Posts

গল্প

দ্যা হার্ট শেপ

July 20, 2025

Happy Happy

74
View

কোনো মেয়ে কি চাইবে নিজের স্বামীকে  অন্য কারো সাথে শেয়ার করতে???। কিন্তু আজ এমন একটি বলবো যেখানে,  মেয়েটি তারই স্বামী কে তার নিজের বোনের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য যত রকমের প্ল্যান আছে সবকিছু করে।  কিন্তু কেন?, সে এমন করছে এর পেছনের কারণ কি শুনবো আজকের গল্পে। গল্পটির নাম দ্যা হার্ট শেপ।।।।।।।।।
 

হাসপাতালের সেই ঘরটা যেন এক শীতল কারাগার।
সাদা দেয়ালের চারপাশে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে মৃত্যুর ছায়া।
ডাক্তারের গলা যেন কাঁপছিল—
“মিস ইনায়া, আমি দুঃখিত। আপনার ব্রেইন ক্যান্সার এখন শেষ স্টেজে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। হয়তো আর মাত্র কয়েকটা দিন সময় আছে আপনার হাতে।

ইনায়া নিরব হয়ে বসে রইলো।
চোখের কোনে জল জমে উঠলেও সে কাঁদলো না।
একসময় কষ্টগুলো এতটাই গভীর হয়ে যায়, যে কান্নাও হারিয়ে যায়।

সে জানালার দিকে তাকিয়ে রইল।
রোদের আলো নেই, পাখির ডাক নেই—
শুধু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস।আর ভাবতে শুরু করে। তার বিয়ে হয়েছে আরিশ নামের একটি ছেলের সাথে আরিশ আর-তার মা তাকে অনেক ভালোবাসতো কিন্তু তা বিয়ের আগে পর্যন্ত। কিন্তু বিয়ের পর থেকে  তাকে শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করতে শুরু করে।  আরিশ তাকে বিয়ে করেছে তার টাকার জন্য।  আরিশ যখন দেখেছিল সে ভালো কোম্পানিতে জব করে।  কারণ  আরিশ ছিল সম্পূর্ণ ঋণে ডুবে। তা থেকে  একমাত্র ইনায়াই তাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে পারত।   সে ভেবে আরিশ তাকে বিয়ে করে। কিন্তু বিয়ের পরে তার আসল রূপ বের হয়ে আসে। আর বিয়ের কিছুদিন পরে  আরিশ চাকরি ছেড়ে দেয়। ইনায়া তাকে বলেছিল তুমি চাকরি ছেড়ো না। তুমি চাকরি চাড়লে আমি কিভাবে সংসারের সামলাই। আমি সারাদিন বাইরে কাজ করি আর রাতে এসে সংসার সামলাই। আমি একা এসব কিছু পারবো না   তুমি চাকরি ছেরো না। কিন্তু আরিশ ইনায়ার কথা শুনে না। আর সে সারাদিন ঘরে বসে ফোনে গেমস খেলতো।  একদিন ইনায়া জানতে পারে তার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে। এই কথা যখন সে এসে বাসায় বলে। তখন তার শাশুড়ি কান্না শুরু করে.।  তার জন্য না, তার ছেলের জন্য সে এ কোন অলক্ষী মেয়েকে বিয়ে করেছে, এখন তার ছেলের জীবন নষ্ট করে দিল।তাদের শুধু একটাই চিন্তা ছিল ইনায়া  মারা গেলে আমাদের সংসার কে সামলাবে? এসব দেখে ইনায়া তার সমস্ত সেভিংস তাদের হাতে তুলে দিয়ে বলে দয়া করে আমার চিকিৎসা খরচটুকু দিবেন। 





বর্তমানে।।।।।। 

কিছুক্ষণ পরে তার বোন রুহি আসে তার সাথে দেখা করতে। তাদের বাবা-মা কেউই বেঁচে নেই। রুহি আর ইনায়া আসল বোন না এরা দুজন সৎ বোন।  তাদের দেখলে কেউ বলবেই না তারা সৎ বোন । ইনায়া তখন বলে অবশেষে তুমি এলে কাল আসলে কেন জানো ডাক্তার আজকে বলেছে আমার হাতে আর মাত্র কয়েকটা দিনই আছে।  রুহি বলে তুমি চিন্তা করোনা কিছু হবে না।  তখন ইনায়া বলে জানো আরিশ আমার সাথে চিট করতেছে। কাল আমায় আই লাভ ইউ মেসেজ দেয়।কিন্তু  একটু পরে আবার ডিলিট করে দিয়েছে ।  অন্য কাউকে দিতে গিয়ে  ভুলে আমার ফোনে চলে এসেছে।  রুহি বলে তুই চিন্তা করিস না।সব ঠিক হয়ে যাবে  আমি এখন যাই আমার কাজ আছে।  
 

