“বন্ধু, একটা খেলা খেলবো?”
হোটেল ব্যালকনিতে রাতের বাতাস বইছে। নিচে সমুদ্র গর্জন করে উঠছে ঢেউয়ের পর ঢেউ।
রফিক সিগারেট হাতে কৌতূহলী চোখে তাকাল সুমনের দিকে।
“খেলা?”
সুমনের ঠোঁটে ধীরে ধীরে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল।
“একটা এক্সপেরিমেন্ট। এমন কিছু, যেটা আমাদের চারজনের কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবে না।”
রফিক কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। হোটেলের আলো-আঁধারি, সমুদ্রের গর্জন, আর বন্ধুর চোখে ঝলসে ওঠা রহস্যময় উন্মাদনা— সব মিলিয়ে একটা অদ্ভুত কাঁপুনি জাগে তার ভিতরে।
আর এই কাঁপুনি থেকেই জন্ম নেয় সেই রাতের খেলা।
দুইটি পরিবার।
একটি রফিক ও তার স্ত্রী নিশাতের, অন্যটি সুমন ও তার স্ত্রী লায়লার।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পুরনো বন্ধুত্ব এখন দুই পরিবারের আত্মীয়তাজুড়ে গাঁথা।
পরস্পরের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত, একসাথে বেড়াতে যাওয়া, গল্প, হাসি, দুঃখ—সব ভাগাভাগি করে নেয় তারা।
এইবার তারা এসেছে কক্সবাজারে, চারজন একসাথে, সমুদ্রের জলে কিছুটা প্রশান্তি খুঁজতে।
সুমনের প্রস্তাবিত খেলার নিয়ম ছিল—
১. ঘরের আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে।
২. চারজনের চোখ বাঁধা থাকবে কালো কাপড় দিয়ে।
৩. কেউ কোনো শব্দ করবে না।
৪. কিন্তু চারটি দেহ মিশে যাবে… যেখানে চেনা থাকবে না, অচেনা থাকবে না— শুধু শরীর আর অনুভব।
প্রথমে স্ত্রীরা চুপ। অস্বস্তিতে।
কিন্তু নিশাতই প্রথম হেসে উঠল—
— “শুধু এক রাত? পরদিন কেউ কিছু বলবে না?”
সুমন শান্ত গলায় বলল,
— “কখনোই না। এই রাত থাকবে শুধু অন্ধকারের গভীরে। নামহীন, চেহারাহীন, কিন্তু চিরজাগরুক এক অনুভব হয়ে।”
ঘরে বাতি নিভে যায়।
চোখে পড়ে যায় কালো কাপড়।
দরজা বন্ধ।
ঘরের ভেতরে নিঃশব্দ… আর নিঃশ্বাসের শব্দ।
চারটি দেহ একে অপরের সীমানা পেরিয়ে যায়।
কে কার স্ত্রীর গলায় ঠোঁট রাখে, কে কার উরুর মাঝে গলে যায় — কেউ জানে না।
শুধু শরীর জানে, তারা পাগলের মতো খুঁজছে সেই নিঃশ্বাস, সেই উত্তাপ, যেটা তাদের নতুন করে জীবন্ত করে তোলে।
নিশাত অনুভব করে— এক জোড়া পুরুষের হাত ধীরে ধীরে তার বুকে উঠে আসছে।
আঙুলের স্পর্শে যেন আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার ত্বকে।
তার ঠোঁটে এসে পড়ে এক জোড়া ঠোঁট—
সেই চুমু কেবল ঠোঁট ছোঁয় না, কাঁপিয়ে দেয় তার মেরুদণ্ড।
জিহ্বা খেলে যায় তার গলার নিচের ডালে, উরুর কোলে…
তার ভেতর ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ে এক অনামা দণ্ড—
মসৃণ, মোটা, শক্ত।
সে চিৎকার করে উঠতে চায়, কিন্তু নিয়মের বেড়াজাল তার ঠোঁট আটকে রাখে।
সে কেবল কাঁপে, কাঁপতে কাঁপতে গলে যায় —
নিয়ন্ত্রন হারিয়ে এক অন্ধ অঙ্গারে।
রাত শেষ হয়।
আলো জ্বলে।
কেউ কিছু বলে না।
কেউ কারো চোখে তাকায় না।
তবুও চারটি ঠোঁটে লেগে থাকে এক ধরনের লুকানো সুখ।
একটি প্রশ্ন, একটি অস্থিরতা কেবল প্রতিটি মনের ভিতর বাসা বাঁধে—
“আমি কি সত্যিই আমার সঙ্গীকেই পেয়েছিলাম?”
