আকাশে লিখতো যারা
(ব্যাবিলন ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতার গল্প)
অনেক, অনেক আগে...
যখন ঘড়ি ছিল না, ক্যালেন্ডার ছিল না, আকাশের তারা দেখে মানুষ সময় বুঝতো। দিন গোনার জন্য তারা আকাশে চোখ রাখতো, আর রাত হলে তারা উপরে তাকিয়ে বলতো
“ওই আকাশের দেবতারা আজ রেগে আছেন...!”
এই ছিল এক সময়ের মানুষ। তারা বাস করতো পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো সভ্যতায় — মেসোপটেমিয়া, অর্থাৎ “দুই নদীর মাঝের দেশ”। এক পাশে টাইগ্রিস, আর এক পাশে ইউফ্রেটিস নদী। (আজকের ইরাক অঞ্চল)
তারা কেমন ছিল?
তারা ছিল কল্পনায় ভরা, আকাশে তারা, সূর্য, চাঁদ — সবকিছুর মধ্যে তারা ঈশ্বর দেখতো। তারা বিশ্বাস করতো —“তারা, সূর্য, বজ্র – সব কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে।” তাই তারা মাটির উপর উঠিয়ে তুলেছিল
বিশাল এক ভবন — যার নাম ছিল Ziggurat(জিগগুরাট) — যেন আকাশের দেবতার কাছে পৌঁছাতে পারে।
এই ভবনগুলো ছিল বিশাল — ধাপে ধাপে ওপরে উঠতো, প্রতিটি ধাপে প্রার্থনা, ধূপ, আর দেবতার প্রতীক থাকত।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়...
তারা পৃথিবীর প্রথম আইন তৈরি করেছিল।
একজন রাজা ছিলেন — নাম হাম্মুরাবি (Hammurabi) তিনি বানালেন এক প্রস্তর ফলকে খোদাই করা আইনের তালিকা — যেখানে লেখা ছিল:
“যদি কেউ কারো চোখ নষ্ট করে, তবে তারও চোখ নষ্ট করতে হবে।”
এই আইনের নাম — "Eye for an Eye" (চোখের বদলে চোখ)
মানুষ তখন বুঝলো, শুধু ধর্ম নয়, আইনেও শৃঙ্খলা লাগে।
এরা লিখতো কী দিয়ে?
তারা লিখত মাটির ফলকে কাটা চিহ্ন দিয়ে — যার নাম Cuneiform Script। পৃথিবীর প্রথম লেখা — না ছিল কাগজ, না কালি → ছিল মাটি আর খোদাই।
তারা লিখে রেখেছিল ব্যবসা, গল্প, প্রার্থনা — হাজার বছর পর সেই মাটির ফলক এখনো পাওয়া যায়!
তারা কীভাবে সময় গুনত?
তারা প্রথম ৭ দিনের সপ্তাহ বানিয়েছে। তারা ঘণ্টা এবং মিনিট ভাগ করেছে — তারা আকাশ দেখে তারা, গ্রহ, চন্দ্রগতি বুঝে সময় ভাগ করত।
আকাশ ছিল তাদের ক্যালেন্ডার।
তারা কোথায় গেল?
ধীরে ধীরে মেসোপটেমিয়ার এসব শহর — যেমন: উর, নিনেভা, ব্যাবিলন — সব হারিয়ে গেলো যুদ্ধ আর দুর্ভিক্ষে।
তারা যে শহর বানিয়েছিল, আজ সেসব মাটির নিচে। কিন্তু সেই মাটির নিচ থেকে আজও উঠে আসে তাদের লেখা, পাথর আর গল্প।
আমরা কী শিখলাম?
মানুষ যখন কিছুতেই পৌঁছাতে পারত না, তখন তারা আকাশে ভরসা রাখতো তারা আইন শেখালো, তারা সময় গুনলো, তারা লিখলো — আমরা এখনো সেই পথেই চলছি মাটি দিয়ে গড়া জাতিও ঐতিহ্যের মিনার বানাতে পারে — যদি তারা চিন্তা করে, লিখে রাখে, এবং বাঁচিয়ে রাখে