Posts

নন ফিকশন

ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎকার, নিয়েছেন টাকার কার্লসন - পর্ব ৬ (বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটছে - ভবিষ্যত নেতৃত্ব কার হাতে? নাকি কাদের?)

July 30, 2025

মো; আহসান-উজ-জামান

Original Author ভ্লাদিমির পুতিন, টাকার কার্লসন

Translated by Ahsan's Archive

74
View

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই প্রথম পশ্চিমা মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন। মার্কিন সাংবাদিক টাকার কার্লসন এর নেয়া সাক্ষাৎকারটি অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ পুরো ঘটনাটি রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও দেখা জরুরী, যা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না পশ্চিমা মিডিয়ার আগ্রাসী এবং একমুখী প্রচারণার জন্য। 

সাক্ষাৎকারটি বেশ দীর্ঘ হওয়ায় ধাপে ধাপে প্রকাশ করছি। কলেবর যাতে বেশি দীর্ঘায়িত না হয় সেজন্য কিছুটা পরিমার্জনাও করা হয়েছে, তবে গুরুত্বপূর্ণ কোন কিছু বাদ দেয়া হয় নি। আশা করি সবাই ধৈর্য সহকারে পড়বেন এবং মতামত জানাবেন।

পঞ্চম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

Putin Spotted Using Hand To Put Leg in Place During Tucker Carlson  Interview - Newsweek
The BRICS Summit 2024: An Expanding Alternative | Council of Councils

টাকার কার্লসন:
আমি মনে করি আপনার মূল্যায়ন যথাযথ । প্রশ্ন হলো—এখন কী হবে? হতে পারে, এক ঔপনিবেশিক শক্তির জায়গায় আরেকটি চলে আসবে—যেটা হয়তো কম সহানুভূতিশীল, কম ক্ষমাশীল। যেমন ধরুন BRICS। এই জোট কি চীনের অর্থনীতির দ্বারা এমনভাবে প্রভাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর? আপনি কি তা নিয়ে উদ্বিগ্ন?

ভ্লাদিমির পুতিন:
এই ধরনের জুজুর ভয় আমাদের আগেও দেখানো হয়েছে। এগুলো ‘আষাঢ়ে গল্প’। প্রথমেই আপনাকে যেটা বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে - আমরা চীনের প্রতিবেশী। আপনি যেমন আপনার আত্মীয়-স্বজন বেছে নিতে পারেন না, তেমনি প্রতিবেশীকেও বেছে নেওয়া যায় না। চীনের সাথে আমাদের হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত আছে।

দ্বিতীয়ত, শত বছর ধরেই আমরা পাশাপাশি অবস্থান করছি, আমরা এই সহাবস্থানে অভ্যস্ত।

12+ Thousand Russia China Map Royalty-Free Images, Stock Photos & Pictures  | Shutterstock

তৃতীয়ত, চীনের পররাষ্ট্রনীতির দর্শন কোনোভাবেই আগ্রাসী নয়। তাদের দর্শন হলো সবসময় আপোস খোঁজা, সেটা সবার কাছেই স্পষ্ট।

আরেকটি বিষয় হলো—বারবার এই আষাঢ়ে গল্প শুনিয়ে ভয় দেখানো। এবারও তাই ঘটছে—যদিও কিছুটা ভদ্রভাবে, কিন্তু গল্প তো একই, তাই না? বাস্তবতা হচ্ছে, চীনের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বাড়ছে। তবে ইউরোপের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির হার চীন-রাশিয়া সম্পর্কের তুলনায় অনেক বেশি। তাহলে ইউরোপিয়ানরা কি ভয় পাচ্ছে না? হতে পারে, আমি জানি না। কিন্তু তারা এখনো চীনের বাজারে প্রবেশ করতে মরিয়া, বিশেষ করে যখন তারা নিজেরাই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে।

চীনা ব্যবসাগুলো ইউরোপীয় বাজারেও প্রবেশ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে কি চীনা ব্যবসার উপস্থিতি কম? না, মোটেও না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে—তারা চীনের সঙ্গে সহযোগিতা সীমিত করতে চায়। কিন্তু এতে করে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, মি. টাকার। এটা একটা সূক্ষ্ম বিষয়। এর কোনো সহজ বা যাদুকরী সমাধান নেই—ডলারের মতোই।

