দ্য হার্ট শেপ (পর্ব - ২)
ইনায়া এবার ফিরে এসেছে নিজের পুরনো বাসায়। বহুদিন পর সেই ঘরে ফিরে যেন সবকিছুই নতুন মনে হয় তার কাছে। জানালার পর্দা সরিয়ে শান্তির নিঃশ্বাস নেয় সে। দেয়ালের প্রতিটি কোণ ছুঁয়ে দেখে মন খারাপ নিয়ে—এই তো সেই ঘর, যেখানে সে শেষবার নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
হঠাৎ তার চোখ পড়ে বাবার ছবির উপর। ছবিটা কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। আগের জীবনের ছায়াগুলো যেন এখানেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
কিন্তু এবার, সবকিছু বদলেছে। কারণ এবার ইনায়া জানে ভবিষ্যতে কী ঘটবে। এবার কেউ তাকে প্রতারণা করতে পারবে না। কে তার বন্ধু আর কে শত্রু—সব তার জানা।
ভাবতে থাকে,
"আমি যখন ২০২৫ থেকে এসেছি তাহলে আমি তো জানি ২০২১ এ কি ঘটবে। তখন তো আমার কাছে অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। কেন না, আগের জীবনে যা ঘটেছে, আমি তা থেকে কিছু কাজে লাগাই । কেন না আমি কিছু টাকা ইনকাম করি কোথাও ইনভেস্ট করি।
তার মনে পড়ে, আগের জীবনে একবার একটা বিজনেস ডিল করেছিল, আরিশ ইনায়ার বান্ধবী আরিয়ার মাধ্যমে। প্রচুর লাভ হয়েছিল। সেই স্মৃতি মাথায় রেখেই এবার সে নতুন করে ওই একই ব্যবসায় ইনভেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু এইবার অনেক বেশি সচেতনভাবে। আর সে আরিয়ার সাথে দেখা করে সে ইনভেস্ট করে। আর সে মনে করে গত জীবনে এই ইনভেস্ট টা আরিশ করেছিল আর তার প্রচুর লাভ হয়। তার জন্যই আরিশ চাকরিটাও ছেড়ে দিয়ে ছিল।
আরো একটা ঘটনা মনে পড়ে। আরিশ তার এক বন্ধুর সাথে ব্যবসা করার জন্য ইনভেস্ট করে। আর পরবর্তীতে আরিশের সেই বন্ধু সব টাকা নিয়ে কোথাও পালিয়ে যায়। এইবার আমি আমার টাকাগুলো একটা ভালো জায়গায় ইনভেস্ট করেছি। এবার আমি চাই আরিশ তার সব টাকা তার বন্ধুর সাথে ব্যবসা করার জন্য ইনভেস্ট করুক। তাহলে সে পুরো পুরি রিনে ডুবে যাবে। আর রিনে ডুবার পর সে আমায় বিয়ের জন্য প্রপোজ করবে। তবে এবার আমি যা করব তার চিন্তাও করতে পারবে না। আমি ওকে উচিত শিক্ষা দিবো।
অফিসে নতুন সকাল
ইনায়া অফিসে আসে। রুহি আর আরিশ তার সঙ্গে দেখা করতে আসে।
রুহি: “আপু, কাল কল দিলে না কেন? আমি সারারাত অপেক্ষা করেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর তো আমরা-ই তোমার পরিবার। একটা কলও করলে না! আর কাল কী হয়েছিল তোমার? জিজুর কত চুল পড়ে গেছে, জানো?”
ইনায়া (ঠান্ডা গলায়): “আমি তোমাকে কল দিইনি, ঠিক। কিন্তু তুমি? তুমিও তো দিতে পারতে। তুমি যদি বুঝতে পারো আমার কিছু হয়েছে, তাহলে দেখা করতে এলে না কেন?”
আরিশ (রেগে): “তুমি ওকে এভাবে বলছো কেন? আমাকেও তো কল দাওনি! এত অহংকার দেখাও কেন? আমরা চিন্তা করছিলাম আর তুমি এসব বলছো? লজ্জা লাগে না?”