এর পরের দিন একজন ডাক্তার এসে বলে মিস  ইনায়া  আপনার  মেডিকেল বিল এখনো পরিশোধ করা হয়নি। মেডিকেল বিল পরিশোধ না করলে আমাদের পক্ষে  চিকিৎসা কন্টিনিউ করা সম্ভব না। তখন ইনায়া আরিশ কে বারবার ফোন দিতে থাকে কিন্তু আরিশ ফোন ধরে না। তখন সে তাকে মেসেজ দেয়। তুমি আমার মেডিকেল বিল এখনো পরিশোধ করো নি কেন?আমি তোমাদের জন্য সব কিছু করে গেছি।আমার অফিস আর সংসার  দুটোই আমি সামলেছি।আমি আমার সেভিংস সব তোমাদের দিয়ে দিয়েছি। তাহলে আমার মেডিকেল বিল এখনো পরিশোধ কেন করনি?  কিন্তু আরিশ কোন রিপ্লাই দেয় না। সে আর কোন উপায় না পেয়ে তখনই  হসপিটাল থেকে বের হয়ে যায়। 
 

পায়ের নিচে ধুলা জমছে, হৃদয়ে জমছে একরাশ শেষ ইচ্ছার ভার।

রাস্তার এক কোণে হঠাৎ একটা কালো গাড়ি এসে থামে।
গাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ নামেন, চোখে রহস্যময় জ্যোতি।
— “তুমি কোথায় যাবে, মেয়ে?
— ইনায়া বলে,নিজের বাড়িতে যাব জানিনা কেন ইচ্ছে করতেছে শেষ-নিশ্বাস ওখানেই ত্যাগ করতে
— বৃদ্ধ বললেন, “তবে এসো, আমি তোমাকে পৌঁছে দিই।”

গাড়িতে বসেই ইনায়া বারবার জানালার বাইরে তাকিয়েছিল। 
জীবনের সবকিছু যেন পিছন ফিরে যাচ্ছে।

বাড়ির সামনে পৌঁছতেই ইনায়া টাকা বের করলো, এই নিন
কিন্তু বৃদ্ধ হাত বাড়িয়ে শুধু একটা হার্ট শেপের ধাতব পাথর এগিয়ে দিলেন।
— এটা তোমার জন্য। এটা হারিও না। কখন কাজে লাগে কেউ জানে না।
তার চোখের দৃষ্টি তীব্র অথচ শান্ত।
হাতটা বাড়িয়ে ইনায়ার মাথায় আলতো করে ছুঁয়ে দিলেন।


 

ঠিক সেই মুহূর্তে ইনায়ার মনে হলো—এটা যেন তার বাবার স্পর্শ!
সে চমকে উঠলো, মাথা তুলতেই আর কেউ নেই…
গাড়ি, লোক, কিচ্ছু নেই! যেন হাওয়ায় মিশে গেছে।

তারপর সে বাড়ির গেট পেরিয়ে যখন ভেতরে ঢোকে 
তখনই শুরু হয় ভয়াবহ সত্যের মুখোমুখি হওয়া।

ঘরের এক কোণে পড়ে আছে নীল রঙের  জুতো—
রুহির প্রিয় জুতো!
ইনায়া জুতাটা দেখে চিনতে পারলোন।
কারণ সে অনেকবার রুহি কে জুতাটা পড়তে দেখেছে।
রুহি সবসময় বলতো এটা আমার অনেক পছন্দের জুতো।

ইনায়া তখন ভাবে—রুহির জুতো এখানে কি করে?
আর তখনই শুনতে পায় ভেতর থেকে ভেসে আসছে হাসির শব্দ…

ইনায়া দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে—
তার স্বামী আর তার বোন —
তারই ঘাটে একান্ত সময় কাটাচ্ছে, একে অপরকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।

তখন রুহি বলে—ইনায়ার কি হবে?
আরিশ বলে 
— তুমি চিন্তা করো না। ওর সময় ফুরিয়ে এসেছে। ইনস্যুরেন্সের টাকাটা যখন আসবে, তখন আমরা নতুন করে শুরু করবো,আমাদের জন্য একটা বাড়ি নিবো। 
— রুহি হেসে ওঠে, যেমনটা ঠিক করেছিলাম… ঠিক তেমনটাই হলো!

ইনায়া যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছিল না।
সে জানতো সে মরতে যাচ্ছে, কিন্তু এমন মৃত্যু?
বিশ্বাসের, ভালোবাসার, আত্মার মৃত্যু?

