Posts

পোস্ট

হিজলের দেশে শৈশব রঙিন

September 27, 2023

মুয়ায আবদুল্লাহ

Original Author মুয়ায আবদুল্লাহ

যেই দিন যায়—সবটুকু স্মৃতি-সুখ নিয়েই বুঝি যায়। জেগে থাকে গত হওয়া বসন্তের শীর্ণ একটি রেখা। সেই বসন্তে খুব বেশি ফুল ফুটে না বাগানে, নতুন পাতারাও গাছে সংসার পাতে না। কেবল বকুলের সৌরভ ঘিরে রাখে পুব থেকে উত্তরের বাতাস। সেই আলুথালু বাতাসের ঝাপটায় কারও কিশোর মন দুলে ওঠে। মেঠো পল্লির বনজ গন্ধের অধিকার বসত গাড়লে বুকে—কেমন ঘুম ঘুম অনুভূতি মস্তিষ্ক ছেয়ে ফেলে। যেনো বহু কালের অঘুমা চোখ—ঝি ঝি ডাকা সন্ধ্যার আলে ঘুমিয়ে পড়বে এখনই। ফুলংগার বিলের শিথানে আজ কী প্রশান্তি! অরণ্য মথিত হাওয়া। এমন রূপকথার সন্ধ্যাটা উতরে গেলে মায়ের হাহাকার—বুকের মানিক আমার না খেয়েই ঘুমিয়ে গেলো।
২.
তখন গাঢ় শীতের মৌসুম। ঘাসপাতার শরীর থেকে শিশির ফুরিয়ে যাবার আগেই কাঁচা রাস্তাটায় হেঁটে বেড়াতাম—চঞ্চল ফড়িঙের মতো। স'মিলের সীমানা ছুঁয়ে যে গভীর দীঘিটা ভরে থাকতো বিশাল কাঠ গাছ দিয়ে—তার পুব পাড়ে ছিল দুটি বয়স্ক হিজল গাছ। স্বর্ণরেণুর মতো দ্যুতি ছড়াতে থাকা তার ঈষৎ গোলাপি ফুল দিয়ে মালা গাঁথা ছিলো এক আয়েশি ব্যস্ততা। কারণ ফুলগুলো সংগ্রহ করা ছিলো বেশ কষ্টসাধ্য। প্রায় সকালেই যখন দেখতাম অজস্র হিজল ফুল দিঘির কালো জলে ভাসছে, ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছে আরও—কি বিষম দুঃখ হতো তখন!
৩.
ছিলো একটি হাসনাহেনা গাছ। মা বলতো সন্ধ্যা হলে সাপ আসে এদিকে। সত্যিই কিনা, এ নিয়ে এখন সন্দেহ থাকলেও কেমন ভয় ভয় করতো তখন। ঘড়ির কাঁটা বেয়ে রাত যখন ঘুমের আয়োজন করতো, বাতি নিভিয়ে দিয়ে মা যখন ঘুমের দোয়া পড়াতো আমায়—গহন অন্ধকারেও চোখে ভাসতে থাকতো শাদা ফুলে ছেয়ে যাওয়া হাসনাহেনা গাছটি। একটা মন কেমন করা ঘ্রাণে—কিছুতেই ঘুম আসতে চাইতো না আমার। সেই অতৃপ্ত শৈশবেই হারিয়ে গিয়েছিলো সর্পগন্ধা। অথচ পুরনো ঘ্রাণটুকু আজও জিইয়ে রেখেছি আলগোছে। পাছে না আবার স্মৃতিটুকুও খুইয়ে ফেলি অসহায় যান্ত্রিকতায়।

Comments

    Please login to post comment. Login