Posts

গল্প

অবধারিত

October 16, 2025

Kankita Dev

27
View

বৃষ্টি ঝরে সকাল থেকে। শহরের রাস্তাগুলো ভিজে আছে, কিন্তু টিয়ার মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা। আজকের দিনটা তার জীবনের জন্য বিশেষ—আজ সে রাহুলকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


 

টিয়া, ২১ বছরের, মিষ্টি স্বভাবের, তবে নিজের অনুভূতি প্রকাশে কিছুটা লাজুক। রাহুল, ২২ বছরের, বুদ্ধিমান, নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু অন্যদের প্রতি সদয়। আর শান্ত, ২০ বছরের, রাহুলের সবচেয়ে কাছের বন্ধু, কিন্তু টিয়ার প্রতি তার চুপচাপ ভালোবাসা লুকানো।


 

টিয়া বারবার নিজের হাত চেপে ধরে। “আজই হবে। আর একদিন দেরি করা যাবে না।” সে ভেতরে ভেতরে বলে।


 

স্কুলের শেষে রাহুলের সাথে দেখা হয় পার্কের মধ্যে। পাখির ডাক আর বাতাসের হালকা গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে আছে। টিয়া তার দম বন্ধ করে বলে, “রাহুল, আমি… আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।”


 

রাহুল হেসে বলে, “কি হলো, টিয়া? তুমি তো আজকাল অনেক চিন্তায় থাকতে দেখছি।”


 

টিয়া সাহস জোগায়, চোখে চোখ রেখে বলে, “আমি… আমি তোমাকে ভালোবাসি। রাহুল, তুমি কি আমার সঙ্গে… আচ্ছা, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করবে?”


 

রাহুল হঠাৎ চুপ হয়ে যায়। তার মুখে অদ্ভুত ভাব দেখা যায়, তবে সে কথা বলার আগে, টিয়ার আশা ভেঙে যায়।


 

“আমি… আমি সত্যি দুঃখিত, টিয়া। আমি তোমাকে সেই দৃষ্টিতে দেখিনি। তুমি খুব সুন্দর, কিন্তু আমি… আমি তোমার জন্য সেই অনুভূতি পাইনি।”


 

টিয়া অনুভব করে যেন সব ভেঙে গেছে। চোখের পানি গড়িয়ে আসে, কিন্তু সে চুপচাপ ফিরে আসে। “ঠিক আছে…” সে ফিসফিস করে বলে, আর সেখানে থেকে ছুটে চলে যায়।


 

দূরে, শান্ত, যিনি সব দেখছিলেন, দ্রুত এগিয়ে আসে। “টিয়া!” সে বলে, “তুমি ঠিক আছ?”


 

টিয়ার চোখে অশ্রু, তবে শান্তের উপস্থিতি কিছুটা শান্তি দেয়। “আমি ঠিক… শুধু কিছু সময় প্রয়োজন।”


 

সেই দিন থেকে শান্ত টিয়ার পাশে থাকে। প্রতিটি কথা শোনে, প্রতিটি দুঃখ বোঝে। টিয়া ধীরে ধীরে শান্তের প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং বিশ্বাস অনুভব করতে থাকে।


 

কয়েক সপ্তাহ পরে, শান্ত টিয়াকে একটি সুন্দর বাগানে নিয়ে যায়। সে সাহসীভাবে বলে, “টিয়া, আমি জানি তুমি রাহুলকে ভালোবাসো, কিন্তু আমি তোমাকে আমার ভালোবাসা দিতে চাই। তুমি কি আমার পাশে থাকতে চাও?”


 

টিয়া কিছুটা চমকে যায়। তার হৃদয় অবাক হলেও, সে শান্তকে ধন্যবাদ জানায় এবং কিছু সময় চায় নিজের মন বোঝার জন্য।


 

পরের দিন, রাহুল আবার তার কাছে আসে। সে টিয়ার চোখে সে আগের দিনকার দুঃখ নেই, বরং কৌতূহল এবং অনিশ্চয়তা। “টিয়া… আমি জানি আমি আগে ভুল করেছি। সত্যি কথা বলতে, আমি এখন তোমাকে অন্যভাবে ভাবছি। তুমি কি আমাকে একটি সুযোগ দেবে?”