ইনায়া (দৃঢ়ভাবে): “চিন্তা করলে একটা কল দিতে পারতে। যাক, এখন আমাকে কাজ করতে দাও। তোমাদের সাথে তর্ক করার ইচ্ছা নেই।”
হঠাৎ আরিশ রাগে গলা চেপে ধরে।
আরিশ: “তুমি কেমন কথা বলছো? তোমার ভদ্রতা কোথায় গেছে?”
ঠিক তখনই অফিসের ডিরেক্টর, আহিল, এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
আহিল (কঠিন কণ্ঠে): “আমার অফিসে এসব চলবে না। আরিশ, একটা মেয়ের গায়ে হাত দিতে তোমার সাহস হয় কীভাবে? চাইলেই জেলে দিতে পারি!”
আরিশ কিছু বলার চেষ্টা করতেই আহিল বলেন:
“তোমাদের ব্যক্তিগত সমস্যা অফিসে এনো না। সবাই যার যার কাজে যাও!”
আহিল চলে যাচ্ছিলেন, এমন সময় রুহি ইনায়ার সামনে পা দিয়ে দেয়, আর ইনায়া হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয়। আহিল তাকে ধরে ফেলে, কিন্তু নিজেই পড়ে যায়। টেবিলের উপর রাখা কাচের গ্লাসটা ইনায়ার উপর পড়তে গেলে আহিল তা হাত দিয়ে ঠেকায়, তার হাত কেটে যায়।
ইনায়া আহিলের কাটা হাত দেখে বলে,
“স্যার, আপনি বসেন, আমি ওষুধ লাগাই।”
আহিল: “লাগবে না, আমি করে নেব।”
বলেই চলে যান।
ইনায়া অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
তার মনে পড়ে—
"গত জীবনে আরিশ রেগে গিয়ে আমার দিকে গ্লাস ছুঁড়ে মেরেছিল। আমার হাত কেটে গিয়েছিল। এবার ঠিক একইভাবে আহিল স্যারের হাত কেটে গেছে, শুধু পার্থক্য একটাই—এবার আমি বেঁচে গেছি।"
সে এগুলো ভাবতে ছিল তখন তাকে রুহি ডাক দিলে সে কাজের বাহানা দিয়ে চলে যায়।
রুহি বলে, “আপুর কি জানি হয়েছে জানো। কালকে থেকে আপু কেমন জানি ব্যবহার করতেছে। আর আপু তো কখনো তোমার মুখের উপর কথা বলতো না। তাহলে আজ কি হল? ।”
আরিশ হেসে উত্তর দেয়,দেখবে কিছুক্ষণ পরে আমার কাছে এসে ক্ষমা চাইবে। ওকে আমি ওই সময় মজা দেখাবো। কালকে থেকে আমার সাথে এমন করতেছে এটার ফল ওকে পেতে হাবে ।
রুহি বলে, “আমার মনে হচ্ছে সে যেন অন্য কেউ। কারণ আপুর কখন সাহস হবে না এসব করতে। দেখনা সে আমার সাথে ঠিকভাবে কথা বলো না।
আরিস বলে,, তুমি চিন্তা করোনা। এটার ফল ওকে পেতেই হবে। চলো দুজনে গিয়ে কাজ করি।
ইনায়া শুনে চুপচাপ হেসে নেয়। কারণ সত্যিই, তার ভেতরে একজন নতুন ‘সে’ জেগে উঠেছে। শিব মনে মনে বলে। আরিশ আমি তোমাকে আগের বারের মত আমার উপর অত্যাচার করার সুযোগ দিব না।
ইনায়া এসে নিজের ডেস্কের উপর বসে। তখন সে দেখতে পায়। একটা ডিস্ক এর উপর একটা প্রজেক্ট এর ফাইল রাখা আছে। তখন সে ফাইলটি হাতে নেয়। আর মনে করতে থাকে। গত জীবনে রুহি ম্যানেজার এর সাথে মিলে আমার প্রজেক্টটি চুরি করে নিয়েছিল। যার কারনে ওর প্রমোশন হয়। আর পরবর্তীতে সে আমার নামে ম্যানেজারের কাছে অনেক মিথ্যে মিথ্যে কথা বলে। যার ফলে আমার ডিমোশন হয়। আর আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সবার কাছে খারাপ বানায়। আমি নাকি ওর প্রজেক্ট চুরি করতে চেয়েছিলাম।
