অনেক আগের কথা। কলেজে পড়ি, উত্তরায় থাকি। আজ ক্লাস টেস্ট তো কাল পরীক্ষা। পড়তে পড়তে মাথা ধরে আসে। ভাবলাম,বাসা থেকে বের হই। মিনিট কয়েকের ভিতরে কসাইবাড়ি রেলগেট পেয়ে যাই। রেল লাইন দেখেই পার্বতীপুর তথা বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়। আমরা রেলের কেউ না, কিন্তু রেল আমাদের কাছে অনেক কিছু। স্টেশন ও রেলের কারখানার পাশে বাড়ি হওয়াতে ছোটবেলা থেকে ছিল রেলের মাঠে খেলাধুলা। রেলের মাটিতে বেড়ে ওঠা। বাড়ির কথা মনে আসতেই কসাইবাড়ি থেকে রেল লাইন ধরে হাঁটতে থাকি। মনে হচ্ছিলো রহমত নগর থেকে রেললাইন ধরে বাজার তথা শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছি। এরপর সিনেমা হল রোডের হোটেল থেকে রুটি দিয়ে গরুর পায়া মেরে দিয়ে বাড়িতে ফিরবো। সেটা মাথায় খেলে আর আরেকটু হাঁটি। আর কিছু দূর গিয়ে ফিরি, ভেবে ভেবে টঙ্গীর দিকে হাঁটতেই থাকি।
এরপর হঠাৎ করে ডান দিকে নেমে লোকালয়ের ভিতর চলে আসি। অনেক দিন ধরে উত্তরায় থাকলেও ওদিকে যাওয়া হয়নি। মাথা থেকে পার্বতীপুরের ভূত নেমে গেলেও এলাকা দেখার নেশায় পেয়ে বসে। জানি যত সামনে যাচ্ছি, পিছনে ফেরার রাস্তাটা ততই বেড়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে বেশি করে ভাবাচ্ছিল, ফিরলেই আবার সেই পড়াশোনা। কেমিস্ট্রির বিশাল বিশাল সূত্র, ফিজিক্সের জটিল সব হিসাব, হাইয়ার ম্যাথ, ত্রিকোণমিতির মারপ্যাঁচ। শুধু পড়া আর পড়া। পড়া নামক মহামারি থেকে থেকে রেহাই নেই। এর চেয়ে এগিয়ে যাওয়াই বেশি ভালো। এক সময় মনে হয়, জীবনে যাই থাকুক, যা হবার হবে। পিছনে আর ফিরবোনা। এই ভেবে আরও সামনে যেতে থাকি।
কিন্তু না, এক সময় শরীর ক্লান্ত হয়ে আসে। মন চাইলেও শরীর চলে না। শরীর চলে যে পায়ের উপর ভর করে, সেই পা যুগল কোনভাবেই সায় দেয় না। বাধ্য হয়ে পিছনে ফিরি। আস্তে ধীরে হেটে হেটে বাসায় চলে আসি। মাঝে মাঝেই কি রকম এক ওলাওঠায় পেয়ে বসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরতে হবে জেনে সে পথে আর যাওয়া হয় না। পাখি দিনভর কত দূরে চলে যায়, কিন্তু দিন শেষে ফিরে আসে আপন নীড়ে। আমিও ফিরে আসি। সবার জীবনে একটা সময় আসে। খুব আউলা লাগে তখন। মনে হয়, সেই সময় থেকে পালিয়ে গেলেই মুক্তি মিলবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, ঐ সময়ে ভুল হলে ফিরে আসার সুযোগ থাকে না।