 

টিয়ার মন হঠাৎ এক অদ্ভুত দ্বিধায় পড়ে যায়। তার মনে হয় যেন দু’টি পথ সামনে। সে ছুটে নিজের বাড়ি চলে যায়, কিছু বলার আগে।


 

বাড়িতে একা বসে, টিয়া নিজের কণ্ঠে অজান্তে গানটি গাইতে থাকে—

“বিধি তুমি বলে দাও আমি কার? দুটি মানুষ একটি মনের দাবিদার…”


 

টিয়া এখন প্রতিদিন নিজের মনকে বোঝার চেষ্টা করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা, সে রাহুল এবং শান্তের কথা মাথায় রেখে অচেতনভাবে ঘুরে বেড়ায়। কখনও মনে হয় রাহুলের সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ সুন্দর হতে পারে, আবার কখনও শান্তের পাশে থাকার সাহসিকতা এবং আন্তরিকতা তাকে টানছে।


 

শান্ত প্রতিদিন টিয়ার পাশে থাকে। স্কুলে, বাগানে, কিংবা কফি শপে—যেখানে যায় টিয়া, শান্ত থাকে পাশে। সে কখনও আগের মতো চাপ দেয় না, শুধুমাত্র সহানুভূতি দেখায়। “টিয়া, তুমি যে সময় চাও, আমি তা বুঝি,” শান্ত বলে।


 

একদিন সন্ধ্যায়, বাগানের বেঞ্চে বসে টিয়া শান্তকে প্রশ্ন করে:

“শান্ত, তুমি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসো?”

শান্ত হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, টিয়া। আমি তোমার দুঃখ, আনন্দ, সবকিছু ভাগ করতে চাই। শুধু তুমি চাইলে।”

টিয়া হালকা করে হাসে, কিন্তু ভেতরে দ্বিধা আরও বাড়ে।


 

একদিকে রাহুল। সে হঠাৎ করে টিয়ার সামনে আসে, এবং বলল, “টিয়া, আমি জানি আমি আগে তোমাকে ঠিক মতো বুঝিনি। কিন্তু এখন… আমি তোমাকে চাই। আমার অনুভূতি সত্য।”

টিয়ার মন হঠাৎ অশান্ত হয়। সে বুঝতে পারে, দুটি মানুষ—একই হৃদয় প্রার্থনা করছে।


 

শেষ পর্যন্ত টিয়া সিদ্ধান্ত নেয়, তার নিজের অনুভূতি বোঝার জন্য শান্ত এবং রাহুলকে ডাকার। সে একটি নির্দিষ্ট স্থানে—পুরনো বাগানের সেই বেঞ্চে—তাদের ডাকে।


 

সেখানে দুইজন এসে উপস্থিত হয়। টিয়া ধীরে ধীরে তাদের চোখে চোখ রেখে বলে,

“আমি আপনাদের দুজনের কাছে কিছু প্রশ্ন করতে চাই। সত্যি বলুন।”


 

প্রথম কিছু প্রশ্ন সাধারণ, কিন্তু ধীরে ধীরে টিয়া প্রশ্নগুলোকে গভীর করে।

রাহুল এবং শান্ত—দুজনেই সততার সঙ্গে উত্তর দেয়।


 

শেষ প্রশ্নে টিয়া এক গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে:

“আচ্ছা, বলো তো, আমি এখন কাকে কল্পনা করছি?”


 

রাহুল: “এটা কি ধরনের প্রশ্ন?”

টিয়া: “বল যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো।”


 

রাহুল কিছুটা হকচকিয়ে, “হয়তো তুমি ভাবছো তুমি আমাদের মধ্যে কাকে বেছে নেবে?”


 

টিয়া শান্তের দিকে তাকিয়ে হাসে, “আর শান্ত, তুমি?”


 

শান্ত: “হয়তো তুমি তোমার পছন্দের জায়গার কথা ভাবছো।”


 

টিয়া গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “ঠিক ধরেছো শান্ত। তুমি জিতে গেছো, আমি তোমাকেই বেছে নিলাম।”


 

শান্তের চোখে আনন্দের ঝলক, আর রাহুল কিছুটা বিষণ্ণ হলেও প্রশান্ত।

টিয়া শান্তের হাত ধরে বলে, “আমি চাই আমরা দু’জনে সত্যি সুখী থাকি।”


 

বাগানের চারপাশে হালকা হাওয়া বয়ে যায়। পাখির ডাক, পাতার শব্দ—সব কিছু যেন তাদের ভালোবাসার সাক্ষী।


 

