Posts

উপন্যাস

রক্তে লেখা অনুতাপ

August 11, 2025

Tanvir khan

117
View




অধ্যায় ১ — নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের সকাল

‎নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের পুরনো, স্যাঁতসেঁতে সেলে বসে সাজিদ চুপচাপ দেয়ালের দিকে তাকিয়ে ছিল।
‎দেয়ালের ফাটলের ভেতরে জমে থাকা সবুজ শ্যাওলা যেন বহু বছরের জমে থাকা পাপের মতো।
‎ভোরের আলো ম্লান হয়ে ঢুকছে লোহার গ্রিলের সরু ফাঁক দিয়ে, আলোয় ধুলো কণাগুলো ভেসে বেড়াচ্ছে।
‎দূরের কোনো মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে, কিন্তু সাজিদের মন যেন সেই সুরও শুনতে চায় না।

‎পাশের সেলে এক কয়েদি কাশতে কাশতে শ্বাস নিচ্ছে, অন্য প্রান্তে কেউ ধীরে ধীরে কোরআন পড়ছে।
‎তবুও সাজিদের মনে শূন্যতা—এমন শূন্যতা, যেখানে কোনো শব্দই পৌঁছায় না।

‎সে জানে, আজও দিনটা যাবে আগের দিনের মতোই—লোহার দরজা খোলা, নাম ডাকা,  কাজ… তারপর আবার সেলের ভেতরে ফিরে আসা।
‎তবুও আজ তার মন অন্যরকম।
‎আজ তার বুকের ভেতরে যেন এক অদৃশ্য হাত দরজা খুলে দিচ্ছে, আর স্মৃতিগুলো বের হয়ে আসছে ধোঁয়ার মতো।

‎স্মৃতিতে ভেসে উঠল তার মায়ের মুখ।
‎সকালে ফজরের পর মা ডাক দিতেন—
‎মা: “বাবা সাজিদ, ওঠ… নামাজ পড়ে আয়।”
‎তারপর হাতে গরম রুটি আর ডালের বাটি তুলে দিতেন।
‎সাজিদ খাওয়ার সময় মায়ের মুখে শান্তির হাসি থাকত।

‎কালাদি মাদরাসার সেই দিনগুলো—
‎শীতের সকালে কুয়াশা ভেদ করে মাদরাসায় যাওয়া,
‎বিকেলে মাঠে বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলা,
‎আর রাতে প্রাইভেটে হাফিজ সাহেবের কাছে কোরআন তিলাওয়াত শেখা।

‎সবাই বলত, সাজিদ মাদরাসার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র।
‎শিক্ষকরা গর্ব করে বলতেন—
‎শিক্ষক: “দেখো সাজিদকে, কত মন দিয়ে পড়ে। একদিন বড় আলেম হবে।”
‎সাজিদের বুক তখন গর্বে ভরে যেত।
‎বাবা প্রতিবেশীদের বলতেন—
‎বাবা: “আমার ছেলে একদিন আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে।”

‎কিন্তু এই স্মৃতির মাঝে এক মুখ সবসময় স্পষ্ট হয়ে উঠত—ফাতেমা।
‎ফাতেমা ছিল শান্ত স্বভাবের, বড় চোখের, মিষ্টি হাসির একটি মেয়ে।
‎কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার দিন সাজিদ প্রথম হয়েছিল, আর পুরস্কার নেওয়ার সময় ফাতেমার চোখে যে গর্বের ঝিলিক সে দেখেছিল—তা সাজিদের হৃদয়ে যেন স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল।

‎আজ জেলের অন্ধকার সেলে বসে সেই মুহূর্তগুলোর কথা ভাবলেই বুকের ভেতর মোচড় দেয়।
‎যে চোখ একদিন তাকে গর্বে ভরিয়ে দিয়েছিল, আজ সেই চোখ হয়তো ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