---------
পর্ব-২
কক্সবাজার থেকে ফিরেছে এক সপ্তাহ।
রফিক অফিসে ফের মিটিংয়ে ডুবে যায়।
সুমন তার ডিজাইন ফার্মে ব্যস্ত।
নিশাত, লায়লা সবাই ব্যাস্ত সংসার নিয়ে।
সবকিছু স্বাভাবিক।
তবে এক জায়গায় অস্বাভাবিক কিছু রয়ে গেছে —
তাদের ভেতরের অনুভবে।
সেই রাতটা ছিলো সীমানাহীন এক অভিজ্ঞতা।
না চেনার খেলায়, চেনা মানুষদের সঙ্গে দেহের বিনিময়।
এক রাতের কথা।
সেটাই শেষ হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু শেষ হলো না।
এক রাতে সুমনের ফোন এল রফিকের কাছে—
— “বন্ধু, আবার কক্সবাজার যাবো চলো ?”
রফিক হেসে বলল,
— “তুমি আসলে সাগর দেখতে চাও, না… অন্য কিছু?”
— “সাগর তো অজুহাত। আসল খেলা তো অন্ধকারে।”
আর সুমনের ঠোঁটে ছিল এক রহস্যময় হাসি।
রফিক কিছু বলল না। কিন্তু ফোন নামিয়ে চুপচাপ ভাবতে লাগল।
সেদিন নিশাতের গায়ের ঘ্রাণ ছিল অন্যরকম।
সেই নিশ্বাস, সেই গা ছমছমে স্পর্শ — সব মনে পড়ে।
তবে সেটা কি তার স্ত্রীর শরীর ছিল? নাকি... লায়লার?
---
সন্ধ্যায় ডিনার টেবিলে আলো-আঁধারিতে রফিক বলল,
— “আবার কক্সবাজার যাবার কথা ভাবছি। সুমন বলছে।”
নিশাত চমকাল না।
শুধু বলল,
— “সবাই যাবে?”
রফিক মাথা নাড়ল,
— “যাবে। আগের মতন।”
নিশাত চোখ নামিয়ে হাসল।
একটা কৌতুক ছড়িয়ে গেল তার ঠোঁটে।
— “আবার সেই খেলা?”
রফিক চুপ।
নিশাত তাকিয়ে বলল,
— “না করলে কি হবে? তুমি তো যাবেই... তবে সেদিন মজা পেয়েছিলাম সবাই।"
---
দ্বিতীয় বার
ফের সেই হোটেল,
ফের সেই ঘর,
ফের সেই নিয়ম।
তবে এবার ছোট্ট একটা পার্থক্য ছিল।
চোখে কাপড় বাঁধা ছিল ঠিকই, কিন্তু মনে কৌতূহল ছিল কম।
সবার শরীর যেন একে অপরের পরিচিত।
এবার যেন শরীর নিজে নিজে চিনে নিচ্ছিল একে অপরকে।
কে কার বউ,
কার স্ত্রীর ঘাড়ে ঠোঁট,
কার হাতে ধরা কোমর —
সব ছিলো ধোঁয়াটে,
তবুও স্পষ্ট।
তবে কেউ প্রকাশ করছিল না।
এ যেন এক অদ্ভুত সম্মতি—
অস্বীকার করার মতই স্বীকার।
---
পরদিন সকালের নাস্তা সময়
লায়লা বলল,
— “আজকের সি-ফুড বাজারটা আমি করবো।”
নিশাত বলল,
— “চলো, আমরা দুজনই যাই। পুরুষেরা ঘুমাক।”
সুমন আর রফিক ব্যালকনিতে সিগারেট ধরাল।
দুজনেই জানে,
তারা যা করেছে, তা বাকি জীবনের জন্য এক ভেতরঘুণ।
কিন্তু...