সেইদিনই সে সিদ্ধান্ত নেয়, আগের জীবনের ভুল আর হবে না। এবার সে তৈরি করে দুইটা প্রজেক্ট—একটা আসল, একটা নকল। ইচ্ছে করেই সে এমনভাবে সাজায় যাতে রুহি ভুল প্রজেক্টটা নিয়ে যায় এবং নিজেই ধরা খায়।
দুপুরে রুহি আর আরিশ এসে বলে,
“চলো ফ্রাইড রাইস খেতে যাই।”
ইনায়া (হেসে): “রুহি, তুমি জান আমি ফ্রাইড রাইস খাই না। তোমরা যাও, আমি ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নেব।”
রুহি বলে, আপু তুমি কি কোন কারনে আমাদের উপর রাগ করে আছ।
ইনায়া হেসে বলে না।
তখন আরিশ বলে,চলো রুহি আমরা যাই ও থাকুক।
এ বলে ওরা চলে যায়।
এরপর ইনায়া ওয়াশরুম থেকে বের হতেই এক মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগে। ইনায়া পড়ে যেতে নেয়, সে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কোন লাভ হয় না। সে পড়ে যায় আর তার কপালে কেটে যায়।
মেয়েটি: “সরি! তুমি ঠিক আছো? তোমার কপাল থেকে রক্ত পড়ছে।”
তখন ইনায়া নিজেকে আয়নায় দেখে আর খুব অবাক হয়।
সে ভাবতে থাকে। গত জীবনের ঠিক একইভাবে আমার কপালে আঘাত লেগেছিল। এবারও ঠিক একই রকম আর জায়গায়। তখন ঐ মেয়েটি বলে ইনায়া তুমি ঠিক আছ। ইনায়া বলে হ্যাঁ। এবলে ইনায়া চাদে চলে যায় আর সব ঘটনা ভাবতে শুরু করে।
গত জীবনের মতো আমার হাতের যে জায়গায় কেটে গিয়েছিল এবারও ঠিক একই জায়গায় কেটেছে আহিল স্যারের। আমার কিছু না হলেও আহিল স্যারের হাত কেটে গেছে ঠিক তেমন ভাবে যে ভাবে আমার হাত কেটেছে। আর আমি নিজেকে যত প্রুটেড করার চেষ্টা করি না কেন। আমার সেই আঘাতগুলো ঠিকই লাগে। আমি নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাও আমার কপালে কেটে গেছে । আর ঠিক একই জায়গায় একইভাবে।
তার মানে কি। আমার জীবনে যা হবার তা ঠিকিই হবে। আমি আমার জীবন কে পরিবর্তন করতে পারবো না। না তাহলে আমার আঘাতটা আহিল স্যার পেতো না। তাহলে কি যা হবার তা হবেই। কিন্তু আমি চাইলে আমার ভাগ্য টা অন্য কাউকে দিতে পারবো? তা না হলে আমার জীবন আগের মতোই শেষ হয়ে যাবে।
ইনায়া এখন কি করবে। সে কি পারবে নিজের ভাগ্য বদলাতে?
সে ভাবে:
“আমি কি আমার ভাগ্য কাউকে দিয়ে দিতে পারি? না হলে সব আগের মতোই শেষ হয়ে যাবে।”
শেষ প্রশ্ন...
“তাহলে কি আমার জীবনে যা হবার তা হবেই?
আমি কি কিছুই বদলাতে পারব না?
আমি কি আমার কষ্টের জীবন থেকে পালাতে পারব না?
আমি কি কাউকে সেই জীবন দিয়ে নিজেকে বাঁচাতে পারবো?”
উত্তর জানতে পড়তেই থাকুন—
‘দ্য হার্ট শেপ