Posts

সমালোচনা

স্বপ্নভঙ্গ 🥹

August 6, 2025

farddin on fire

175
View

                  স্বপ্নভঙ্গ 
     মোঃ ফারদিন মন্ডল বোরহান

---

রফিক একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে চুপচাপ বসে আছে। তার সামনে ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা। কিন্তু তার দৃষ্টির গভীরে যে ধোঁয়া, তা কি আর চায়ের কাপে আটকে থাকে?

রফিকের বয়স ২৮। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করেছে তিন বছর আগে। ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল, তখন কত স্বপ্ন ছিল মনে! ভাবত, একটা ভালো চাকরি পাবে, সংসারের হাল ধরবে, মা-বাবাকে ভালো একটা জীবন দেবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে বুঝতে পেরেছে, ডিগ্রি থাকলেই সম্মান মেলে না, চাকরি তো দূরের কথা।

তিন বছরে রফিক অন্তত ৭০টা চাকরির জন্য আবেদন করেছে। বিসিএস দিয়েছিল, দুইবার প্রিলিমিনারিতে বাদ। ব্যাংকের পরীক্ষায় বসেছিল, ভাইভা পর্যন্ত গিয়েও টিকতে পারেনি। “অভিজ্ঞতা নেই”—এই অজুহাতে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। রফিক ভাবে, “তাহলে যারা এক্সপেরিয়েন্সড না, তারা কোথায় যাবে?”

তার বন্ধুরা কেউ কেউ বিদেশে চলে গেছে, কেউ কেউ ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরি নিয়েছে—এটা রফিক জানে, কিন্তু তার পক্ষে তো ৮ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া সম্ভব নয়। বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক। দুই ভাইবোনের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়েই সংসারে টানাটানি।

দিন দিন রফিকের আত্মবিশ্বাস কমে যাচ্ছে। আত্মীয়দের সামনে যেতে ভয় লাগে। পাড়া-প্রতিবেশীর কথা শুনতে শুনতে কানে যেন পুঁজ জমেছে—
“ওরে! এখনও কিছু করে না?”,
“ছেলে তো তোর বসে বসে খায় বুঝি!”,
“পড়াশোনা করে কী লাভ হলো, শেষে চায়ের দোকানে বসে?”

মা সব বোঝেন, কিন্তু কিছু বলেন না। শুধু একবার একদিন রাতে বলেছিলেন, “তুই যদি বিদেশে যেতে পারতি, হয়তো কাজ পেতি। দেশে চাকরি যে কষ্টের…” সেই রাতে রফিক ঘুমোতে পারেনি।

রফিক এখন মাঝে মাঝে প্রাইভেট টিউশন করে। তিনটা ছাত্র পড়ায়—মাসে ৫ হাজার টাকার মতো আয় হয়। তার মধ্যে দিয়ে নিজের খরচ চলে যায়। কিন্তু এই জীবন কি সে চেয়েছিল?

একদিন হঠাৎ এক বন্ধুর সাথে দেখা হলো। বন্ধু এখন একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে, দামি মোটরবাইকে করে ঘুরে বেড়ায়। রফিককে দেখে একটু কৌতুকের ভঙ্গিতে বললো, “তুই এখনও খালি ঘুরিস? বিয়েশাদি করবি কবে?”

রফিক হেসে উত্তর দিলো, “চাকরি পাই না, বিয়ে করব কী দিয়ে?”
বন্ধু হেসে চলে গেল। রফিক আবার ফিরে এল সেই চায়ের দোকানে। চায়ের কাপ ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। সে তাকিয়ে থাকে দূরে, যেখানে সূর্য ডুবে যাচ্ছে।
হয়তো এভাবেই ডুবে যাচ্ছে তার স্বপ্নগুলোও।

---

**শেষ কথা:**
এই গল্প কেবল রফিকের নয়—এটি হাজারো শিক্ষিত বেকারের কষ্টের প্রতিচ্ছবি। স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলা তরুণেরা যখন বেকারত্বের দুঃসহ বাস্তবতায় আটকে পড়ে, তখন সমাজ শুধু প্রশ্ন করে—উত্তর নয়।

---

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    আমি ফেসবুক ব্যবহার করিনা

  • Kazi Eshita 3 months ago

    তরুণেরা উদ্যোক্তা ও তো হতে পারে