তারা চায় এই ঘুণটা থাকুক।
কারণ এই ঘুণই তাদের বোরিং জীবনে আগুন দিয়েছে।
---
পর্ব-৩
রফিক, সুমন কর্মজীবন নিয়ে ফের ব্যাস্ত হয়ে যায়।
নিশাত, লায়লা ব্যাস্ত গতানুগতিক সংসার জীবন নিয়ে।
সব স্বাভাবিক... তবে সব নয়।
রাতে নিশাত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের নগ্ন শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়,
আর খুঁজে ফেরে সেই স্পর্শ—
সেই ঠোঁট, সেই দণ্ড,
যেটা তার শরীরের গভীরতম রহস্য উন্মোচন করেছিল।
রাতের নিঃশব্দে নিশাত আবার শুনতে পায় সেই নিশ্বাস…
আবার অনুভব করে এক অচেনা স্পর্শ, যা তাকে ভিজিয়ে দিয়েছিল অদ্ভুত এক স্রোতে।
এখন,
প্রতি রাতে সেই অনুভব
আবার ফিরে আসে।
তার শরীর জানে,
রফিক নয়…
সুমন ছিল সেই পুরুষ।
---
সে আর আগের মতো রফিককে ছুঁতে পারে না।
তার দেহ এখন চেনে নতুন ব্যাকরণ।
নতুন ছন্দ।
নতুন সুখ।
সুমন।
— যে কখনো প্রেমিক ছিল না।
— যাকে নিয়ে কোনোদিন কল্পনা করেনি।
কিন্তু এখন, নিশাত নিজের অজান্তেই তাকিয়ে থাকে সুমনের হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে।
এক রাতে সাহস করে একটা মেসেজ পাঠায় —
> “তুমি কি জানো, সেদিন আমি তোমাকেই পেয়েছিলাম?”
সুমনের উত্তর আসে ৩ ঘন্টা পর —
> “হয়তো।
সে আর সহ্য করতে পারে না।
— “তুমি কি বুঝেছিলে, আমি কে?”
সুমন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
— “হ্যাঁ… আমি জানতাম।”
— “দেখা করা যায়না… আরেকবার?”
সুমন নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
— “আমরা ভুল করেছিলাম। সেটা শেষ হয়ে গেছে।”
নিশাতের গলা ভাঙছিল,
— “শেষ কীভাবে হয় কিছু অনুভূতি…
যেটা আমি এখনো শরীরে অনুভব করি?”
সুমন বলল না কিছু।
নিশাত জানে,
এই গল্পের কোনো শেষ নেই।
------
নিশাত রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না।
তার চোখ বন্ধ করলেই সেই রাত ফিরে আসে —
সেই চারটে দেহের খেলা, নিঃশ্বাসে মেশা নিষিদ্ধ সুর।
তার শরীর প্রতিদিন রফিকের পাশে শোয়,
কিন্তু হৃদয় খুঁজে ফেরে অন্য কারো স্পর্শ।
নিজের শরীরে হাত রাখে সে— কোমরের বাঁকে, উরুর খাঁজে, বুকের নরম ভাঁজে…
তাকে ছুঁয়ে ফেলেছিল যে ঠোঁট—
সে ঠোঁট তাকে কেবল স্পর্শ করেনি,
ভেতর থেকে গলিয়ে দিয়েছিল।
এক রাতে, নিশাত ফোনে টাইপ করে—
যা সে পাঠায় না:
> “তুমি শুধু আমার শরীর নয়,
আমার আত্মা পর্যন্ত চুষে নিয়েছিলে।
আমি এখন আর রফিকের স্ত্রী নই,
আমি এখন শুধুই সেই অন্ধকারের নারী,
যার শরীর তোমার ছায়ায় জ্বলতে থাকে—
প্রতিদিন, প্রতি রাতে।”
......