‎দূরে কারারক্ষীর সিটি বাজল।
‎তবুও সাজিদ নড়ল না, শুধু মাটির দিকে তাকিয়ে রইল।
‎পাশের সেলের এক কয়েদি ডাক দিল—
‎কয়েদি: “শুনছিস সাজিদ? এত চুপ কেন?”
‎সাজিদ: “ভাবছি…”
‎কয়েদি: “কি ভাবছিস?”
‎সাজিদ: “যা ভেবে লাভ নেই… তবুও থামাতে পারি না।”

‎সে জানে, অতীতের স্মৃতি ভুলতে চাইলে ভুলা যায় না।
‎কারণ সেখানে আছে মায়ের হাসি, শৈশবের স্বপ্ন, আর সেই ভয়ংকর রাতের অভিশাপ—যা তাকে এখানে এনে ফেলেছে।

অধ্যায় ২ — মেঘ জমতে শুরু

‎জেলের অন্ধকার সেলে বসে সাজিদ চোখ বন্ধ করল।
‎হঠাৎই স্মৃতির দরজা খুলে গেল—
‎সে যেন আবার ফিরে গেল রুপগনঞ্জের কানচঞ্চ গ্রামের সেই দিনগুলোতে, যখন তার জীবন ছিল স্বপ্নে ভরা।

‎শীতের সকালের কুয়াশা ভেদ করে সে হেঁটে যেত কালাদি মাদরাসার পথে।
‎পথের এক পাশে শীতলক্ষ্যা নদী অন্য পাশে ধানক্ষেত, মাঝে মাঝে ভোরের শিশিরে ভেজা ঘাসের গন্ধ বাতাসে ভেসে আসত।
‎পিঠে বইয়ের ব্যাগ, হাতে কোরআনের কপি—সব মিলিয়ে সে যেন গ্রামের গর্ব।

‎মাদরাসায় ঢুকেই সহপাঠীদের হাসি-আড্ডা, শিক্ষকের স্নেহমাখা দৃষ্টি—সবকিছুই ছিল সাজিদের কাছে আশীর্বাদ।
‎সে পড়াশোনায় এতটাই মনোযোগী ছিল যে শিক্ষকরা প্রায়ই বলতেন—
‎“সাজিদ, তোমার মতো ছেলে গ্রামে একটাও নেই। তুমি একদিন নাম করবে।”

‎কিন্তু সেই মধুর স্মৃতির ভেতরে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল ফাতেমার মুখ।
‎ফাতেমা—শান্ত স্বভাবের, মায়াবী চোখের, বিনয়ী স্বরে কথা বলা এক মেয়ে।
‎প্রথম পরিচয় হয়েছিল কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতায়।
‎সেই দিন সাজিদ ছেলেদের মধ্যে প্রথম হয়েছিল, ফাতেমা মেয়েদের মধ্যে।
‎পুরস্কার নেওয়ার মুহূর্তে তাদের চোখ একবার মিলেছিল, আর সেই দৃষ্টি যেন সাজিদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছে।

‎তাদের কথা বেশি হতো না, কিন্তু ক্লাসের বই বা নোট বিনিময়ের সময় ছোট্ট কিছু আলাপ হতো।
‎সেই ক্ষণিকের কথা সাজিদের মনে দিনের পর দিন রঙ ছড়াত।

‎কিন্তু মানুষের জীবনে সব সময় সবকিছু মনের মতো হয় না।
‎একদিন সহপাঠীদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলো—
‎“ফাতেমা নাকি অন্য কারও সাথে বেশি কথা বলে এবং সম্পর্কো আছে।”
‎কেউ কেউ ইঙ্গিত করল, কেউ হাসল।
‎সাজিদ কিছুই প্রমাণ পেল না, কিন্তু মনে অদ্ভুত এক কষ্ট জন্ম নিল।

‎সেদিন থেকেই পড়াশোনায় মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ে।
‎ক্লাসে বসেও মন চলে যেত অন্য দিকে।
‎বিকেলে ফুটবল খেলতেও আর আগের মতো মজা লাগত না।
‎মায়ের স্নেহের ডাক, বাবার গর্বের কথা—সবকিছু যেন দূরে সরে যাচ্ছিল।