শান্ত টিয়ার কাঁধে হাত রাখে। তারা দু’জনে হাসে, আর জানে—একটি মন দু’জনকে বাঁধতে পারলে, সব বাধা অতিক্রম করা যায়।

বাগানের সেই বিকেল। সূর্যের হালকা আলো গাছের পাতার মাঝে ঝলমল করছে। টিয়া, শান্ত, এবং রাহুল—তিনজনই একত্রে বসে আছে। বাগানের শান্ত পরিবেশে আকাশের নীলিমা মিশে আছে তাদের আবেগের সঙ্গে।


 

টিয়া এখন সম্পূর্ণ দৃঢ়। তার চোখে শান্তির ঝলক, হৃদয়ে স্থিরতা। সে ধীরে ধীরে বলে,

“আজ আমি আপনাদের দুজনকেই ডাকি, কারণ আমি জানি, আমি কাকে বেছে নিতে চাই। কিন্তু আমি চাই আপনারা দুজনেই সত্যিই আমাকে বোঝেন।”


 

রাহুল কিছুটা উত্তেজিত, শান্ত কিছুটা নার্ভাস। টিয়া তাদের প্রশ্ন করে—প্রথমে হালকা, পরে গভীর।


 

শেষ প্রশ্নে, টিয়া নিঃশ্বাস গহ্বর করে বলে:

“আচ্ছা, বলো তো, আমি এখন কাকে কল্পনা করছি?”


 

রাহুল: “এটা কি ধরনের প্রশ্ন?”


 

টিয়া হেসে বলল, “বল যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো।”


 

রাহুল কিছুটা দ্বিধায়, “হয়তো তুমি ভাবছো তুমি আমাদের মধ্যে কাকে বেছে নেবে?”


 

টিয়া শান্তের দিকে তাকিয়ে হাসল, “আর শান্ত, তুমি?”


 

শান্ত কিছুটা লাজুক, কিছুটা আশাবাদী, “হয়তো তুমি তোমার পছন্দের জায়গার কথা ভাবছো।”


 

টিয়া গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “ঠিক ধরেছো শান্ত। তুমি জিতে গেছো, আমি তোমাকেই বেছে নিলাম।”


 

শান্তের চোখে আনন্দের ঝলক। সে টিয়ার হাত ধরে ধীরে ধীরে বলল,

“টিয়া, আমি প্রতিজ্ঞা করি, তোমার সুখ, তোমার হাসি—সবকিছু আমার জীবনের অমূল্য সম্পদ হবে।”


 

রাহুল কিছুটা বিষণ্ণ, কিন্তু তার মুখে প্রশান্তি। সে জানে—যদি কেউ সত্যি সুখী হয়, তার জন্য এমন সিদ্ধান্ত শ্রেয়। সে শান্তকে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে কাঁধে হাত দেয়, “শুভ হয়েছে, শান্ত। তুমি সত্যিই টিয়ার জন্য সঠিক।”


 

টিয়া শান্তের কাঁধে মাথা রেখে বলে, “আমি চাই আমরা দু’জনে সত্যি সুখী থাকি। আর আমি জানি, এটি শুরু।”


 

বাগানের চারপাশে হালকা হাওয়া বইছে। পাখির কূজন আর পাতার হালকা শব্দ যেন তাদের ভালোবাসার সাক্ষী।

টিয়া অজান্তে আবারও গানটি গাইতে থাকে—

“বিধি তুমি বলে দাও আমি কার? দুটি মানুষ একটি মনের দাবিদার…”


 

শান্ত এবং টিয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে। তারা জানে—যদি হৃদয় এক হয়, সব বাধা অতিক্রম করা যায়।


 

সেই দিন থেকে তাদের সম্পর্ক নতুনভাবে শুরু হয়। ছোট ছোট মুহূর্তগুলো—হাঁটাহাঁটি, হাসি, একসাথে বই পড়া, গল্প করা—সবকিছুই তাদের বন্ধনকে আরও মজবুত করে।


 

গল্পের শেষ দৃশ্যে, রাহুল দূর থেকে তাদের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে। সে বুঝতে পারে—প্রেম কখনও জোরপূর্বক জয়লাভ করে না। এটি আসে সঠিক সময়ে, সঠিক মন দিয়ে।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kankita Dev 1 month ago

    আমি এই গল্পটি লিখেছি। আমার আসল নাম কাঙ্কিতা দেব। তবে লেখিকা হিসেবে আমি তিথি দেব হিসেবে পরিচিতি পেত চাই।