সুমন জানে—
সে যা করেছে, তার নাম ‘ভুল’ নয়।
এটা একটা প্রলোভন ছিল,
যে প্রলোভন তাকে স্বাদ দিয়েছে—
না-পাওয়া সুখের,
নিষিদ্ধ ভালোবাসার।
কিন্তু সেই এক রাত এখন তার ঘাড়ের ওপর বসে থাকা এক ছায়া।
যা চলে না, কেবল চেয়ে থাকে—
তার চোখের ভেতর।
সে চায় ভুলে যেতে নিশাতকে।
সে চায় লায়লাকে দেখে ভালোবাসতে।
কিন্তু নিশাতের সেই উত্তাপ…
যেভাবে সে নীরবে নিজের সবকিছু খুলে দিয়েছিল—
সেটা শুধু শরীর নয়, একধরনের সমর্পণ ছিল।
সুমন এখন আর নিশাতকে দেখে না,
সে মনে মনে মনে করে—
নিশাত তার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মাথা নিচু, বুক ওঠা-নামা করছে,
আর চোখ বুঁজে আছে।
সে ইমেইলের মাঝে, ক্লায়েন্ট মিটিংয়ের মাঝেও
শরীর কাঁপিয়ে ওঠে।
সে জানে— নিশাতও কাঁপে।
প্রতিদিন।
---
২
নিশাত এখন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে না।
তার মাঝে এক অজানা নারী জন্ম নিয়েছে।
সে এখন আর রান্না করার সময় আগের মতো হাসে না।
বাচ্চার প্রশ্নে বিরক্ত হয়।
রফিকের ছোঁয়ায় চমকে উঠে।
তার মনে হয়, সে চুরি করছে — নিজের মন। নিজের দেহ।
একদিন সে আয়নার সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ নিজেকে দেখে।
নিজের স্তনের গোলাভাব, উরুর মোচড়…
আর মন বলে, “এই দেহ কোনো স্বামীকে দেওয়া হয়নি। এই দেহ পুড়ে গেছে অন্য কারও আগুনে।”
সে হঠাৎই আর সহ্য করতে পারে না।
রাত বারোটায় ফোন করে ফেলে সুমনকে।
— “ঘুমাচ্ছিলে?”
সুমন জবাব দেয় না।
নিশাত চাপা গলায় বলে,
— “তুমি কি জানো, আমি প্রতিদিন আয়নায় নিজের দেহে তোমার ছায়া খুঁজি?”
সুমন গভীর নিশ্বাস ফেলে।
তার কণ্ঠ বদলে যায়—
— “নিশাত, এই পথটা শেষ হয় না। তুমিও জানো, আমিও জানি। কিন্তু আমরা হাঁটছি, কেবল পুড়ে পুড়ে…”
— “আমি চাই পুড়তে, সুমন। আমি রফিকের পাশে শুয়ে আমার চোখ বন্ধ করি— কিন্তু দেহ আমার তোমার হয়ে যায়। আমার গভীরতাও তোমাকেই চায়।”
সুমন চুপ।
নিশাত বলে,
— “আমরা কি আরেকবার দেখা করতে পারি? শুধু একবার… এক ঘন্টা, এক রাত না, শুধু তোমার চোখের দিকে তাকাতে চাই।”
সুমনের গলা কাঁপে—
— “তুমি আমার সামনে আসলে আমি চোখে তাকাতে পারবো না… আমি তোমার ঠোঁটেই তাকিয়ে থাকবো।”
একটু নীরবতা।
তারপর নিশাত ফিসফিস করে বলে—
— “তাহলে চুমু দিও। যদি পারো... আরেকবার গলিয়ে দাও আমাকে।”
---
৩
একদিন সুযোগ বুঝে কাউকে না জানিয়ে তারা দেখা করে— একটা হোটেল রুমে।
নিশাত কেবল একটা ঢিলেঢালা সাদা শাড়ি পরে এসেছে।
সুমন তাকে দেখে কিছু বলে না।
সে কাছে যায়।
নিশাত চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।
সে চায়, সুমন প্রথমে ছুঁয়ে দিক।
সুমন তার কাঁধে হাত রাখে,
তারপর আলতো করে চুমু খায় ঘাড়ে।
নিশাত ধীরে ধীরে চোখ খুলে বলে—
— “তুমি কি আজও আমাকে চাও?”