‎এমন সময় তার জীবনে ঢুকল নাসির, রনি আর সোহাগ—মাদরাসার বাইরের কিছু ছেলে।
‎ওরা বাজারে সময় কাটাত, সিগারেট খেত, অশ্লীল রসিকতা করত।
‎একদিন স্কুল শেষে নাসির বলল—
‎“ভাই সাজিদ, তুই তো সবসময় সিরিয়াস থাকিস। একদিন আমাদের সাথে আয়, মজা করবি।”

‎প্রথমে সাজিদ না করল, কিন্তু ভেতরে একটা শূন্যতা তাকে টানছিল।
‎যেন হারানো আনন্দ ফেরত পাওয়ার জন্য সে কিছু খুঁজছিল—
‎আর সেই খোঁজই তাকে এমন পথে নিয়ে যাবে, যেখান থেকে আর ফেরার রাস্তা থাকবে না।

‎জেলের স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে হেলান দিয়ে সাজিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
‎তার মনে হচ্ছিল, যদি সেদিন নাসিরের সাথে যাওয়া বাদ দিত… হয়তো আজ সে এখনো মায়ের কাছে, মাদরাসায়, ফাতেমার দৃষ্টিতে সম্মানিত থাকত।

‎কিন্তু অতীত বদলানো যায় না।
‎সে শুধু ফাঁকা চোখে দেয়ালের ফাটলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল—
‎যেন প্রতিটি ফাটল তার জীবনের একেকটি ভাঙা স্বপ্নের চিহ্ন।

‎অধ্যায় ৩ — অন্ধকারের প্রথম স্বাদ
‎জেলের ঠান্ডা মেঝেতে বসে সাজিদ সেই দিনটার কথা মনে করল—
‎যেদিন প্রথমবার নাসিরের সাথে কানচঞ্চ বাজারে চায়ের দোকানে গিয়েছিল।

‎সন্ধ্যার বাতাসে ধুলো উড়ছিল, দোকানের টিনের ছাউনি টুপটাপ শব্দ করছিল।
‎চা-দোকানির পাশে বসে কয়েকজন লোক সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছিল, আর কোণে নাসির, রনি, সোহাগ হাসাহাসি করছিল।

‎চা খেতে খেতে নাসির পকেট থেকে ছোট্ট একটি প্যাকেট বের করল।
‎ভেতরে সাদা গুঁড়া—
‎নাসির ফিসফিস করে বলল,
‎“এই জিনিসটা খেলে সব টেনশন শেষ। মাথা হালকা, দুনিয়া নতুন লাগে।”

‎সাজিদ প্রথমে ভয় পেয়ে গেল। সে বলল।
‎“না ভাই, এসব ভালো না,” 
‎কিন্তু নাসির হেসে উত্তর দিল—
‎“আরে, তুই একবার চেষ্টা কর। তোকে দেখতেছি, মন খারাপ করে বসে আছিস এতদিন। এটাই তোর ওষুধ।”

‎সাজিদ কিছুক্ষণ চুপ রইল।
‎মনে পড়ল ফাতেমার কথা, ভাঙা বিশ্বাসের কষ্ট, পড়াশোনায় মন না লাগার যন্ত্রণা।
‎হঠাৎ মনে হলো, হয়তো সত্যিই এটা কিছুক্ষণের জন্য সব ভুলিয়ে দেবে।

‎এক মুহূর্ত দ্বিধার পর সে নাসিরের হাত থেকে গুঁড়োটা নিয়ে এক চুমুকের মতো টান দিল।
‎প্রথমে গলা জ্বলে উঠল, চোখে পানি চলে এলো, কিন্তু কিছুক্ষণ পর মাথার ভেতরে এক অদ্ভুত হালকা ভাব ছড়িয়ে গেল।
‎সব দুঃখ, সব চিন্তা যেন মিলিয়ে গেল।

‎সেদিন বাড়ি ফিরল সে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে।
‎মা যখন খাবার দিলেন, তার চোখে সেই স্নেহমাখা দৃষ্টি ছিল, কিন্তু সাজিদ যেন দূরের কোনো জগতে হারিয়ে ছিল।

