এক ছিল সবুজে ঘেরা এক সুন্দর বন। সেই বনে অনেক পাখি, হরিণ আর খরগোশ থাকত। বনের মাঝখানে ছিল এক বিশাল গাছ—নাম তার মহুয়া গাছ। গাছের উঁচু ডালে ছিল একটি ছোট্ট পাখির বাসা। তার নাম ছিল টুনি।
টুনি ছিল ছোট, মিষ্টি আর খুব চঞ্চল। প্রতিদিন সে ডানা ঝাপটাত, গান গাইত আর রোদে বসে গা শুকোত। কিন্তু একটা ব্যাপার টুনির খুব ভয় লাগত—সে উঁচু থেকে উড়তে পারত না। অন্য পাখিরা ডাল থেকে ডালে উড়ে যেত, আকাশে খেলত, কিন্তু টুনি শুধু বাসায় বসে দেখত।
একদিন সকালে টুনির মা তাকে বলল,
— “টুনি, তোমার এখন উড়তে শেখার সময় হয়েছে।”
টুনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
— “কিন্তু মা, আমি তো পড়ে যাব!”
মা হেসে বলল,
— “যদি চেষ্টা না করো, কখনো শিখবে না। ভয়কে জিততে হলে সাহসী হতে হবে।”
ঝড়ের দিন
কয়েকদিন পরেই এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটল। হঠাৎ করে বনে তীব্র ঝড় উঠল। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেল, গাছের ডাল দুলতে শুরু করল। টুনি ভয়ে মায়ের ডানার নিচে লুকিয়ে পড়ল।
ঝড় এত জোরে বইল যে মহুয়া গাছের ডাল ভেঙে টুনির বাসা মাটিতে পড়ে গেল। মা পাখি উড়ে গিয়ে অন্য একটি ডালে আশ্রয় নিল, কিন্তু টুনি নিচে পড়ে থাকা বাসায় আটকে গেল। চারপাশে শুধু ঝড়ের শব্দ, বাতাসে ধুলো উড়ছে।
টুনি ভয়ে কাঁদতে লাগল,
— “মা… মা… আমি পারছি না!”
উপরে থেকে মা চিৎকার করে বলল,
— “টুনি! সাহস করো! ডানা মেলো! তুমি পারবে!”
প্রথম উড়ান
টুনি কাঁপতে কাঁপতে চোখ মুছল। চারপাশে তাকাল—উঁচু গাছ, তীব্র হাওয়া, ভাঙা বাসা… কিন্তু সে জানত, যদি সাহস না করে ডানা মেলে, তবে চিরকাল মাটিতেই আটকে থাকবে।
সে একবার গভীর শ্বাস নিল… তারপর ধীরে ধীরে ডানা মেলল। প্রথমে একটু হোঁচট খেল, মাটির কাছাকাছি উড়তে লাগল, তারপর হাওয়ায় ভেসে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল।
উপরে মায়ের ডানার নিচে এসে সে খুশিতে চেঁচিয়ে উঠল,
— “মা! আমি উড়েছি! আমি উড়তে পারি!”
মা তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
— “দেখেছ টুনি, ভয়কে জিততে সাহস লাগে।”
শিক্ষা
এরপর থেকে টুনি আর কোনোদিন উঁচু গাছকে ভয় পায়নি। সে প্রতিদিন আকাশে উড়ত, নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখত আর সবার কাছে বলত—
“যদি সাহস থাকে, অসম্ভব কিছুই নেই!”