Posts

চিন্তা

হিউমার একটি ডার্ক বিষয়

May 28, 2024

ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

Original Author ওয়াসিম হাসান মাহমুদ

হিউমার প্রায় সবসময় ডার্ক। যত ডার্কনেস তত হিউমার। যাকে নিয়ে হিউমার করে সবাই হাসাহাসি করে সেও সবার সাথে হাসে তবে তার হাসি এবং বাকিদেরটায় মাইলের পর মাইল দূরত্ব থাকে। তার হাসির মধ্যে থাকে বেশিরভাগ সময় অপ্রস্তুত অবস্থা লুকোনোর চেষ্টা। 

এজন্য‌ই কৌতুক বা মস্করা থেকে মারামারি, খুনোখুনি পর্যন্ত গড়ানোর ঘটনা শৈশব থেকে অনেকে সামনাসামনি দেখেছেন, পত্রপত্রিকায় পড়েছেন। সম্প্রতি লাইভ টেলেকাস্ট হ‌ওয়া অস্কার অনুষ্ঠানে ক্রিশ রকের সাথে উইল স্মিথের ঘটনা তো অনেকেই জানেন। 
 
যার সেন্স অফ হিউমার যত বেশি তার সেন্স অফ ডার্কনেস ও তত। একারণে অনেকসময় আপাতদৃষ্টিতে লঘু বা হাল্কা চরিত্র মনে হলেও হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমু বেশ ডার্ক।
উদাহরণ লাগবে? 

গল্পে হিমুর বাবা তাকে মহাপুরুষ বানানোর ট্রেইনিং দিতে গিয়ে ভয়ানক সব অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছেন। হিমুর একটি প্রিয় টিয়া পাখি ছিল। হিমালয়ের বাবার মতে তার সন্তানের মহাপুরুষ হতে হলে জগতসংসারের তূচ্ছ মায়া ত্যাগ করতে হবে।
একারণে হিমুর বাবা তার চোখের সামনেই টিয়া পাখিটিকে খাঁচার বাইরে এনে গলা টিপে মেরে ফেলেন। হিমুর মায়ের মৃত্যুও হয় তার বাবার হাতে, এক‌ই কারণে। যাতে হিমালয়ের মনে কোন অযথা মায়া কাজ না করে। 

এসব বিষয় হিমু জানার পর‌ও তার প্রচন্ড সাইকো বাবার প্রতি সারাজীবন একধরণের কৃতজ্ঞতাবোধ বহন করে বেড়ান। নিজের মায়ের প্রতি প্রচন্ড টান অনুভব করায় যেকোন মাতৃরূপি নারী বা কোন মায়া দেখানো নারীর দেখা পেলে হিমু মহাপুরুষের স্ট্যাটাস থেকে একটু পিছলে পড়েন‌। ময়ুরাক্ষী নামের নিজের এক নদী হিমুর কল্পনায় ঘুড়াফেরা করে।
সে কখনো রূপার সাথে মিলিত হতে পারেনা শুধুমাত্র মাতৃস্নেহের প্রতি তার চরম কাঙালপনা লুকোনোর জন্য। আপাতদৃষ্টিতে হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে খালি পায়ে হেটে বেড়ানো এবং বিভিন্ন পাগলামি করা হিমুকে খুব হাস্যকর চরিত্র মনে হলেও সে আসলে একটি ডার্ক ক্যারেক্টার।
ঠিক একারণেই অন্ধকার জগতের ভয়ানক অপরাধীদের সামনে বা পুলিশ, র‌্যাবের হাতে ভূল বুঝাবুঝির কারণে গ্রেপ্তার হ‌ওয়ার পর‌ও হিমু বেশ শান্ত, স্বাভাবিক থাকে।
কারণ হিমু একজন হাইলি ফাংশনাল সোশিওপ্যাথ।

ডিসি কমিক্সের জোকার সমাজের এবং সিভিল পিপলদের মুখোশের আড়ালের আসল চেহাড়া জানেন বলেই জোকার এবং এক‌ইসাথে অনেক ডার্ক। ব্যাটম্যান যে ব্রুস ওয়েইন সেটা অনেক গল্পে জানার পর‌ও জোকার কখনো কাউকে বিষয়টা বলেনা। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে ঠিক তার মত‌ই আরেকটি ডার্ক চরিত্রের সান্নিধ্য হারাবে জোকার। সেই চরিত্রটি ব্যাটম্যান।  