তাই জাতিসংঘ সনদের দৃষ্টিতে অবৈধ যে কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে, খুব ভালোভাবে ভাবা উচিত। সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের জন্য এগুলো মাথাব্যাথার কারণ।

টাকার কার্লসন:
একটু আগে আপনি বললেন যে দুনিয়া আরো অনেক ভালো থাকতো যদি এটি পরষ্পর প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে বিভক্ত না হয়ে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে একত্রে থাকতো। সেরকমটি নেই এর বড় কারণ হচ্ছে বর্তমান আমেরিকান প্রশাসন আপনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আপনি কি মনে করেন, যদি জো বাইডেনের পরে নতুন একটি প্রশাসন আসে, তাহলে কি আপনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে পারবেন? নাকি কে প্রেসিডেন্ট, সেটা তেমন কোনো বিষয় নয়?

ভ্লাদিমির পুতিন:

Chart: The Rise of the BRICS | Statista


এর উত্তর দিচ্ছি, তবে তার আগে আমি পূর্বের আলোচনাটি শেষ করতে চাই। আমি ও আমার সহকর্মী ও বন্ধু, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, এ বছর চীনের সঙ্গে পারস্পরিক বাণিজ্য ২০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য স্থির করেছিলাম। আমরা সেই স্তর অতিক্রম করেছি। আমাদের হিসেব অনুযায়ী, আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ইতিমধ্যে ২৩৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, এবং চীনের পরিসংখ্যান মতে তা ২৪০ বিলিয়ন ডলার।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের এই বাণিজ্য খুবই সুষম এবং পরস্পরের পরিপূরক—প্রযুক্তি, জ্বালানি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে। এটা খুবই ভারসাম্যপূর্ণ।

BRICS-এর ব্যাপারে যদি বলি—এ বছর রাশিয়া এর সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে—BRICS দেশগুলো কিন্তু খুব দ্রুত উন্নয়নশীল। দেখুন, যদি আমি ভুল না করি, ১৯৯২ সালে G7 দেশগুলোর বিশ্ব অর্থনীতিতে অংশীদারিত্ব ছিল ৪৭ শতাংশ। আর ২০২২ সালে সেটা নেমে এসেছে প্রায় ৩০ শতাংশের কিছু বেশি। একই সময়ে, ১৯৯২ সালে BRICS দেশগুলোর অংশ ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ, কিন্তু এখন তাদের অংশ G7-এর চেয়েও বেশি। এর সঙ্গে ইউক্রেনের ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি হলো বৈশ্বিক উন্নয়ন ও বিশ্ব অর্থনীতির ধারার ফলাফল, যেমনটা আমি কিছুক্ষণ আগে বলেছি। এটি অনিবার্য। এটা ঘটতেই থাকবে। অনেকটা সূর্য ওঠার মতোই—আপনি সূর্য ওঠা ঠেকাতে পারবেন না। আপনাকে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে? বলপ্রয়োগ, নিষেধাজ্ঞা, চাপ, বোমাবর্ষণ এবং সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহারের মাধ্যমে। যেগুলো আসলে অহংকারের ফল।

আপনার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এটা বুঝতে পারছে না যে পৃথিবী একটি প্রাকৃতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং সেই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে, এমনকি কেউ যদি আধিপত্য বজায় রাখারও আকাঙ্ক্ষা করে, তাহলে তাকে যথাযথ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই ধরনের নির্মম পদক্ষেপ কিন্তু বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে, সেটা রাশিয়া কিংবা যার প্রতিই নেয়া হোক না কেন। প্রমাণও নিশ্চয়ই পেয়ে গেছেন।

আপনি এখন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, যদি অন্য কোনো নেতা আসে তাতে কি কিছু পরিবর্তন হবে? এটা আসলে কোনো নির্দিষ্ট নেতার ব্যাপার নয়। এটা ব্যক্তির উপর নির্ভর করে না।

বুশের সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি জানি যে যুক্তরাষ্ট্রে তাকে অনেকটা গেঁয়ো হিসেবে উপস্থাপন করা হতো—যে কিছুই বোঝে না। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। আমার মনে হয় তিনিও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেকগুলো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আমি আপনাকে ২০০৮ সালের কথা বলেছিলাম, যখন বুখারেস্টে NATO ইউক্রেনের জন্য দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেটাও তার প্রেসিডেন্সির সময়ই হয়েছিল। তিনি ইউরোপীয়দের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন।