সুমন ফিসফিস করে,
— “তোমাকে একবার পেয়েছিলাম… কিন্তু আমার পুরোটাই রেখে গিয়েছিলে তোমার মাঝে।”
নিশাত তাকে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে।
তারা কথা বলে না আর।
শুধু ঠোঁট আর ত্বক কথা বলে।
আঙ্গুল আর গভীরতা কথা বলে।
চিৎকার চেপে ধরা নিঃশ্বাস কথা বলে।
নিজেদের ভেতরে হারিয়ে যায় তারা…
একটি নিষিদ্ধ সুখে।
---
হোটেলের বিছানায় নিশাত নিঃশব্দে কাঁদে।
সে জানে, সে এখন পুরোপুরি ভুলে গেছে সেই নারীকে, যে একদিন সংসারের জন্য নিজেকে সংরক্ষণ করেছিল।
সে এখন অন্ধকারের নারী।
যে কেবল শরীর নয়—
দেহ দিয়ে ভালোবাসে,
ভালোবাসা দিয়ে জ্বলে ওঠে।
সুমন তাকে দেখে চুপচাপ পাশে শুয়ে থাকে।
তার কণ্ঠে একটাই কথা—
— “এটাই শেষ, নিশাত। আর না।”
নিশাত জানে, না মানে না....
কারণ এই আগুন আর নেভে না।
এই ছায়া মুছে যায় না।
এটা ভালোবাসা না—
তৃষ্ণা।
তৃষ্ণা, যা শরীর দিয়ে জন্ম নেয়…
আর হৃদয় দিয়ে বেড়ে ওঠে।
.......
পর্ব - ৫
মধ্যরাত।
জানালার কাঁচে শুধু হালকা বাতাসের চাপ।
ঘরের ভেতর অন্ধকার নয়, তবে আলোও খুব বেশি নয়— একটা চুপচাপ আলো জ্বলছে ছাদে।
রফিক নিশাতকে জড়িয়ে ধরে আছে।
তার ঠোঁট ঘষছে নিশাতের ঠোঁটে,
আঙুল বেয়ে যাচ্ছে বুকের উঁচু-নিচু ঢেউয়ের সীমায়,
আর তারপর ধীরে ধীরে নামছে… নিচে, গভীরে।
নিশাতের শরীর কিছুটা সাড়া দেয়,
কিন্তু হৃদয় নয়।
রফিকেরও শরীর আছে, উত্তেজনা আছে,
কিন্তু চোখের পেছনে বারবার ভেসে ওঠে
সেই মুহূর্ত… সেই অন্ধকারে পা রাখা খেলা…
নিশাত হঠাৎ কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
— “তুমি কি আমায় আগের মতো ভালোবাসো?”
প্রশ্নটা নিঃশব্দে কাঁপিয়ে দেয় রফিককে।
সে নিশাতকে ধীরে ধীরে ছেড়ে দেয়।
পাশে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে।
ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ।
নিশাত কোনো শব্দ করে না,
শুধু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।
দুজন দুই পাশে মুখ করে শোয়,
একই বিছানায়, অথচ এত দূরে।
তাদের মাঝখানে শুয়ে থাকে অন্ধকারের সেই রাত,
যেটা আজও নিঃশব্দে শব্দ করে ওঠে।
রফিক জানে, সে কখনো জানতে চাইবে না সত্যিটা।
নিশাতও জানে, সে কখনো বলবে না।
কিন্তু দুজনেই বোঝে—
তারা আর আগের মতো নেই।
শরীর জিতেছে,
কিন্তু হৃদয়…
ফাঁকা হয়ে গেছে।
---
সত্যিটা হলো—
মানুষের জীবনে কখনো কখনো একঘেয়েমি, ক্লান্তি, শূন্যতা এসে জমে। গতানুগতিক জীবন, একই পরিবেশ, একই স্বাদ.... জীবনকে বৈচিত্র্যহীন, একঘেয়ে করে তুলে।
তখন কিছু নিষিদ্ধ পথ, অদ্ভুত খেলা,
বা এক মুহূর্তের চোরাসুখ খুব লোভনীয় মনে হয়।
তার চেহারা হয় উত্তেজক, তার শরীর হয় আগুনের মতো।
কিন্তু সেই আগুন নিভে গেলে,
যা রয়ে যায় তা হলো— ছাই।
অন্তরজ্বালার ছাই....।
নিষিদ্ধ সম্পর্ক....
সুখ নয়, সন্দেহ দেয়।
ভালোবাসা নয়, দূরত্ব দেয়।
এক রাতে শরীর জিততে পারে,
কিন্তু জীবনভর মন হেরে যায়।
তাই, জীবনে যেমন বৈচিত্র্যের প্রয়োজন আছে, তেমনি তাকে সীমার মধ্যে রেখে, নৈতিকতার মধ্যে থেকে গ্রহণ করতে হবে।
---
সমাপ্ত।