বাউরা সময় কেমন যে হয়, কে জানে? তবু দু একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ধরেন, কোন এক দিনের বিকেল বেলা। দুপুরের খাবার পর বারান্দায় একটা ছোট টেবিলে বসে আছেন আপনি। পাশে একটা সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজছে। বারান্দার পাশে বেশ কিছু গাছ। তাঁর ডালে ডালে কয়েকটা পাখি উড়ছে। কতক্ষণ বসছে, এরপর উড়ে উড়ে আরেক গাছে চলে যাচ্ছে। পাশের হাফ-ওয়ালে একটা বেড়াল ছানা বড় ওয়ালে ওঠার কসরত করে যাচ্ছে। গাছের পাতার ফাঁক গলে আকাশটাও দেখা যাচ্ছে। সেই আকাশে জমে থাকা একরাশ কালো মেঘ এক সময় বৃষ্টির নামে ঝরা শুরু করে।
কী দারুণ একটা পরিবেশ।
পাশের রুমে দারা-পুত্র-পরিবার।
ভাত ঘুমে ব্যস্ত তাঁরা।
গান বাজছে।
পাখি উড়ছে।
বৃষ্টি ঝরছে।
কোন টেনশন নেই।
সময় শুধু উপভোগের।
তবু যে কী হয়! সব কিছু আছে। তারপরেও কী যেন নেই। কে যেন নেই। হঠাৎ মাথায় খেলে, আমি বা আপনি আসলে কে? কেনোই বা এখানে আছেন? আপনাকে কোথায় যেন যেতে হবে! কিন্তু আপনি ঠিক জানেন না, সেটা কোথায়! এতকিছু থেকেও কি যেন নেই। কেমন বাউরা বাউরা লাগে আপনার। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নেমে আসে। পাখিরা ঘরে ফিরে যায়। বৃষ্টির ঝাপটাও কমে আসতে থাকে। যারা ছিল ভাতঘুমে, সেই ঘুমও কেটে যায়। ছেলে এসে হয়ত বলে, বাবা সিসিলি থেকে ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাই আনিও তো। সেই ডাকে যেন আপনিও ফেরেন।
ফিরে আসেন সেখান থেকে, যেখানে কোনদিন যাননি।
২।
তখন স্কুলে পড়ি। চিলাহাটি-খুলনা রেললাইনের পূবে আমাদের খেলার মাঠ। বিকেল হলে পাড়ার ছেলেরা মিলে ফুটবল খেলি। খেলা শেষ হলেও সহজে ঘরে ফেরা হয়না। মাঠের এক পাশে বসে আড্ডা দিই। ফরিদার সাথে হাফিজুলের কি যেন চলে। রেজা জানায়,একদিন না একদিন সে ঢাকায় গিয়ে শাবনুরের সাথে দেখা করবেই, করবে। আঁধার নেমে আসে, আড্ডা শেষ হতে চায় না।
চিলাহাটি-খুলনা রেললাইনের পশ্চিমের একটা অংশজুড়ে গোরস্থান, অন্যপাশে বিশাল এক পুকুর। কতদিন সেই পুকুরে দাপাদাপি করেছি আমরা। তারও পশ্চিমে রানিংশেড থেকে পাওয়ার হাউজ কলোনী যাওয়ার রাস্তা। সেই রাস্তা থেকে একটা বড় আইলের মত রাস্তা ডিজেল শপের দিকে গেছে। হেটে ডিজেল শপে যাওয়ার সেই রাস্তা সবুজ ঘাসে পরিপূর্ণ থাকে।
গোরস্থান ও পুকুর পেরিয়ে ওদিকটা খুব কম যাওয়া হয় আমাদের। কখনও সখনও পাওয়ার হাউজ কলোনীর বন্ধুদের সাথে ঐ দিকে যাওয়া পড়ে। সেদিকে গেলে বেশ কয়েক বার একই রকম একটা দৃশ্য দেখি। বিশেষ করে শীতকাল এলে ঘনঘন সেই দৃশ্য চোখে পড়ে। ডিজেল শপে যাওয়ার সেই সবুজ রাস্তার উপর পাটি বিছিয়ে একটা লোক কখনও শুয়ে আছে। কখনও বা আধশোয়া অবস্থায়। আর সাথে অবশ্যই একটা রেডিও। সেই রেডিওতে বাজতে থাকে বাংলা সিনেমার গান।
"কী দিয়া মন কাড়িলা, ও বন্ধুরে..."
