বুড়ো একটানা হেটে চলেছেন। দোকানে বসে থাকা কয়েকজন হাত উচিয়ে তাকে ইশারায় ডাকলো। তিনিও হাত নাড়লেন, কিন্তু দাড়ালেন না। ইদানীং কোথাও দাড়িয়ে থাকতে পারেন না। সব সময় তাকে বসে থাকতে হয়। তবে একটানা কিছুটা হাটতে পারেন। দোকানে বসতে গেলে ঝামেলা আছে৷ বাড়ির ছেলে-বুড়োরা দোকানে যাওয়া নিয়ে তার উপর বেজায় বিরক্ত। সবাই তার সাথে মুরুব্বিয়ানা দেখায়। যেন তিনি অবুঝ শিশু। সেদিন একটি গাড়ি তার পাশ দিয়ে গেছে, সামান্যর জন্য দুর্ঘটনা হয়নি। আসলে শরীরের আর সেই ব্যালেন্স নেই। ভাবতেই অবাক লাগে। একটা সময় বাড়িতে থাকা সবাই তার উপর নির্ভরশীল ছিল। সবাই তাকে বাঘের মতো ভয় পেত। তিনি সবার অভিভাবক ছিলেন। আর এই মুহুর্তে তিনি সবার কাছে একটা উটকো ঝামেলা। তার কথা শোনার মতো কারো কাছে সময় নেই। ভাবতে ভাবতে বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছেন বুড়ো৷ ছোটবেলায় যখন মন খারাপ হতো তখন এই পুকুরপাড়ে এসে সে বসে থাকতেন। এখানে বসে থেকে হয়ত তার মন ভালো হয়ে যেতনা। এখানকার নীরব-শান্ত পরিবেশ তার সাথে একাকার হয়ে যেত। কিছু সময়ের জন্য সে যেন এই পরিবেশের একটা অংশ হয়ে যেতেন। গাছের পাখিগুলোও নীরব হয়ে থাকতো৷ আজ আবার তিনু সেখানে এসেছেন। দুই পা আর কুলাচ্ছে না বলে বসে পড়লেন। এরপর ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক সেদিক খুজতে লাগলো। তারপর নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, "কাকে খুজছি আমি?"
উত্তর পেল নিজের ভেতরের কোথাও থেকে, "সেই শিশু বালকটিকে খুজছি। যে একটা সময় এখানে এসে একাকী বসে থাকতো।"
আবার প্রশ্ন করলো,"তাকে দিয়ে কি করবে?"
উত্তর এলো,"জানিনা। হয়ত তাকে এক পলক দেখবো।"
এরপর বলতে লাগলো, "তাকে বলবো যে, আরেকটিবার তার দেখা পাবার জন্যই আমি এখানে বারবার ছুটে আসি।"
বুড়োর চোখের দৃষ্টি দুর্বল হয়ে আসছে। এখন আর বেশি কিছু দেখতে পায়না। তার মন কেদে উঠলেও তিনি কখনো কাদেন না। ইদানীং রাতে একটু ভয়ও করে। অজানা এক ভয়।
আবার বলতে লাগলো,"আমি কি আর তার দেখা পাবো? সেই উদ্দাম যৌবন, সেই তারুন্য, সেই অবুঝ…। আমি একটিবারের জন্য নিজের মুখোমুখি দাঁড়াতে চাই। আমি কি তার দেখা পাবো? সেই সে অবুঝ শিশু?"
109
View