খেয়াল করলে দেখবেন ব্যাটম্যানের অল্টার ইগো ব্রুস ওয়েইন প্রায় সময় পার্টি এবং বিভিন্ন সামাজিক গেট টুগেদারে খুব হিউমার করার মুডে থাকেন। ব্যাটম্যান থাকা অবস্থায় এসব হিউমার করার সুযোগ তার তেমন একটা থাকেনা।
স্টিফেন কিং এর আইটি নভেলের শিশুদের কিডন্যাপ করা ভয়ানক হরর ভিলেনটি একজন ক্লাউন।
হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কিংবদন্তি রাজকাপুর জোকারের বেশে চরিত্রের অনেক দুর্দশার কথা মন খুলে বলেন। 

চার্লি চ্যাপলিনের জীবনী পড়লে অথবা তার বিভিন্ন বক্তব্য বা মুভিতে এই সবাইকে হাসানো ভাড়ের অভিনয় করা ব্যক্তির লাইফের অনেক চরম দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে জানা যায়। 
এমসিইউতে মা-বাবার হত্যাকান্ডের কষ্ট বয়ে বেড়ানো এবং সকল বন্ধুদের হারানোর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাওয়া টনি স্টার্ক সবসময় বিভিন্ন জোকস করতে থাকেন।
ক্রমাগত ক্যান্সারের যন্ত্রণায় ভুগতে থাকা এবং এক‌ই সাথে অমরত্ব লাভ করা ডেডপুলের ফাইজলামি দেখতে দেখতে দর্শকরা হাসতে হাসতে লুটোপুটি খান।
কার্টুন ছবিতে অনেক উপর থেকে টম পড়ে গেলে ছোট্ট শিশুটি পর্যন্ত আনন্দে হাততালি দেয়। 

ফেসবুকে দেখবেন কাউকে তূচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে তার পোস্টে বা এমনকি তাকে নিয়ে বেশ নিষ্ঠুর মন্তব্য করা হলে সেই মন্তব্যে সম্মতিসূচক "হা-হা" রিয়্যাকশন দিয়ে মজা পান ইউজাররা। অবশ্য এই রিয়্যাকশনের বেলায় বিভ্রান্তিও কাজ করে। ‌অন্ধকার যেখানে সেখানে একটু-আধটু কনফিউশন থাকবেই।
স্কুল / কলেজ জীবনে মোটা, কালো, টাকলা, চিকনা এরকম অনেকের নামের আগে বসিয়ে নিকনেইম দিয়ে মজা পেত সবাই। 

আমি ব্যক্তিগত জীবনে অল্পবয়সে চুল পাতলা হয়ে যাওয়ায় এবং সেই সময় অনেক স্কিনি থাকার কারণে স্কুল / কলেজের শিক্ষার্থী, এমনকি অনেক শিক্ষকের হাসির পাত্র হয়েছি, এমনকি পারিবারিক এবং অফিস জীবনেও। আমার অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট সারাজীবন অত্যন্ত বাজে হ‌ওয়ায় অনেকে সামনাসামনি বা আড়ালে-আবডালে হেসেছেন। আমার মতো এরকম অভিজ্ঞতা অগুনতি মানুষের হয়েছে। বয়সের সাথে অনেকের মতো আমার‌ও চামড়া একটু মোটা হয়েছে। অনেকেই নিজের এক্সপেরিয়েন্স মিলাতে পারবেন আমার সাথে।
হিউমার, কৌতুক বা কমেডি যা-ই বলুন তা সবসময় ডার্ক। যাকে নিয়ে এসব হিউমার করা হয় তারা থাকেন এই ডার্কনেসের নিচে। ডার্কনেসের উপরে যারা আছেন তাদের আলোর তীব্রছটায় চোখে দেখা যায় না। ফলে সেটা একধরণের অন্ধকার‌ই। 

আপনি নিজের সম্পর্কে নির্মম, কঠিন সত্য জানতে চান? ভালো করে খেয়াল করুন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন এবং কলিগরা আপনার কোন বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি হাসাহাসি করে।
তাহলে কি মানুষজন হিউমার করবে না? অবশ্য‌ই করবে। আপনি, আমিও তো করি। হাস্যরসের জন্য অল্প বা বেশি সময়ের জন্য কাউকে না কাউকে তো কোলাট্যারাল ড্যামেজ হতেই হবে। মেনে নিন। এটাই হয়তো মানব প্রকৃতি।  

হাসুন। হাসা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আপনার ভিতরের ডার্কনেসকে রিক্লেইম করুন।
হিউমার প্রায় সবসময় ডার্ক।
আমাদের এই ডার্কনেসকে এমব্রেইস করতে হবে।

Comments

    Please login to post comment. Login