কিংবা "হয় যদি বদনাম হোক না আরও...." ।
আমি যে সময়ের কথা বলছি তখন পাড়ায় মহল্লায় ২/১ জনের বাড়িতে রঙ্গিন টিভি মাত্র এসে পৌছেছে। তখন না ছিলো মোবাইল, না ছিলো ইন্টারনেট। ইউটিউব, আইটিউন্স, স্পটিফাইয়ের আবিষ্কারকরা তখনও আমাদের মত স্কুল কিংবা কলেজে পড়ছিলো। রেডিওতে এমন চমৎকার সব গান, তারচেয়েও চমৎকার ওনার আয়োজন দেখে অনেক অচেনা মানুষ থমকে দাঁড়ায়। দাঁড়াতে বাধ্য হয়। এরপর হয়ত পাগল ভেবে কোনকিছু জিজ্ঞেস না করেই নিজের রাস্তা ধরে চলে যায়।
আমি সেদিন এক বন্ধুকে সেই রেডিও শোনা লোকটার পরিচয় জানতে চাইলাম। সে বলে ওঠলো, লোকটা একটা বাউরা, নিখাদ পাগল। লোকটার নাম আজ আর মনে নেই। উনি করতেন রেলওয়েতে চাকরি। মারাত্বক নেশা ছিলো রেডিওতে বাংলা সিনেমার গান শোনার। বাড়িতে রেডিও শুনলে পরিবারের লোকজন বিরক্ত হয়। অফিসে কাজের সময় রেডিও শোনা সম্ভব হতো না। তাই তিনি সুযোগ পেলেই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসা থেকে মাদুর, বালিশ নিয়ে চলে যেতেন ডিজেল শপে যাওয়ার সবুজ রাস্তায়। মাদুর বিছিয়ে শুয়ে, আধশোয়া হয়ে রেডিওতে গান শুনতেন।
আমরা ওনার কাণ্ডকারখানার বর্ণনা শুনে হাসতে থাকি। আরও শুনি, ছুটির সীমা শেষ হয়ে গেলে প্রায়শই সিক লিভ (অসুস্থতার কথা বলে ছুটি) নিতেন। এরপর সেই ডিজেল শপের রাস্তায় মাদুর বিছিয়ে সিনেমার গান শুনতেন।
"একটাই কথা আছে বাংলাতে, মুখ আর বুক বলে এক সাথে...",
"পাথরের পৃথীবিতে কাচের হ্রদয়, ভেঙ্গে যায় যাক তবু করিনা ভয়..."।
যারা ওনাকে চিনতেন তারা বলতেন, ঐ যে বাউরা, আবার শুরু করেছে। কাজ কামে ফাকি দিয়ে গান শুনতে শুয়ে পড়েছে।
জীবন তাঁর অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসে দাঁড়িয়েছে। সেদিনের এক বাউরার হাস্যকর কান্ডকারখানা বেশ ভাবিয়ে তুলে আমাদেরকে। এখন এই আমরা প্রতিদিন ব্যস্ত থেকে থেকে, কিংবা ব্যস্ততার ভান করে করে, কোন এক শূন্যে মিলিয়ে যাওয়ার রাস্তায় ছুটে চলেছি। কিংবা পিছন থেকে কেউ একজন তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাদেরকে।
আজ ভাবি, সবাই ওরকম 'বাউরা' হতে পারে না। বাউরা হতে হলে বড় আত্মবিশ্বাসী হতে হয়। আরও বেশি থাকতে হয় নিজের গভীরে ঢুকে নিজেকে সঠিকভাবে চেনার। মাঝে মাঝে ভাবি, সেই বাউরা জীবন সবার জন্য নয়। বাউরা হতে হলে আমার মত সাধারণ হলে চলে না। বাউরাকে হতে হয় অসাধারণ।
৩।