তবুও, ব্যক্তিগত, মানবিক সম্পর্কের দিক থেকে, আমার সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি অন্য কোনো আমেরিকান, রুশ কিংবা ইউরোপীয় রাজনীতিবিদের চেয়ে খারাপ ছিলেন না। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, তিনিও তার কাজ সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন। ট্রাম্পের সাথেও আমার এমন ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল।

তাই এটা কোনো নির্দিষ্ট নেতার ব্যাপার নয়, এটা হলো ‘ক্ষমতাবান অভিজাতদের’ মানসিকতার বিষয়। যদি মার্কিন সমাজে এমন ধারণা প্রাধান্য পায় যে—‘বলপ্রয়োগের মাধ্যমে যেকোনো মূল্যে আধিপত্য ধরে রাখতে হবে’—তাহলে কিছুই বদলাবে না, বরঞ্চ আরও খারাপ হবে।

কিন্তু যদি শেষ পর্যন্ত তারা এই উপলব্ধিতে পৌঁছায় যে বিশ্ব পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই যুক্তরাষ্ট্র এখনো যেসব সুবিধা ভোগ করে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, তাহলে হয়তো কিছু পরিবর্তন ঘটতে পারে।

দেখুন, ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে চীনের অর্থনীতি এখন বিশ্বের প্রথম। মোট পরিমাণের দিক থেকে অনেক আগেই তারা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় স্থানে, এরপর ভারত—যাদের জনসংখ্যা দেড় বিলিয়ন—তারপর জাপান, এরপর রাশিয়া পঞ্চম স্থানে।

গত বছর, সব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়া ইউরোপের প্রথম অর্থনীতি ছিল।

আপনার কী মনে হয়—নিষেধাজ্ঞা দেয়া, সীমাবদ্ধতা আরোপ করে রাখা, ডলারে লেনদেন অসম্ভব করে ফেলা, SWIFT থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, আমাদের তেলবাহী জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, বিমানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা, সব কিছুতেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া - এগুলো কি স্বাভাবিক আচরণ?

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপরই আরোপ করা হয়েছে, এবং এই সময়েই আমরা ইউরোপের প্রথম অর্থনীতি হয়েছি।

যে সব সরঞ্জাম বা কৌশল যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে, সেগুলো আর কাজ করছে না। এখন ভাবার সময়—এখন কী করা উচিত?

যদি এই উপলব্ধি মার্কিন নেতৃত্বে এসে পৌঁছায়, তাহলে রাষ্ট্রপ্রধান নিজেও তেমনই কাজ করবেন—যা জনগণ ও বিভিন্ন পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করে।

তাহলেই হয়তো কিছু পরিবর্তন সম্ভব হবে।

টাকার কার্লসন:
আপনি কিন্তু এখানে দুটি ভিন্ন ব্যবস্থা বর্ণনা দিলেন। আপনি বলছেন, নেতা জনগণের স্বার্থে কাজ করেন, আবার এটাও বলছেন যে সিদ্ধান্তগুলো নেতারা নেন না, বরং ‘অভিজাতরা’ নেয়। আপনি তো বহুদিন ধরে এই দেশ চালাচ্ছেন, সব আমেরিকান প্রেসিডেন্টদের চেনেন, আপনার মতে যুক্তরাষ্ট্রে সেই ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো কোথায়? আসলে সিদ্ধান্ত নেয় কে?

ভ্লাদিমির পুতিন:
আমি জানা নেই। আমেরিকা একটি জটিল দেশ—একদিকে রক্ষণশীল, অন্যদিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল। আমাদের পক্ষে এটিকে পুরোপুরি বোঝা সহজ নয়। কে নির্বাচনে সিদ্ধান্ত নেয়? এটা কি বোঝা সম্ভব, যখন প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব আইন রয়েছে, প্রতিটি রাজ্য নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে? কোনো প্রার্থীকে রাজ্য পর্যায়ে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। এটি একটি দুই ধাপে হওয়া নির্বাচনী ব্যবস্থা। আমাদের পক্ষে এটা বোঝা খুব কঠিন।

