“ন হে সর্ববিদ সর্বে”
এই লাইনটি প্রথম পেয়েছিলাম হুমায়ূন আহমেদের লেখায়। উনার নিজের লেখা না। উনি পেয়েছিলেন আরেকজনের লেখায়। সেই লেখাটাও মূল আকর্ষণ না। মূল আকর্ষণ ঐ লেখার লেখকের উপর।
নন্দিত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ অনেক উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এমনই এক লেখা নিয়ে আমি প্রতিনিয়ত ধন্দে পড়ে যাই। কেননা ফিকশনের যেরকম কাল্পনিক বর্ণনা থাকে এই লেখায় সেটির ব্যতিক্রম । এখানে হুমায়ূন আহমেদের নিজ বাড়ি নুহাশ পল্লীর উল্লেখ আছে, তার মৃত ছেলের ব্যাপারে উল্লেখ আছে।
ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদ পড়াশোনায় তুখোড় ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের রেকমেন্ডেশন লেটারে ছিল ঢাবির রসায়ন বিভাগের অন্যতম সেরা একজন ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সেই হুমায়ূন আহমেদ ভূত প্রেতে বিশ্বাস করতেন না। বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করায় তার কাছে সকল বিষয়ে কোনো না কোনো যুক্তি দাঁড়িয়ে যেত। সেই হুমায়ূন আহমেদ খোদ মাল্টি ডাইমেনশনের এক জগতের কথা বলেছেন। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং।
“ন হে সর্ববিদ সর্বে” এই লেখা যিনি লিখেছিলেন তার বর্ননা ছিল মারাত্মক। ঐ লেখকের ভাষ্যমতে তিনি ভিন্ন মাত্রার এক জগতে প্রবেশ করেছিলেন। ইহজগতে তার বাবা এক অত্যাচারী। কিন্তু আরেক জগতে তার বাবা ভালো। এই ভালো ব্যাপারটায় সব সমস্যা চুকে যেত যদিনা সেই জগতে তার মায়ের জগত বদলে যেত। সেই জগতে তার মা একজন দাসী। আর ইহজগতে যে দাসী সে জগতে সে তার মা।
ব্যাপারটা হূমায়ুন আহমদকে অভিভূত করে। তিনি সেই লোকটিকে তার নিজ বাড়ি নুহাশ পল্লীতে রেখে দেন। রেখে দেন বলা ভূল হবে, তিনি রীতিমতো তাকে কোনো এক মানসিক ক্লিনিক থেকে উদ্ধার করেন।
আমাদের ঘটনা হয়তো এখানেই শেষ হয়ে যেতো। কোনো এক শিক্ষকের জন্য মায়া দেখিয়ে হুমায়ূন আহমেদ নূহাশ পল্লীতে তাকে রাখেন এই ব্যাপারটা আমরা ধরে নিতাম।
কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ কোনো একদিন আবিস্কার করেন তিনি তার মৃত ছেলের সাথে কথা বলছেন। আধো স্বপ্ন আধো জাগো অব্স্থায় এই বিষয় তিনি প্রত্যক্ষ করেন। মৃত কেউ ইহজগতে আর ফেরে না, জগতে এটাই নিয়তি। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ যে দৃশ্য দেখেছেন সেটির হুবহু বর্ননা দেয় ঐ লেখক। শুনে হুমায়ূন আহমেদ উল্লাস ভোগ করেন। অন্তত কোনো এক জগতে তিনি তার নিজের ছেলের সাথে আছেন।
এই যে আমাদের চাওয়া পাওয়া, কারো প্রতি ভালোবাসা কিংবা তাদের হারানোর পরে কোনো শোকে কাতর হয়ে পড়ি। আমাদের কাল্পনিক জগতে কত রঙিন জিনিসেরই না চিন্তা করি। যেন ইহজগতের বাস্তববিক সত্য থেকে পালানোর অবিরাম চেষ্টা। মাল্টি ডাইমেনশন কি আসলেই এক্সিস্ট করে? আমাদের চাওয়া পাওয়া কি আরেক জগতে পূরন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তর কখনো জানা যাবে না। হয়তো বা মাল্টি ডাইমেনশন ধারনাটাই হাস্যকরভাবে কাল্পনিক। কিংবা কে জানে আমরা পাশাপাশি আরেক জগতেও বাস করে। যেখানে আমাদের ইচ্ছা পূরণ ঘটেছে। কেননা নহে সর্ববিদ সর্বে। সবাই সবকিছু জানে না…