"নীল চিঠি"
১: চিঠির শুরু
১৯৭০ সালের শেষ দিক। ঢাকার মধুবাগে এক মেয়ের নাম — সায়েরা। আর চট্টগ্রামে তার প্রেমিক — তাহমিদ। তারা একে অপরকে ভালোবাসত, চিঠিতে কথা বলত — মোবাইল ছিল না, ছিল শুধু হাতে লেখা নীল খাম।
তাহমিদ তার শেষ চিঠিতে লিখেছিল:
“আমি দেশকে ভালোবাসি, আর তোকে। যদি ফিরে আসি, তোর হাতে চুড়ি পরাব। আর যদি না আসি... আমার চিঠিগুলো তুলে রাখিস।”
২: যুদ্ধ
১৯৭১ সাল। যুদ্ধ শুরু। তাহমিদ চলে যায় সীমান্তে — একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে।
সায়েরা প্রতিদিন একটা চিঠি পেত। তাহমিদ লিখত:
“আজ আমি শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়ালাম। কিন্তু মনে শুধু তোর কথা আসে। জানিস, তুইই আমার সাহস।”
একদিন চিঠি আসা বন্ধ হয়ে যায়।
এক সপ্তাহ, এক মাস... সায়েরা বুঝে — তাহমিদ আর ফিরবে না।
৩: অপেক্ষা
১৯ বছর পার হয়ে গেছে। সায়েরা বিয়ে করেনি, সেই নীল চিঠিগুলোকে বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে। সেই ঘরের দেয়ালে এখনো লেখা: “তুই বাঁচিস, তাহলেই আমি অমর।”
৪: ফিরে আসা
এক সন্ধ্যায়, হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ে এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা। চোখে ছানি, হাতে লাঠি, মুখে দাড়ি। সে শুধু বলে — “তুই কি এখনো নীল চিঠিগুলো রেখেছিস?”
সায়েরা বিস্ময়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে — “তুই… তাহমিদ?”
তাহমিদ যুদ্ধের পর পাকিস্তানে বন্দি ছিল ১৮ বছর। সেই প্রেম, সেই চিঠিগুলোই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।
৫: শেষ চিঠি
তারা আর বিয়ে করেনি। তবে শেষ জীবনে একসাথে থাকত, প্রতিদিন একটা চিঠি লিখত একে অপরকে — তাদের ভালোবাসা হয়ে উঠেছিল একটি নীল উপন্যাস।
শেষ লাইন:
“চিঠির কালি শুকায়, কাগজ পুরোনো হয়, কিন্তু ভালোবাসা যদি সত্যি হয় — তা একদিন ঠিক ঠিক ঠিকানায় পৌঁছায়।”