পোস্টস

বিশ্ব সাহিত্য

সিদ্ধার্থ শুধু একটি বই নয় একটি জীবন দর্শন

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন

মূল লেখক আশরাফুল ইসলাম স্বাধীন

অনুবাদক স্বাধীন

সিদ্ধার্থ নামটা সামনে আসলে বোঝাই যায় না বইটি আসলে কি নিয়ে লেখা। 
এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস।আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্বে যখন বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব ঘটে তখনকার আমল কে কল্পনা করে লেখা হয়েছে। লিখেছেন হেরমান হেসে

এই উপন্যাসের চরিত্রগুলো খুব সহজ সরল এবং বইটির গল্পও খুব সহজ সরল ভাবে দাম্ভিকতা নিয়ে এগিয়ে যায়।

এদের মধ্যে প্রধান ও অন্যতম চরিত্র, পাচটি। যথা-
সিদ্ধার্থ, তার বন্ধু গোবিন্দ, মাঝি বাসুদেব, এবং কমলা ও গৌতম বৌদ্ধ। 

এবার আসা যাক বইয়ের গল্পে।

সিদ্ধার্থ খুবই নম্রভদ্র এবং জ্ঞ্যানী পুরুষ সাথে তার ছোটো বেলার বন্ধু গোবিন্দও। গোবিন্দের সাথে খুব ভালো ও গভীর বন্ধুত্ব। তারা একসাথে জ্ঞ্যান আহোরন করতো এবং ধ্যান করতো। নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট ভাবে।  ধ্যান করতে করতে সিদ্ধার্থ ভাবলো এভাবে আর হচ্ছে না, তার আরো জ্ঞ্যন চাই,এই জ্ঞ্যানের পিপাসা মিটানোর জন্যে বনবাসে যাবার দরকার। ফলে গ্রামে ভিক্ষা করতে আসা সন্নাসীদের দেখে তারও সন্নাসী হবার বাসনা হয়। বাবার কাছে অনুমতি চাইলেন সিদ্ধার্থ, কিন্তু অনুমতি দিলেন না।বাবা খুব কঠোর। তবুও সিদ্ধার্থতার বাবাকে বাধ্য করলো অনুমতি দিতে। সিদ্ধার্থ বেরিয়ে গেলো জ্ঞ্যন পিপাসা মিটাতে। সিদ্ধার্থের নতুন সন্ন্যাসী জীবন শুরু।

সিদ্ধার্থ বনে যাবার পর শুনতে পায় বৌদ্ধ নামের একজন মানুষ নগরীতে এসেছেন৷ সুন্দর পরামর্শ দেন জীবন,সমাজ, সংসার বিষয়ে। গোবিন্দের মনে হল বৌদ্ধের দর্শন করা দরকার। কিন্তু সিদ্ধার্থ এ বিষয়ে উদাসীন। তবুও গোবিন্দ তার বন্ধুকে নিয়ে যায় গৌতমের কাছে। গৌতমের সাথে দেখা হয় তাদের। সিদ্ধার্থ সব কিছু নিয়ে গৌতমের সাথে বিতর্ক করে। সেখান থেকেই আলাদা হয়ে যায় বহু দিনের এই অন্তরঙ্গতার বন্ধুত্ব।আলাদা হয়ে যায় গোবিন্দ আর সিদ্ধার্থ। কেন আলাদা হলো? এর জন্যেই পড়তে হবে বইটি।

সিদ্ধার্থ চলছে একলা,খুজে বেড়াচ্ছে তার অস্তিত্ব,চলতে চলতে তার দেখা হয় নদী পারের এক সুদিপ্ত ঐশ্বর্য্যবান সুন্দরী নারীর সাথে, নারী তাকে আমন্ত্রন জানায়, তবুও সিদ্ধার্থ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে। চলে যায় নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।নগরীর মধ্যে ঘুরে বেড়ায় সিদ্ধার্থ। নগরীতে ঘুরতে ঘুরতে দেখা পায় কমলার, যিনি সবচেয়ে সুন্দরী এই নগরীর। সিদ্ধার্থ সেই কমলার প্রেমে পরে, একজন সন্যাসী হয়ে কমলার প্রেমে কি স্বার্থক হয়? হ্যা হয়। 

সিদ্ধার্থ সন্যাসী থেকে হয়ে ঊঠে সংসারি,সিদ্ধার্থ ব্যাবসায় মনোযোগ দেয়। ধনদৌলতের মালিক হয়। সন্নাসীর জীবন থেকে সম্পূর্ন রুপে বেরিয়ে আসে সিদ্ধার্থ। সিদ্ধার্থ জন্ম দেয় কমলার ঘরে তার পুত্র, কিন্তু পুত্র জন্ম হয়ে আর তার বাবাকে দেখে না। কমলাকে ছেড়ে চলে যায় সন্ন্যাস ব্রতে সিদ্ধার্থ।
কমলার কি হলো? কিছুকাল কমলাও বেছে নেয় সন্ন্যা জিবন,বেছে নেয় গৌতমের অনুসারি হতে।

সিদ্ধার্থ চলতে চলতে দেখা হয় নদীর মাঝি বাসুদেব এর সাথে। যার থেকে সে শিক্ষা গ্রহন করে জীবন সম্পর্কে। নৌকার মাঝির সাথে জীবন চালায় সিদ্ধার্থ।বৃদ্ধ হয়। বহুদিন পর কমলা  যাচ্ছে গৌতম দর্শনে। সিদ্ধার্থের কুটিরে আসতেই কমলার মৃত্যু। এবার ছেলে তার বাবাকে করছে ঘৃণা,অপমান, লাঞ্চিত। কেন করছে এমন আচরন?  পাবেন বইয়ের পাতার মাঝে। 

ছেলে কি বাবার থেকে প্রতিশোধ নিবে? বাবার পরিচয় জানতে পেরেছে?
বাসুদেব? তিনি কি বাবা আর ছেলের এসব বিষয়ে আছেন? না-কি বাসুদেব হারিয়েছেন কালের সেই চিরচেনা নিয়মে?

সিদ্ধার্থ কি তার সিদ্ধি লাভ করতে পারে? না-কি ছেলের হাতেই..........!

চলুন ঘুরে আসা যাক আংশিক সত্য সেই আড়াই হাজার বছর আগে এক মহান জ্ঞ্যানীর সাথে। ঘুরে আসা যাক সন্নাসী হয়ে। বন জঙ্গল থেকে নিজেদের দেখে আসি সিদ্ধার্থের চোখ দিয়ে। বিচার করে আসি  নিজের অস্ত্বিত্বের। 

বিঃদ্রঃ বইটি সত্য ইতিহাস নিয়ে লেখা। গৌতম আবির্ভাবের সময় একমাত্র গৌতমের বিরুদ্ধে এই সিদ্ধার্থ গিয়েছিলো। পরবর্তিতে শোনা যায় গৌতম মৃত্যু গ্রহন করলে এই সিদ্ধার্থ ই গৌতমের আসনে বসেন। 

এই বইয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে  সবচেয়ে দামি কথা এটিই ❝ জ্ঞ্যান কাউকে কোনভাবেই দেয়া যায় না❞। 

বইঃ সিদ্ধার্থ
লেখাঃ হেরমাস হেসে
অনুবাদকঃ তানিম নওশাদ।
প্রকাশনিঃ ঐতিহ্য। 
মুদ্রিত মুল্যঃ ২১০ টাকা ।