শিশুর পিতা লুকিয়ে আছে, সব শিশুরই অন্তরে। ছোটবেলায় এরকম ভাবসম্প্রসারন আসলে ইচ্ছে মত পণ্ডিতি জাহির করার জন্য বেশি বেশি করে লিখতাম। বেশি লিখলে বেশি নম্বর, এই ছিল আমাদের বিশ্বাস। কিন্তু এর সঠিক অর্থ যে কি, সেটা গভীর ভাবে ভেবে দেখার সুযোগ হয় ওঠেনি। অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। এখন দেখছি, আমার জীবন যেন শৈশবের সেই দিনগুলোর প্রদর্শনী চলছে শুধু। মানুষের ছোটবেলায় কত যে গল্প থাকে! ইদানিং একটু আধটু যখন লিখছি, তখন দেখছি গল্পের শেষ নেই। এই প্রজন্মের শিশুদের শৈশব আঁটকে থাকছে গ্যাজেট, কার্টুন আর ভার্চুয়াল গেমস খেলাতে। এই শিশুরা বড় হলে আফসোস করবে কিনা জানিনা,আমার খুব আফসোস হচ্ছে। এ নিয়ে আলাপ করতে গেলে গল্পের গরু ডাঙ্গা ছেড়ে নদীতে নেমে পড়বে। সেদিকে না যাই, মূল আলাপে ফিরি।
আমার মা মারা যাবার পরেই আমরা উপজেলা শহরে চলে আসি। শহরে আসার পর থেকে স্কুলের বার্সিক পরীক্ষা হয়ে গেলে চলে যেতাম নানী বাড়ি। নানী বাড়ি ছিল গ্রামে। আমাদের নিজেদের গ্রামের দিকটা খিয়ার মাটির এলাকা। ধান ছাড়া বলতে গেলে অন্য ফসল আবাদ হয় না। কিন্তু নানী বাড়ির ওইদিকটা ছিল পলিমাটি সমৃদ্ধ। শীতকালে আমরা যখন সেখানে যেতাম তখন ভিটায় ভিটায় আখের ক্ষেত। আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলতাম কুশার। আমরা ক্ষেতে ঢুকে ইচ্ছে মত কুশার খেতাম। ঐ সময়টা ছিল আলু তোলারও সিজন। বড়দের সাথে ক্ষেত থেকে আলু তোলা একটা উৎসবের মত লাগত। এরপর সেখান থেকে বেছে বেছে আলু নিয়ে আগুনে পুড়ে খেতাম। সেই আলুপোড়ার কি যে স্বাদ, যেন এখনও মুখে লেগে আছে।
ঐসব ভিটেমাটিতে আলু ছাড়াও অনেক শাকসবজি চাষ হয়। প্রতিটি ভিটার সাথে একটা কুয়া থাকত। সেই কুয়া থেকে লিভার সিস্টেমে বালতি দিয়ে পানি তুলে ক্ষেতে দেয়া হত। বড়রা আমাদের ফুসলিয়ে সেই পানি সেঁচার কাজে লাগিয়ে দিত। আমরাও মনের আনন্দে পানি তূলে সবজি ক্ষেতে পানির যোগান দিতাম। নানী বাড়ির পাশেই একটা বিশাল বটগাছ ছিল। আর সেই বটগাছ ছিল আমাদের বিনোদনের একটা বড় উপাদান। বটগাছের ডালে উঠে শিকড় বেয়ে নেমে যাওয়া। শিকড় ধরে ঝুল ঝুল খেলা। বালি মাটিতে ইচ্ছে মত ডিগবাজি দেয়া।
বটগাছের পাশে একটা উঁচু ভিটা। একদিন দেখি কয়জন লোক কয়েকটা শিয়ালের পিছনে দৌড়াচ্ছে। সেটা দেখে আমরাও ওদের পিছনে ছুটতে থাকি। ওদের হাতে বল্লম, সাথে বেশ কয়টা শিকারি কুকুর। কুকুর দৌড়ায়ে শিয়ালের খুব কাছে গিয়ে হঠাৎ করে থেমে যায়। শিয়ালরা আরও গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায়। কয়েকটা শিয়াল আবার ভিটার ভিতরে থাকা গর্তে ঢুকে পড়ে। সেই দিন জানতে পারলাম, বল্লম নিয়ে ছোটা সেই মানুষ গুলো সাঁওতাল। ওদের উপজাতি বলে, ছোটজাত। বড়রা আমাদের জানায়। শিয়াল শিকার করা ওদের