ছোটবেলার কথা। বড়রা আলাপ করে। মানুষ বাঁশ খায়! আরও শুনি, সুন্দরবনে সেই বিশেষ ধরণের বাঁশের চাষবাস হয়। সুন্দরবন থেকে শত শত কিলোমিটার দুরে থাকি। মানুষের বাঁশ খাওয়ার গল্প শুনি। রূপ কথার মত লাগে।
এদিকে আমাদের গ্রাম এলাকায় অবশ্য দুই জাতের বাঁশ হয়ে থাকে। গ্রামে যাদের বড় বাঁশ আর মাকলা বাঁশ নামে ডাকা হয়। সেই বাঁশ কাউকে কখনও খেতে দেখিনি।
পরে এক দক্ষিণী বন্ধুর কাছে জানলাম, মাইনসে বাঁশ খায়। ঠিক বাঁশ না, সেটাকে বলে চুইঝাল। এক ধরণের বৃক্ষ, যার কাণ্ড গরু বা খাসির মাংসের সাথে রান্না করে। খুলনা চুকনগরের আব্বাসের হোটেল আছে। চুইঝাল দিয়ে রান্না চুই-গোশতের জন্য বিখ্যাত। পরে বাগেরহাটে পোস্টিং এর সুবাদে অসংখ্য বার চুইঝাল খেয়েছি। মাংসের তরকারিতে নতুন স্বাদ যোগ করে চুইঝাল।
অন্যদিকে আসল বাঁশ ছোটবেলা থেকেই খেয়ে আসছে মানব সন্তানেরা। বরাবর এই বাঁশ দিয়ে আসছেন স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ভার্সিটির স্যারেরা।
ইস, আজকের পরীক্ষায় স্যার যে বাঁশটা দিলো, সারা জীবন ভুলবো না।
এরকম অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যায়নি, এরকম মানুষ চাঁদে পাওয়া যেতে পারে, দুনিয়ায় নয়। আপনারা নিজেদের ছাদে গিয়ে সেই চাঁদের মানুষ দেখে আসতে পারেন। ততক্ষণে আমি কিছু জরুরত সেরে আসি।
বাঁশ দেয়া, বাঁশ খাওয়ার গল্পে আসি। স্যারদের দেয়া বাঁশ ছাত্ররা আজীবন ভুলতে পারে না। সেই কারণে হয়ত স্যারদের ছাত্ররা বড় বড় পদে বসে আসল বাঁশটা কড়ায় গণ্ডায় পরিশোধ করে। স্যারদের সর্বোচ্চ পদ প্রফেসর ৪ নং গ্রেড এরই নতিজা (ভার্সিটির স্যাররা সম্ভবত ৩ নং পায়)। সৈয়দ মুজতবা আলী পাদটীকা নামে একটা আস্ত বাঁশের গল্প লিখেছেন। পণ্ডিত মশাই এর বেতন ইংরেজ সাহেবের ৩ ঠ্যাঙ্গা কুত্তার ১ ঠ্যাঙের খরচের চেয়েও কম। এটা হাঁটে হাড়িভাঙ্গার চেয়ে কম নয়।
২।
দেশে অবশ্য ৩৫ থেকে ৪০ প্রজাতির বাঁশ আছে। ভিসা নিয়ে দেশের চৌহদ্দি পেরিয়ে যেতে পারলে পনের শত প্রজাতির বাঁশ দেখে আসতে পারবেন। ।
চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞেস করলাম। সে একগাদা বাঁশের নাম জানিয়ে দিলো। নামগুলো বেশ মজাদার ও ছন্দময়।এই যেমন,
বাজালি বাঁশ, বোরাক বাঁশ,
ওলি বাঁশ, মুলি বাঁশ,
কালা বাঁশ, ডোলু বাঁশ,
ডেব বাঁশ, মিঝি বাঁশ,
চাম্বু বাঁশ, মাগো বাঁশ
'মাগো বাঁশ' নামকে স্বর্নাক্ষরে লিখতে চেয়েছেন কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী। মাগো বাঁশের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি কাজলা দিদি কবিতা লিখেছেন।
'বাঁশ বাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ঐ,
মাগো আমার শ্লোক বলা কাজলা দিদি কই।'
এই দুইটি লাইনই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। এটা আমার ধারণা। আপনাদের বিশ্বাস করার দরকার নেই।
৩।
বাঁশ গাছের ছাল নেই। কারণ বাঁশ যে পরিমাণ উপকারে আসে, ছাল থাকলে মাইনসে ছিঁড়েখুঁড়ে নিয়ে যাইত। বাঁশ কি কাজে না লাগে। জন্মের পর থেকে দাফন কাজ, সবেতে বাঁশ লাগে। ঘর বাধতে, ঘর ভাঙ্গতে বাঁশ লাগে। শান্তিতে বাঁশ লাগে, সমরেও লাগে। তবুও বাঁশের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয় না।
এক দুষ্ট লোকের গল্প শুনেছিলাম। তাঁর এক সহপাঠিনী পরীক্ষা থেকে বের হয়ে দুঃখ করে জানায়, পরীক্ষায় বড় বাঁশ দিয়েছে। সেটা শুনে দুষ্ট ছেলে জিজ্ঞেস করে বসে, সামনে দিয়ে গেছে নাকি পিছন দিয়ে? এরে শুধু দুষ্ট বলা ঠিক হবে না, সে একটা জ্বলন্ত রগরগে দুষ্ট।
৪।
শের এ বাংলাকে নিয়ে একটা জোকস শুনলাম। সেটাও এই বাঁশ নিয়ে। শের এ বাংলার এক সমর্থক এসে টাকা সাহায্য চায়। তাঁর কাছে টাকা নেই। মেয়ের বিয়ে দিবে।
-
৫০ টাকার বিপরীতে ৬০ টাকা দেন তিনি। সেই লোক তো মহাখুশি। কিন্তু আরেক বার ভাবে, নিশ্চয় কোন কারণ আছে। সাহস করে জিজ্ঞেস করে, কেন অতিরিক ১০ টাকা দিলেন?
-বাকী ১০ টাকার কি হবে?
-ঐ দশ টাকা দিয়ে বাঁশ কিনবে।
আমি যেহেতু উপকার করেছি। একদিন না একদিন বাঁশ দিবাই। সেই কারণে বাঁশ কেনারও টাকা দিলাম।