Posts

প্রবন্ধ

লুবলুর পৃথিবী: একটি আত্মদর্শনের ভ্রমন—

September 4, 2025

Muntaka Azmain Muhi

382
View

বিষয়বস্তু হিসেবে সাহিত্যে আত্মদর্শনের ভ্রমণ পুরোনো হলেও এর চর্চা থেমে ছিলো না কখনোই। যখন একটি চরিত্র— যার আত্মভ্রমণের ওপর নির্ভর করে একটি আখ্যান রচিত হয়, তখন তা কেবল এপিফ্যানি পর্যন্ত আটকে থাকে না। বরং এই আত্মদর্শন এপিফ্যানির পরিধি ছাড়িয়ে পাঠককে নিয়ে যায় আরো বিস্তৃত পথে। চার্বাক দীপ্ত রচয়িত লুবলুর পৃথিবী ঠিক এই ধরণেরই এক গল্পের কথা আমাদের বলে।

সাহিত্যে সার্থক “আত্মদর্শন" প্রসঙ্গ এলেই উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে পাওলো কোয়েলহো রচয়িত দ্য এলকেমিস্ট কিংবা খলিল জিবরান রচয়িত দ্য প্রফেট। কিন্তু, এই আত্মদর্শনকে সংজ্ঞায়িত করলে দেখা যাবে, একটি চরিত্রের ভ্রমণ— যে স্বাভাবিক গুণ্ডি পেরিয়ে এমন এক সত্যের মুখোমুখি হচ্ছে যা তাঁর বিশ্বাস বা দর্শনের জায়গায় এক আমূল পরির্তন আনছে। এখানে, চরিত্রের এক “বোধের জাগরণ” লক্ষণীয়, ঠিক যেভাবে জীবনানন্দ দাশ তাঁর বোধ কবিতায় লিখেছিলেন,
“আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে / স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে;” / “স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয় / হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়;”

প্রচলিত অর্থে একটি সময় “কমিকস” কেবলমাত্র বাচ্চা বা বড়দের বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে চর্চিত হলেও লুবলুর পৃথিবী এই চলমান প্রথা ভেঙে বাংলা কমিকসে যে নতুন ধারা যোগ করেছে তা প্রশংসনীয়। জ্ঞানতত্ত্বীয় দৃষ্টিকোণে লুবলুর পৃথিবী কমিকস হিসেবে একটি মাধ্যম কেবল। এটি যা বলতে চাচ্ছে তা ভিজ্যুয়াল আর্ট ফর্মে বললেও আমরা যা জানতে সক্ষম হবো, তা যদি কেবল কাগজে লেখা থাকে তাহলেও আমরা একই বিষয় জানতে সক্ষম হবো। শুধুমাত্র কমিকস হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে বলে এটিকে আদতে ছোট করে দেখবার কোনো সুযোগ নেই।

লুবলুর পৃথিবী কমিকস শুরু হচ্ছে লুবলুর স্বপ্নের মধ্য দিয়ে— যেখানে লেখক রূপক অর্থে “ভ্রান্তির চশমা”-র আড়ালে পরিবেশন করছে ঠিক যে সময়ে আমরা এই পৃথিবীতে বসবাস করছি, সেই চিরচেনা পৃথিবীর কিছু “সহজাত সমস্যা” যা সম্পর্কে আমরা অবগত থাকার পরেও কিছুই করছি না। যেমন: প্লাস্টিক সমস্যা, পৃথিবীর বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে ওঠা, পুঁজিবাদী সমাজের অর্থনৈতিক সমস্যা, ইত্যাদি। আবার, ঠিক পরের মুহূর্তেই যখন লুবলু প্রশ্ন তুলছে, “পৃথিবীটা কি সত্যি আছে না সবই মায়া?”— তখন থেকেই শুরু হচ্ছে লুবলুর অন্বেষণ। লুবলু এই অন্বেষনের একটি সমাপ্তিতে পৌছতে চায়, কিন্তু কোথাও এক জায়গায় এসে এই চরিত্র আমাদের প্রুফ্রকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আর আমরাও মেনে নিই লুবলুর বিভ্রান্তি। কারণ, এই পুরো ভ্রমণে লুবলুর প্রশ্ন, অন্বেষণ আর উত্তরের ব্যবধানে সূক্ষ্ম অবস্থান নিচ্ছে দ্বিধা। যা পাঠককেও নাড়িয়ে দিচ্ছে জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গির কাঠামোগত বিনির্মাণে।

Comments

    Please login to post comment. Login