লিমু—মুহাম্মদ লিটন ইসলাম
লিমু উত্তরের এক প্রান্ত থেকে উঠে আসা সাদা-মাটা ছেলে। সবে মাত্র ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে উঠেছে। নতুন কলেজে নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধব। লিমু একটু রসিক টাইপের ছেলে; সবার সাথেই রসিকতা করে। তবে মেয়েদের ব্যাপারে সেনসিটিভ—মেয়েদের ধারের কাছেও যায় না, দুই একজন সেই ছোট্ট বেলার মেয়ে-বন্ধী ছাড়া কোনো মেয়ের সাথে কথা বলে না।
মঙ্গলবার, লিমু তার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রাক্টিকাল খাতা গুছিয়ে রেখেছে ব্যাগে। সে ক্লাসে পৌঁছেছে ঠিক সকাল ৯টা ১৩ মিনিটে। অন্যদিকে তার ছোট্ট বেলার বান্ধবী মৌমিতাও কলেজে উঠেই বেস্ট ফ্রেন্ড বানিয়েছে অনামিকা নামের এক মেয়েকে। কখনো সে লিমুর সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেয় নাই।
সেদিন কলেজে আসার পথে হাঁটতে হাঁটতে অনামিকা মৌমিতাকে বলল—
—“এই, আমার তো প্রাক্টিকাল করা হয় নাই। তোর খাতা কই?”
—“আরে, এত টেনশন নিস না। আমার গুরুজি পন্ডিত লিমু দাস আছে, নি সমস্যা নেই আমার।”
—“কেন! সে কি তোকে লিখে দিবে নাকি?”
—“কি যে বলিস তুই! ও আর আমি সেই পুচকুকাল থেকেই একসাথে বড় হয়েছি, এক থালায় খেয়েছি। ওকে বললে ও কখনোই আমাকে মানা করবে না। তবে অন্য কোনো মেয়ে চাইলে কখনোই দিবে না।”
—“বাপ রে! এ কেমন ছেলেরে বাবা? ও কি তোকে পছন্দ নাকি রে?”

—“আরে, ঐ রকম কিছু না! আমাদের মাঝে আয়নিক-সমযোজী বন্ধনের মতো গড়ে উঠেছে। ও আমাকে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও শ্রদ্ধা করে, আমিও তাই করি—বা করার চেষ্টা করি।”
—“তোদের বাপু সম্পর্ক যে কি, আল্লাহ মালুম! আমি কিছুই বুঝতেছি নে!”
—“যাক গ্যা, চল ওর কাছে যাই। এতক্ষণে ও ক্লাসে বসে বায়োলজি পড়তেছে।”
—“চল যাই।”
—“তবে ওখান থেকে একটু দূরে থাকিস! ও আমি ছাড়া মেয়েদের নিকটবর্তী হয় না কিন্তু!”
—“আচ্ছা রে বাবা, চল।”
অনামিকা আর মৌমিতা ক্লাসে এসেই দেখে লিমু সত্যিই বায়োলজি বই পড়ছে। এটা দেখে মনে হতে পারে, লিমুর বায়োলজির প্রতি ভালোবাসা অঢেল। কিন্তু আসল সত্য তা না—বায়োলজির প্রতি ক্ষোভ, রাগ, অভিমানে সে বায়োলজি বেশি বেশি পড়ে। কারণ তার এসএসসিতে বায়োলজি একটু খারাপ হয়েছিল; ফলস্বরূপ তার মায়ের কাছ থেকে এত বকুনি খেয়েছে যা জীবনে কখনো খায় নাই।
ক্লাসে এসেই মৌমিতা বলল—
—“কীরে লিমু, এখন পড়িস?”
—“কি আর করবো বল! তোর কি অবস্থা?”
—“আর বলিস না। প্রাক্টিকালের প্রায় আছি আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অনামিকা। পরিচয় হ, এ হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অনামিকা। সে নতুন আসছে আমাদের মতোই।”
লিমু চুপ করে আছে, কোনো উত্তর নেই।
মৌমিতা—“কিরে লিমু, কোনো কথা নাই? এটা কিন্তু ঠিক না।”
অনামিকা—“এইটা কোনো নাম হলো লিমু! এটা তো মেয়েদের না! আপনার অন্য কোনো ভালো নাম নেই?”
এবার লিমু একটু লজ্জিত হলো। নাম নিয়ে খোটা সহ্য করতে পারল না, তাই চুপটি করে উত্তর দিল—
—“আছে! মুহাম্মদ ফাহাদ ইবনে মাহফুজ।”
নাম শুনেই অনামিকা এমন মধুর ভাবে বলল, যা শুনেই যেন মনে হচ্ছে শরীর থেকে রিলেক্সিন হরমোন ক্ষরণ হচ্ছে—
—“এত সুমধুর সুন্দর নাম! যেন বসন্তের বাতাস বইছে এই নামের মোহনা। এই নাম রেখে লিমু!!”
লিমু এবার কথা ঘুরিয়ে মৌমিতাকে বলল—
—“কি বলবি, বল।”
—“ভাই আমার, একটু কষ্ট করে আমাদের প্রাক্টিকালগুলো লিখে দে না প্লিজ! সোনা ভাই!”
—“আচ্ছা, ঠিক আছে। শুধু, তোর টা দিবো নে।”
—“অনামিকারটা দিবি না?”
—“না! তোর বেস্ট ফ্রেন্ড, তুই লিখে দে। আমি পারবো না।”
এদিকে ভাব দেখিয়ে গোপনে গোপনে লিমুর মনের ক্ষরা পূর্ণ বনে জীবনের সঞ্চার ঘটেছে! কিন্তু সে কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না।
সে মৌমিতাকে বলল—
—“এই নে, আমার খাতা। তুই উনারটা করে দিস। আমি তোরটা বই দেখে করে দিবো নে। তবে কথা দে, এর জন্য কিন্তু আমি যা চাইবো, তাই দিবি!”
মৌমিতা জানে লিমুর চাও এগুলো সেরকম কিছু না। এই কোথাও ঘুরতে যাওয়া বা কিছু খাওয়ানো বা তার হাতের রান্না। তাই মৌমিতাও রাজি হলো।
—“ওকে বস, রাজি! ডিল ডান।”
লিমু যে কি জন্য শর্ত দিয়েছে, আর কি শর্ত দিয়েছে—এবার মৌমিতা বুঝে উঠতে পারল না।
চলবে…