একটা বড় পেশা। শিয়াল ওদের আমিষের অভাব মেটায়। কুকুর যখন শিয়ালের খুব কাছে চলে যায়। ধরা পড়ে পড়ে অবস্থা, সেই সময় শিয়াল বায়ু ত্যাগ করে। সেই বায়ুতে বা পাদে এত দুর্গন্ধ থাকে, কুকুর সেটা সইতে না পেরে থেমে যায়। এটা জানতে পেরে ও চাক্ষুষ দেখে যারপরনাই অবাক হই। কুকুর এক সের হলে, শিয়াল প্রায় আড়াই সের। ওজনে নয়, বুদ্ধিতে।
নানী বাড়িতে ঢুকতেই আরেকটা বাড়ি। সেই সময় ভালো গৃহস্থদের বাড়ির বাইরে থাকত খানকা ঘর। পুরুষ মেহমানরা আসলে ওখানে বসত, বিশ্রাম নিত। সেবার দেখি সেই খানকায় ঐ বাড়ির সন্তান, গ্রাম সম্পর্কের এক মামাকে এক পায়ে একটা লম্বা শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। এর আগে শুনেছিলাম, সেই বাড়িরই আরও এক ছেলে (কৌশলগত কারনে তাদের কারও নাম লিখছিনা। কারণ তাদের ছোট করা আমার উদ্দেশ্য নয়) একই রকম বাউরা হয়েছিলো। তখন তাঁকেও এভাবে শিকল পরিয়ে রাখা হত। এই প্রথম বড় কোন মানুষকে পায়ে শিকল দিয়ে আঁটকে রাখতে দেখি। আমাদের বলে দেয়া হয়, তাঁর আশেপাশে আমরা যেন না যাই। কাছে গেলে কামড়ে দিতে পারে। আমরা ভয়ে কাছে যাইনা, দূর থেকে দেখি। সেই মামা বাউরা হয়ে গেছে।
বিষয়টা খুব ইন্টারেস্টিং। আরও মজার ব্যাপার হল, পুর্বের জনেরও বাউরামির সমাধান হয়েছিলো একই ওষুধে। তখন যে মামার পায়ে শিকল পরা তাঁর সিম্পটমও বড় ভাইয়ের মতই। বড়রা বলতেছিল, এর বাউরামিও একইভাবে ঠিক হয়ে যাবে। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে তাঁর বাউরামি সেই ওষুধে ঠিক হয়েছিলো।
কি সেটা?
ঐ বাড়ির ছেলেরা একটু জুয়ান হয়ে গেলেই বিয়ের জন্য বাউরা হয়ে যায়। বিশেষ কোন মেয়ের জন্য বাউরা হয়, তা না। যেকোন মেয়ের জন্যই বাউরা হয়ে পড়ে। বিয়ে না দিলে বাড়িতে, গ্রামে এমন অশান্তি সৃষ্টি করে। তাঁর অত্যাচারে কেউ টিকে থাকতে পারে না। দা, বটি নিয়ে মানুষকে খুন করতেও যায়। হুট করে চাইলেই তো বিয়ে করানো যায় না। ভালো মেয়ে, ভালো ঘর দেখতে হয়। সেই সময়টাও দিতে চায় না। তাই ঐ বিয়ে ঠিক হওয়া পর্যন্ত শিকল দিয়ে আঁটকে রাখার আয়োজন। এটা জানতে পেরে আমারও খুব হাসি পেয়েছিলো। শেষ খবর হল, তাঁরা কেউ বিয়ের পর আর কখনও বাউরা হয়নি। বউ বাচ্চা নিয়ে ভালোই আছে।
অনেক বছর পর সেই মামুর সাথে দেখা। মামু তখন আমার দোস্তের মত হয়ে গেছে। মামুকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘মামু সত্যি কও তো, তুই কি বাউরা হছুলু, নাকি বাউরার ভান কচ্ছিস?’
‘ওসব কোথা আর না কন বাহে। লইজ্জা লাগে। বাউরার ভান না করলে কি তোমার নানা বিয়া দিবার চায়’।