নিশ্চয়ই দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল রয়েছে—রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট। এই দলীয় ব্যবস্থার মধ্যেই কিছু কেন্দ্র আছে, যেগুলো সিদ্ধান্ত নেয়, সিদ্ধান্ত তৈরি করে। দেখুন না, কিভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার ওপর এমন ভুল, জঘন্য এবং সম্পূর্ণ অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করা হলো।

Nato: Northern exposure

এগুলো হলো চাপ প্রয়োগের নীতি—NATO সম্প্রসারণ, ককেশাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নির্মাণ। এগুলো সবই চাপ, চাপ, চাপ। তারপর ইউক্রেনকে NATO-তে টেনে আনার চেষ্টা—সবই চাপ দেওয়ার কৌশল। কেন?

আমার মনে হয়, এর অন্যান্য কারণের পাশাপাশি, একটি কারণ হলো অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতার সৃষ্টি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সময় বহু কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল, যারা সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে কাজ করত, এবং তারা অন্য কোন কিছুই করতে পারত না। তারা রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বোঝাতে সক্ষম হলো যে রাশিয়ার ওপর আঘাত চালিয়ে যাওয়া দরকার, একে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতে হবে, এই অঞ্চলে একাধিক ছদ্ম-রাষ্ট্র গঠন করে তাদের একত্রে নিয়ন্ত্রণে এনে চীনের সঙ্গে ভবিষ্যতের সংঘর্ষের জন্য সেই সম্মিলিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

এটি একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এর সাথে জড়িত রয়েছে সেই অতিরিক্ত জনবল ও সক্ষমতা যারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জন্য নিয়োজিত ছিল।

এসব চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। প্রয়োজন নতুন, তরুণ, ভবিষ্যতমুখী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানুষ, যারা বিশ্বে কী ঘটছে তা বুঝতে সক্ষম।

দেখুন ইন্দোনেশিয়া কীভাবে উন্নয়ন করছে। ৬০০ মিলিয়ন মানুষ—আমরা তাদের এড়িয়ে যেতে পারি? পারব না। আমাদের ধরে নিতে হবে, ইন্দোনেশিয়া প্রবেশ করবেই। সে ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির ক্লাবে প্রবেশ করেছে—কে পছন্দ করল বা করল না, সেটা বড় কথা নয়।

হ্যাঁ, আমরা বুঝি এবং সচেতন আছি যে, সব ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে পরিস্থিতি এখনো স্থিতিশীল।  যদি আমি ভুল না করে থাকি অর্থনীতিও ভালোভাবে বাড়ছে, GDP প্রায় ২.৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। কিন্তু যদি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়তে চাই, তাহলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

আমি আগেও বলেছি, ইউক্রেন পরিস্থিতি যেভাবেই শেষ হোক না কেন, পৃথিবী তার নিজের গতিতে পরিবর্তিত হবে। এবং যুক্তরাষ্ট্র নিজের অবস্থানও আস্তে আস্তে পরিবর্তন করছে—এটা কিন্তু আপনাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞরাই লিখছেন। আমি শুধু তাদের লেখা পড়েছি। প্রশ্ন হলো—এই পরিবর্তনটি কেমন হবে? যন্ত্রণাদায়ক ও দ্রুত? নাকি ধীরে ধীরে ও মসৃণভাবে?

এটা লিখেছেন সেইসব মানুষ, যারা আমেরিকার বিরোধী নন—তারা শুধু বৈশ্বিক উন্নয়নের ধারা পর্যবেক্ষণ করেন। ব্যস।

এগুলো মূল্যায়ন করতে ও নীতিতে পরিবর্তন আনতে আমাদের দরকার এমন মানুষ, যারা ভাবতে পারে, ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারে, বিশ্লেষণ করতে পারে এবং রাজনৈতিক নেতাদের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত সুপারিশ করতে পারে।

টাকার কার্লসন:
আমি একটা জিনিস জানতে চাই—আপনি বেশ স্পষ্টভাবে বললেন, পূর্বদিকে NATO সম্প্রসারণ ১৯৯০ সালে আপনাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন। এটি আপনার দেশের জন্য একটি হুমকি। আপনি ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে গিয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে NATO-তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। আপনি কি মনে করেন, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে আপনাকে সামরিক পদক্ষেপে প্ররোচিত করার চেষ্টা ছিল?

চলবে

Comments

    Please login to post comment. Login