Posts

নন ফিকশন

চেনা চিনির সমস্যা

August 19, 2025

সাজিদ রহমান

117
View

ইদানিং একটা নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। একে ঠিক সমস্যা বলা যাবে কিনা, সেটারও বিহিত করতে পারছি না।

ঠিক এরকম একটা বিষয় নিয়ে আলাপ করেছিলেন দীপক দা। প্রাগৈতিহাসিক আমলে আমরা এক সাথে চাকরি করতাম। খুব স্নেহ করতেন। বাংলাদেশ রেলওয়েতে উঠার সুযোগ পেয়েছিলেন (চাকরি হয়েছিলো)। সেটা না করে কুমিল্লার মাতৃভান্ডার এর অংশবিশেষ নিয়ে (ভাবি মাতৃভান্ডার পরিবারের মেয়ে) প্লেনে উঠে যান। সেই থেকে দীপক দা কানাডা প্রবাসী।

দীপক দার চেহারা পূরাই আলু। আলু সব জায়গায় চলে, এটা কত ভালো বিষয়। কিন্তু এটাকে কোনভাবে আলুর দোষ বলা যায় না, গুণ ব্যতিরিকে। অথচ আলুর দোষ বললে সেটা ভিন্ন খাতে চালিয়ে নেয়ার ঐতিহাসিক উদাহরণ আছে। সেদিকে আমরা না যাই।

দীপকদাকে যে দেখেন তিনিই বলে উঠেন, ভাই আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। আলু সব তরকারিতে চলে। দীপক দা সবার কাছেই পরিচিত। মানুষ বহু কষ্টে তারকা হয়, পরিচিতি বাড়ে। দীপক দার কিছুই করা লাগে না।

দীপক দা জীবনে প্রথমবার ভারতে যাচ্ছেন। ট্রেনে চেপে। কলকাতা থেকে চেন্নাই। পাশের এক যাত্রী স্ব-উদ্যোগে এগিয়ে এলেন। এরপর বললেন,

-দাদা, আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে। কোথায় দেখেছি বলুন তো?

দীপক দা নিজের পুর্বাপর বললেন। জীবনে প্রথমবার দেশের বাইরে পা রেখেছেন। তাদের দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নো চান্স এট অল।

কিন্তু সেই যাত্রী কোনভাবে মেনে নিতে পারেন না।

-না দাদা, বললেও বিশ্বাস করবো না। কোথাও না কোথাও দেখা হয়েছে।

এভাবে দীপকদার বিষয়টা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

২।

আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেমই আমার উপর পড়েছে। ফারুকীর ব্যাচেলর এ আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া এই গান তখনকার প্রজন্মকে মাৎ করে রেখেছিলো।

দীপকদার মত নয়, আমার হয়েছে উল্টা। দীপকদা সবার কাছে চেনা চেনা মনে হত, আমার কাছে আশেপাশের মানুষজনকে চেনা চেনা লাগছে।

বেশ কয়েক দিন হল, ওষুধের দোকানে এক ছেলেকে দিয়ে ইনজেকশন দেয়া নিবো। তারে দেখে মনে হল, আরে এরে তো চিনি। নাম ধাম ঠিকানার চৌহদ্দি জেনে বুঝতে পারলাম। ওকে আমার চেনার কথাই না। যা হোক। ম্যান ইস মোরটাল। ভুল হতেই পারে।

কাঁচা বাজারে গেছি। হালকা দাড়ির এক লোক। সবজি বিক্রি করছেন। একই নাক কান মুখমণ্ডল দিয়ে তৈরি সব মানুষ। সবজির দোকানদেরকে খুব পরিচিত মনে হল। খুব চেনা, কোথায় যেন দেখেছি। না নিজেরে কন্ট্রোল করলাম। বেহুদা বেহুদ্দার মত আলাপ করে ভেজাল বাড়িয়ে লাভ নেই।

আরেক দিনের ঘটনা। রক্তের স্যাম্পল নেয়া ছেলেটাকেও খুব চেনা চেনা লাগছে। এরপর ওষুধ কেনার জন্য এক দোকানে ঢুকলাম। একে একে সবার দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, প্রত্যেককেই কেমন চেনা চেনা লাগছে। কি আজবরে ভাই, এমনটা কেন হবে?

বিষয়টা এতদূর গড়িয়েছে। আর কতদূর গড়াবে খোদা মালুম। উদ্ভূত বিষয়কে কি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে? আপনারাই বলুন।

Comments

    Please login to post comment. Login