সে কাঁপা গলায় বলে—
তোমরা দুজনই আমার সাথে এমনটা কিভাবে করতে পারলে রুহি তুমি তো আমার বোন। বোন হয়ে বোনের জীবন নষ্ট করতে লজ্জা করে না।  

— তোমরা আমার পিছনে এসব করো? আরিশ, আমি তোমার জন্য কি না করেছি, তাও তুমি আমাকে ঠকালে?রুহি তুই আমার বোন হয়ে আমার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা  করলি।  এ বলে ইনায়া রুহিকে ধাক্কা দেয়। আরিশ তখন রেগে যায়। তোমার এত বড় সাহস তুমি রুহিকে ধাক্কা দিলে। তোমাকে আমি কোনদিন ভালোইবাসিনি আমি সবসময় রুহিকপ ভালবেসেছিলাম তোর মত মেয়েকে ভালোবাসা যায়।রুহি বলে তোকে তো আমি কোনদিন আমার বোন মনেই করতাম না।  তুই ছিলি আমার শত্রু। তোর বাবা  সব সময় তোকে বেশি ভালোবাসেছে। আমার ও তোকে বেশি ভালোবাসতো। ছোটবেলা থেকে তুই সবসময় ভালো জিনিস টা পেতি আর আমি খারাপ জিনিস পেতাম।এখন দেখ  তোর হাজবেন্ডকে আমি পেয়েছি। ইনায়া তখন অনেক রেগে যায়।  
 

আলো আর ছায়ার লড়াইয়ে একটা ঠেলা।
ইনায়ার দেহটা ব্যালকনির রেলিং ভেঙে নিচে পড়ে যায়…

ইনায়া পড়ার সময় সব স্মৃতি মনে পড়ে।
কিভাবে সে তার স্বামীকে ভালোবেসেছিল।
তার স্বামীর যত্ন নিয়েছিল।
সেই বোন যাকে ছোটবেলা থেকে নিজের সবকিছু দিয়েছে।

এসব ভাবতে ভাবতে সে উপর থেকে নিচে পড়ে যায়।
চোখ দুটো বন্ধ হয়ে যায়।






 

মৃত্যু কিন্তু শেষ নয়।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হঠাৎ আলো ফোটে।
চোখ মেলে ইনায়া দেখে—সে একটা অফিস ডেস্কে বসে আছে! 
তার সামনে তখন আরিশ।সে আরিশ কে দেখে রেগে তার চুল ধরে টানাটানি  শুরু করে। অফিসের সবাই অবাক হয়ে যায়। সবাই এসে ইনায়াকে থামায়। কি হয়েছে  তোমার, তুমি এমন কেন করতেছ। তখন ওখানে আসে রুহি। আর ওদেরকে দেখে তো ইনায়ার মাথা নষ্ট হতে থাকে। কিছুই বুঝতে পারতেছে না সে। সে তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয়ে যায়। বের হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখে এখন ২০২১ সাল।

সে তো ২০২৫ এ মারা গিয়েছিল! তাহলে এটা কোথায়?
তাহলে কি স্বপ্ন ছিল কিন্তু পুরো চারটা বছর কিভাবে স্বপ্ন হতে পারে। সে পাগলের মত পুরো শহর ঘুরতে থাকে।   পায়ের জুতো খুলে যায় কিছুই বুঝতে পারতেছি না। 
সবকিছু চেনা, আবার অচেনা।
অবশেষে সে বুঝতে পারে,সে  টাইম ট্রাভেল করেছি 
চার বছর পিছনের চলে এসেছে।

তার হাতে ছিল সেই বৃদ্ধ লোকটির দেওয়া সেই হার্টশেপ পাথরটি।

সে বুঝতে পারে—জীবন তাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিয়েছে।
তখন সে মনে করতে পারে—
ওই বৃদ্ধ লোকটি তাকে বলেছিল বলেছিল,
— “জীবনের নিজের জন্য বাঁচতে শিখবে।”তাহলে লোকটি কে ছিল? সে চোখ বন্ধ করে আর ওই লোকটির মুখ বোঝার চেষ্টা করে।
তাহলে কই বৃদ্ধ লোকটি আমার বাবা ছিল। এত কাছ থেকে আমি বাবাকে দেখেও চিনতে পারলাম না

তখন সে কান্না করে তার বাবার জন্য।
আর সিদ্ধান্ত নেয়—
জীবনটা আমার বাবা আমাকে দিয়েছে, আমি এ জীবনে সবকিছু নিজের জন্য করবো।
নিজের জন্য বাঁচবো।

তখন সে মাথায় হাত দেয়, ব্যথা করছে।
মনে পড়ে—এই দিনেই সে মাথা ব্যথা করেছিল,
কিন্তু সেগুলোকে তেমন সিরিয়াস ভাবে নেয়নি।
তাই এ জীবনে সে একই ভুল করবে না।

দ্রুত সে উঠে পড়ে, হাসপাতালে ছোটে।
ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন,
— “ভাগ্যবান আপনি! ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়েছে। এখনই চিকিৎসা শুরু করলে আপনি একদম ঠিক হয়ে যাবেন।”

ইনায়া বাইরে বেরিয়ে এলো…
আকাশে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
তার হাতে তখনও সেই হার্ট শেপের পাথর।।।। 

এরপরে কি হবে ইনাকে পারবে তার জীবনকে বদলাতে? নাকি এবারও সে বিশ্বাসঘাতকতা শিকার হবে.।জানতে হলে পড়তে হবে দ্যা হার্ট শেপ..... 

।.।।।।।
 

Comments

    Please login to post comment. Login