পোস্টস

গল্প

নদের চাঁদ

২৬ মে ২০২৪

জিসান আকরাম

মূল লেখক জিসান আকরাম

মাগুরায় মধুমতী নদীর তীরে ‘নদের চাঁদ ঘাট' নামে একটি ঘাট আছে। সেটির নাম পরিচয় নিয়ে এক করুণ অলৌকিক কাহিনী প্রচলিত আছে। কাহিনীটি হলো, ‘নদের চাঁদ' বলে একটি লোক ছিল। সে কামরূপ গিয়ে কীসব মন্ত্রতন্ত্র শিখে আসে। এমন মন্ত্র সে শিখেছে, যে মন্ত্রবলে যেকোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করা যায়। 

এদিকে তার বউ একদিন আবদার করলো, তাকে কুমির দেখাতে হবে। নদের চাঁদ এক ঘটি মন্ত্রপড়া জল বউয়ের হাতে দিয়ে বললো, "আমি কুমির হওয়ার পর এই ঘটির জল আমার মাথায় ঢেলে দিও। তাহলে আমি আবার মানুষ হয়ে যাবো।"

বউকে দেখাবার জন্য ঘরের মধ্যে নদের চাঁদ কুমির হল। কিন্তু কুমিরের সেই ভয়ংকর মূর্তি দেখে বউ ভয় পেয়ে গেল খুব। তার হাত থেকে জলের ঘটি মেঝেতে পড়ে গেল, সে বাইরে দিল ছুট। তিনদিন তিনরাত নদের চাঁদ কুমির হয়ে ঘরের মধ্যে ছটফট করেছে। তারপর সকলের অলক্ষ্যে রাত্রিবেলায় নামলো গিয়ে নদীতে। খিদের জ্বালায়। মাছ ধরে খেলো। আর তার মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলো না। 

এসব ঘটনার সময় নদের চাঁদের মা বাড়িতে ছিল না। খবর পেয়ে বাড়ি এসে বউয়ের কাছে সব শুনলো। কাঁদতে কাঁদতে ঘটির তলায় যেটুকু জল ছিল তাই নিয়ে ছুটলো। কিন্তু তাকে আর মানুষ করতে পারলো না।

এই ঘাটে নদের চাঁদ অনেকদিন ছিল। তার মা এখানে এসে তাকে ডাকতো। আর নদের চাঁদ এসে দেখা দিত। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তো। সেই থেকে মধুমতী নদীর এই ঘাটের নাম নদের চাঁদ।


ননীগোপাল চক্রবর্তী, "পির ফকিরের আস্তানায়", কলকাতা (১৯৮৩)