Posts

গল্প

হেরা - নারী ও বিবাহের দেবী

June 3, 2024

জিসান আকরাম

Original Author জিসান আকরাম

হেরা গ্রিক পুরাণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।। টাইটান জাতির রাজা ক্রোনাসের ঔরসে এবং রিয়ার গর্ভজাত তৃতীয় সন্তান। রোমক পুরাণে হেরাকে জুনো বলা হয়।ইনি নারী ও বিবাহের দেবী।

গ্রিক পৌরাণিক কাহিনী মতে,–জিউস যুদ্ধে ক্রোনাসের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে দেবরাজ্য দখল করে তাঁর রাজ্যের অধিকার ও আধিপত্য নিয়ে ব্যস্ত পড়লে, হেরা ক্রিটের ক্নোসাসে চলে আসেন। 
               জিউসের সাথে হেরার দেখা হওয়ার পর, জিউস তাঁকে প্রেম নিবেদন করেন। কোনো কোনো মতে এদেঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল আর্গোলিসের থরমাক্স পর্বতে (বর্তমানে এর নাম কাক্কু)। এখানেই জিউস তাঁকে প্রেম নিবেদন করেন এবং প্রথমে হেরার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

     কিন্তু জিউসের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় ইনি তাঁকে বিবাহ করতে সম্মত হন। এই বিবাহে অন্যান্য দেবতারা প্রচুর উপহার দেন। বিবাহের পর উভয়ই মধুচন্দ্রিমা কাটান সামোসে।

এই সময় হেরা আর্গসের নিকটস্থ ক্যানাথাস ঝর্ণায় প্রতিদিন স্নান করতেন। এর ফলে রাত্রিতে জিউসের সাথে মিলিত হওয়ার পর, হেরা তাঁর হারানো কুমারীত্ব ফিরে পেতেন। কথিত আছে, এখানে এঁরা এখানে এঁরা তিনশত বৎ্সর কাটান।

এই বিবাহের ফলে, হেরা স্বর্গের রাণীর পদ লাভ করেন। এই জন্য তাঁকে স্বর্গের রানী নামে গ্রিক পুরাণে অভিহিত করা হয়েছে।

        বিবাহের সময় গেইয়া তাঁকে এরকটি স্বর্ণ-আপেলর গাছ দিয়েছিলেন। এই গাছটি এই গাছটি আটলাস পাহাড়ের উপর ইনি রোপন করেন এবং এর পাহারার ভার দেন হেসপেরিডেস-এর উপর।

জিউসের ঔরসে তিনজন দেব-দেবীর জন্ম হয়। এরা হলেন- এ্যারিজ, হিফ্যাস্টস ও হেবে ।

কারো কারো মতে- হেরা একবার একটি দৈব ফুল স্পর্শ করার পর গর্ভবতী হন এবং এ্যারেস এবং এর জমজ বোন এরিসএর জন্ম দেন। একইভাবে লেটুস গাছ স্পর্শ করার ফলে হেবে জন্মলাভ করেন। একইভাবে জন্মগ্রহণ করেছিল- হিফাস্টাসও।


জিউস বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। ফলে জিউসের উপর তিনি নজরদারী করতেন। জিউসের এই প্রেম-ঘটিত বিষয়ের সাথে জড়িত নারীদের ইনি কঠোর শাস্তি দিতেন। এর মধ্যে রয়েছেন- ইনাকাসের কন্যা আইও, এ্যাপোলোর মা লিটো, ক্যালিসটো ইত্যাদি। এছাড়া জিউসের সন্তান হার্কিউলেসও তাঁর মায়ের কারণে হেরার প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন।

         একবার জিউসের গর্ব ও ধৃষ্টতা অসহ্য হওয়াতে হেরা, পসেইডন, এ্যাপোলো অন্যান্য অলিম্পিয়ার অধিবাসীরা ঘুমন্ত জিউসকে বন্দী করেন। তারা চামড়ার পাতলা ফিতা দিয়ে ১০০টি গিট্টুতে তাঁকে বেঁধে রাখেন। এরপর দেবতারা একটি ভোজ-উৎসবের আয়োজন করেন। এই উৎসবে, জিউসকে বন্দী করার ক্ষেত্রে কার কতটুকু অবদান রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখন থেটিস জিউসকে মুক্ত করে দেন।


       এরপর জিউস হেরার স্বর্ণ-কটিবন্ধ ধরে আকাশে ঝুলিয়ে রাখেন। এই সময় হেরা আর্তনাদ করতে থাকেন। এরপর অন্যান্য দেবতারা হেরাকে ক্ষমা করার জন্য অনুরোধ করেন। শর্ত সাপেক্ষে জিউস ক্ষমা করে দেন। শর্তটি ছিল, ভবিষ্যতে তিনি জিউসের বিরুদ্ধে কোনদিন বিদ্রোহ করতে পারবেন না।

গ্রিক পুরাণে বর্ণিত বিখ্যাত ট্রয় যুদ্ধের পিছনে ইনি জড়িত ছিলেন। একবার এথিনা, হেরা ও এ্যাফ্রোডাইটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে প্যারিসের কাছে উপস্থিত হলে, প্যারিস এ্যাফ্রোডাইটি সর্বশ্রেষ্ঠা সুন্দরী ঘোষণা করেন। এরপর ইনি প্যারিসের উপর খুশি হয়ে- পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুন্দরী হেলেনেকে উপহার দেন এবং প্যারিস কর্তৃক হেলেনের অপহরণে সাহায্য করলে ট্রয়যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এই কারণে, হিরা ও এথিনা ট্রয় যুদ্ধে গ্রীকদের সহায়তা করেছিলেন।

     জিউস কোনো নারী ছাড়াই জন্ম দিয়েছিলেন প্যালাস এথেনেকে। বিষয়টি হেরার নারী ব্যক্তিত্বে আঘাত হানে। এই কারণে তিনি পুরুষ সঙ্গ ছাড়াই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এই পুত্রটি হলেন হেফ্যাস্টাস।

   জন্ম দেওয়ার পর দেখলেন, হেফ্যাস্টাস অত্যন্ত খোঁড়া এবং কুৎসিৎ হয়েছে। এই কারণে তিন এই সন্তানকে অলিম্পাস থেকে নিক্ষেপ করেন। এই সময় ওসিনিড ইউরিনোমে এবং নেরেইড থেটিস হেফ্যাস্টাসকে লুফে নেন। পরে তাঁকে লেমনোস দ্বীপে প্রতিপালন করেন।

Comments

    Please login to post comment. Login