) বুঝিয়ে দিয়ে আরও অন্য এক কাজে গেলাম। সব মিলিয়ে দিন বেশ কাটছে। আম আদমির জীবনে এইই কম কি!!
66
View