পোস্টস

ভ্রমণ

আবার দেখে এলাম রাজশাহী

২ জুন ২০২৪

সাজিদ রহমান

মূল লেখক সাজিদ রহমান

 

গতকাল (০১ জুন ২০২৪)রাত ২ টা। রংপুর শহর ঘুমিয়ে পড়েছে। মেইন রোডের বিজলি বাতি, বাঁশ ও বাঁশরি হাতে প্রহরী আর বেশ কিছু কুকুর ছাড়া। একে একে সফর সঙ্গীরা ঘরের দুয়ারে নেমে পড়েন। এর সাথেই ২ দিনের যাত্রাও শেষ হয়। 

 

আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম পদ্মার পাঁড় থেকে। আমি ও ফিরোজ কোয়ার্টার ফাইনালে যশোরের কাছে হেরে যাই। ৬-৮ গেমে। অন্য ৩ দলের খেলা আগেই শেষ হয়েছে। আমরা ৮ জন মানুষ। রাতে ছিলাম ভিন্ন ৪ জায়গায়। লোটাকম্বল গুটিয়ে নিয়ে চলে যাই পদ্মার পাড়ে। উন্মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে হেটে নেমে যাই। পদ্মার পানি না ছোঁয়া পর্যন্ত থামিনা। শুক্রবার বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। শত শত মানুষের হল্লা। পদ্মার চরে মানুষের মেলা বসেছে। এখন পদ্মায় তেমন কিছুই নেই, হাঁটুজল ছাড়া। তবু পদ্মা নদী, পদ্মার পাড় নামটাই হাজারো মানুষকে এখানে ডেকে আনে। বেশ দেরি হয়ে গেছে। খানিক সময় পাই আমরা। মোবাইলে গান শুনি। সবাই মিলে ছবি তুলি। আলো পুরাপুরি নিভে যাবার আগেই ফেরার জন্য হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা চলতে থাকে। 

 

উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠান চলছে। পাশে গরম গরম পাঁপড় কিনে খেতে শুরু করি। ছোটবেলার অনেক জিনিসই আর ভালো লাগেনা। কিন্তু পাঁপড়ের আবেদন এতটুকু কমেনি। উপরে বাঁধের উপরে যে রাস্তা সেখানে নতুন করে ফুটপাত করা হয়েছে, নিচ দিয়ে আরেকটা। পাশেই নোঙ্গর নামে আলো ঝলমলে রেস্টুরেন্ট। সেখানে গিয়ে অভিভূত হলাম। কী দারুণ ল্যান্ডস্কেপিং, একদম আধুনিক, মানসম্মত। একপাশে ‘I LOVE RAJSHAHI’ লেখা, সেটাকে স্মৃতিবন্দি করছে অনেকেই। আমরাও সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলাম না। দেশের বাইরে অনেক শহরে এরকম সুভেনির প্লেসে ছবি তোলার সুযোগ হয়েছে। দেশে এই  প্রথমবার। জাতীয় ক্রিকেট দলের এক সময়ের ক্যাপ্টেন কাম উইকেটকিপার খালেদ মাসুদ পাইলটের এই নোঙ্গর। সেখানে পরোটা, কাবাব খেয়ে রংপুরের পথ মাপি।

 

গতকালের পথ ধরেই ফিরতে থাকি আমরা। রাজশাহী-নওগাঁ হাইওয়ে ধরে। নওগাঁয় চাকরি করার সুবাদে এই সড়ক ঘরের উঠোনের মত। নওহাটা, মোহনপুর, মান্দা, চৌমাশিয়া হয়ে নওগাঁ বাইপাস ধরে বগুড়ার দিকে আমাদের গাড়ি এগিয়ে যেতে থাকে। রাস্তায় চলতে থাকা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় আশপাশের এলাকাজুড়ে উজ্জ্বলতা ছড়ায়। নওগাঁর স্মৃতিও সতেজ হতে থাকে। 

 

গতকাল নওগাঁয় লাঞ্চ করি আমরা। সড়ক বিভাগের পরিদর্শন বাংলোয়। একসময় এখানে অনেক মানুষকে মেহমান হিসেবে পেয়েছি। আজ আমি নিজে মেহমান। প্রায় ১৪ মাস পর নওগাঁয় আবার পা দিয়েছি। এর আগের আড়াই বছর এই নওগাঁর অলিতে গলিতে, রাজপথের ধূলিকণায় অনেক স্মৃতির উপাদান রয়ে গেছে। সেই স্মৃতিগুলো ধুলোয় মিশে যাওয়ার আগে নওগাঁর সাথে এই মোলাকাত খুব দরকার ছিল। সাক্ষাতের জন্য মনোযোগ ছিল পরীক্ষার আগের রাতের সিলেবাস রিভিশন দেয়ার মতই। অলিন্দ নিলয় থেকে ধমনি হয়ে শিরা, উপশিরা পর্যন্ত রক্তের জোরগতি ভুলে যাওয়ার ব্লককে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে।

 

৩ জন মানুষের নাম বলা খুব দরকার। যাদের স্নেহ ভালোবাসা তখনও পরিমাপ করা যায়নি, এখনও নয়। কবি, সংগঠক ও পুনশ্চের সম্পাদক রবু শেঠ। কবি তামিম মাহমুদ সিদ্দিক ও আব্দুল্লাহ আল রাফি সরোজ। আমার যে ক্ষুদ্র লেখক স্বত্ত্বা, তার মেজাজ, মনন, গঠনে এই তিন জনের অবদান অনস্বীকার্য। এই নশ্বর পৃথিবীতে, স্বার্থপর দুনিয়ায় কিছু মানুষ থাকে যারা নিঃস্বার্থভাবে মানুষকে ভালবেসে যেতে পারেন। অনেক দিন পর আবার তাদের সাথে কিছু সময় কাটাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। বারবার দেখা হোক, সেই প্রত্যাশা রাখি। স্নেহের ছোটভাই রবিউর রফিকের নামটাও ভালবেসে নিতে চাই।

 

আমার ভ্রমণ সঙ্গীদের মাঝে আলাদাভাবে একজনের কথা না বললেই নয়। তিনি ওমর ফারুক স্যার। ইংরেজি সাহিত্যের মানুষ। অসাধারণ হিউমার সেন্স , মন ও মননে পরিষ্কার, সাহিত্যে অকপট দখল মুগ্ধজাগানিয়া।

 

‘যাত্রা পথকে উপভোগ করো কেননা গন্তব্য হল এক প্রকার মরিচীকা’, স্টিভেন ফুরটিকের এই চিরন্তন বাণী খুব করে মনে আসে। বরাবর ঈদের দিনের চেয়ে চাঁদরাতটাই বেশি উপভোগ্য মনে হয়।

 

আরও একটা বিষয় এসে যোগ দেয়। একই রাতে রাজশাহী ও দেশের অন্য যেকোন শহরকে দেখার অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতায় অনেক কষ্ট আছে। রাজশাহীর অপার সৌন্দর্য মেখে যে যাত্রা শুরু করেছিলাম, রংপুরে ঢুকতেই তা বর্নহীন হতে থাকে।

 

টেনিস খেলার উছিলায় রাজশাহী ভ্রমণ ছিল বেশ উপভোগ্য। বাড়তি বোনাস যোগ করেছে জার্নির আনন্দটুকু।