‎দিন যেতে যেতে সেই নেশা তার কাছে নিয়মিত হয়ে উঠল।
‎প্রথমে সপ্তাহে একদিন, পরে দুদিন, তারপর প্রতিদিন।
‎মাদকের জন্য টাকার প্রয়োজন বাড়তে লাগল।
‎প্রথমে নিজের জমা পয়সা খরচ করল, তারপর বাবার পকেট থেকে লুকিয়ে নিল।

‎মায়ের চোখে ধরা পড়ার ভয় ছিল, কিন্তু মাদক তার ভয়কেও ধীরে ধীরে মুছে দিল।
‎একদিন মা বললেন,
‎“বাবা, তোর চোখ লাল কেন? এত রাতে কোথায় থাকিস?”
‎সাজিদ রাগে উত্তর দিল,
‎“আপনি আমাকে সন্দেহ করেন কেন?”

‎তার সেই কণ্ঠে যে বিষ ছিল, তা মা আগে কখনো শোনেননি।
‎সেই মুহূর্ত থেকেই পরিবারে ফাটল শুরু হলো—
‎বাবা রেগে যেতেন, মা কাঁদতেন, আর সাজিদ নাসিরদের সাথে আরও বেশি মিশতে লাগল।

‎জেলের সেলে বসে সাজিদ আজ বুঝতে পারে—
‎সেদিন যদি সে প্রথম টানটা না দিত, হয়তো সবকিছু ভিন্ন হতো।
‎কিন্তু আফসোসের কোনো দাম নেই।

‎অধ্যায় ৪ — সেই অভিশপ্ত রাত
‎জেলের স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে হেলান দিয়ে সাজিদ চোখ বন্ধ করল।
‎অন্ধকারের ভেতর থেকে ভেসে উঠল সেই রাতের প্রতিটি দৃশ্য—
‎যেন প্রতিটি মুহূর্ত তাকে শিকল বেঁধে ধরে রেখেছে।

‎দিন কয়েক ধরে তার হাতে কোনো টাকা ছিল না।
‎নাসির বারবার ফোন দিয়ে বলছিল—
‎“ভাই, আজকে একটু নিয়ে আয়, না হলে খেতে পারবি না।”

‎মাদক ছাড়া সাজিদের শরীর কাঁপছিল, মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছিল, চোখে ধোঁয়া ভাসছিল।
‎বাবা তখন বাইরে, মা রান্নাঘরে রাতের খাবার রাঁধছিলেন।
‎সে মায়ের কাছে গিয়ে বলল,
‎“মা, আমাকে এক হাজার টাকা দাও।”

‎মা অবাক হয়ে তাকালেন,
‎“কিসের জন্য?”
‎“জরুরি দরকার।”
‎“তুই কি আবার ওই বাজে ছেলেদের সাথে ঘুরছিস?”

‎সাজিদের বুকের ভেতর রাগ জমে উঠল।
‎“মা, টাকা দাও, কথা বাড়িও না।”
‎মা কড়া গলায় বললেন,
‎“না, আমি তোকে এক টাকাও দেব না। তুই বদলে গেছিস সাজিদ। তোর চোখ, তোর কথা—সব বদলে গেছে।”

‎এই কথা যেন আগুনে ঘি ঢালল।
‎নেশার তীব্র চাহিদা তার মাথা অসাড় করে দিল।
‎রাগে, হতাশায়, আর নেশার টানে সে রান্নাঘরের পাশে রাখা লোহার রড তুলে নিল।

‎“তুই সবসময় আমার পথে দাঁড়াস!”—চিৎকার করে সে রড দিয়ে আঘাত করল।
‎মা চিৎকার করে উঠলেন,
‎“আল্লাহ… সাজিদ…!”

‎কিন্তু সেই চিৎকার ধীরে ধীরে থেমে গেল।
‎রক্ত মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল, আর সাজিদের হাতে কাঁপুনি শুরু হলো।

‎মুহূর্তের মধ্যে তার চোখ থেকে রাগ মিলিয়ে গিয়ে ভয় এসে জায়গা নিল।
‎সে বুঝতে পারল কী করেছে, কিন্তু তখন আর কিছু ফেরানোর ছিল না।

‎পাশের বাড়ির লোকজন দৌড়ে এলো, কেউ পুলিশে খবর দিল।
‎সাজিদ বসে পড়ল মায়ের নিথর দেহের পাশে—
‎“মা… আমি তো শুধু টাকা চেয়েছিলাম… কেন তুমি…”

‎পুলিশ এসে তাকে হাতকড়া পরাল।
‎গ্রামের মানুষ, যারা একসময় তার গর্বের কথা বলত, আজ ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিল।
‎তার বাবার চোখে ছিল শুধু অশ্রু আর অভিশাপ।

‎জেলের সেলে বসে সাজিদ আজও সেই রাতের শব্দ, গন্ধ, আর দৃশ্য ভুলতে পারে না।
‎সে জানে—ওই এক রাতেই সে শুধু মাকে নয়, নিজের জীবনকেও হত্যা করেছে।

অধ্যায় ৫ — শেষ সিদ্ধান্ত ও জীবনের বার্তা
‎নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের স্যাঁতসেঁতে সেলে সাজিদ একাকী বসে ছিল।
‎তার চোখ ছিল বিষণ্ণ, মনে ভেসে উঠছিল অনেক স্মৃতি — মায়ের স্নেহময় হাসি, ফাতেমার মায়াবী চোখ, বাবার দুঃখপূর্ণ নীরবতা।
‎সবকিছু যেন এক ভয়ানক কাব্য, যার শেষটা খুব করুণ।

‎তার হাতে আজ পুলিশের নোটিশ—ফাঁসির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
‎মায়ের হত্যা অপরাধের দায়ে তার জীবন শেষ হতে চলেছে।
‎সে জানে, তার রাগ আর মাদক তাকে একসময় অন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু সেই অন্ধকারে তার মা সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছিল।

সাজিদ মনে মনে বলল ‎"মা, তোমার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়ার মুখনেই, মা... আমি যে তোমার হত্যাকারী ," সাজিদ মনে মনে আবারও বলল, "তুমি আমার সবকিছু ছিলে। আমার এই দুঃখের ভেতর তোমার মায়া আজো বাঁচে।"

‎জেলের দেয়ালে ঠেস দিয়ে সে দাঁড়িয়ে, জানালার বাইরে ধোঁয়াটে আকাশের দিকে তাকালো।
‎মেঘ জমে আছে, কিন্তু একটু দূরে সূর্যের কিরণ ফোঁটেছে—একটা নতুন জীবনের প্রতিশ্রুতি।
‎কিন্তু তার জন্য সে সুযোগ আর আসবে না।

‎সাজিদ নিজেকে বলল,
‎"আমার মতো যারা মাদকের আঁধারে হারিয়ে গেছে, তাদের বলি—এ পথ বেছে নেবেন না।
‎মাদক জীবনের ধ্বংস, যা শুধু নিজেকে নয়, প্রিয়জনদেরও ধ্বংস করে।
‎অপরাধের পরিণতি কখনো মিষ্টি হয় না, আমার ফাঁসিই তার সাক্ষ্য।
‎আমি ভুল করেছি, আর তাই দণ্ড পেয়েছি।
‎তাই তোমরা ফিরে এসো, এই ধ্বংসাত্মক পথে চলো না।"

‎সাজিদের মুখে ছিল গর্বহীন অনুশোচনা, চোখে বুক ফাটানো কান্না।
‎তার জীবনের শেষ প্রহরে সে একটা বার্তা রেখে যেতে চেয়েছিল—
‎মাদক থেকে দূরে থাকো, নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যত বাঁচাও।

‎এই হলো গল্পের সমাপ্তি — সাজিদের বেদনার শেষ অধ্যায়।
‎যা মাদকের ভয়াবহ পরিণতি ও অপরাধবোধের এক জীবন্ত শিক্ষণীয় গল্প।

Comments

    Please login to post comment. Login