পাখা
জালাল উদ্দিন লস্কর
গত ক'দিন ধরেই রাবিয়ার মনটা ভাল যাচ্ছে না।মুখ ফুটে কিছু না বললেও রাবিয়ার মা জাহানারা বেগম মেয়ের মন খারাপের বিষয়টা ঠিকই বুঝতে পারেন।মায়ের মন বলেই হয়তো।রাবিয়াকে ভালো করেই চেনেন জাহানারা বেগম।চিনবেন নাইবা কেন।এতো কষ্ট করে ১০ মাস গর্ভে ধরেছেন। রাবিয়া এখন জেলা শহরের একটি কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে।হোস্টেলে থেকেই পড়াশুনা করে।খুব বেশী মেধাবী না হলেও লেখাপড়ায় বেশ মনযোগী।প্রচন্ড জেদী।
জাহানারা বেগমের মনে পড়ে যায় ২০ বছর আগের অনেক কথা।দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন জাহানারা।পিতা তমিজ উদ্দিনের অভাবের সংসার।তাই ইচ্ছা থাকলেও লেখাপড়া করানোর চিন্তা করেন নি।কোনোমতে একটা পাত্রস্থ করার চিন্তায় ছিলেন তমিজুদ্দিন। পাশের গ্রামের সামাদ আলীর ছেলে জয়নালকে মনেমনে পছন্দ হয় তমিজুদ্দিনের।সামাদ আলীও তেমন সচ্ছল নয়।কিন্তু জয়নালকে লেখাপড়া করাতে চেষ্টা করতে কম করেন নি।সংসারের শত কষ্টেও জয়নালের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে গেছেন।পরের বাড়ীতে কামলা খেটেছেন।জয়নালও লেখাপড়ায় ভালো।শিক্ষকদের সাথে দেখাটেখা হলে তারা সামাদ আলীকে বলতেন,চাচা মিয়া আপনার ছেলে একদিন অনেক নাম কামাবে।শুনে সামাদ আলীর বুকটা গর্বে ভরে উঠতো।মনে এক অন্য রকম পুলক অনুভব করতেন।জয়নাল সবাইকে অবাক করে দিয়ে এসএসসিতে চমকপ্রদ ফলাফল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।আহসানপুর স্কুল প্রতিষ্টার পর এত ভাল ফলাফল আর কেউ করতে পারে নি।পুরো এলাকায় তোলপাড় তৈরী করে জয়নালের এমন ফলাফল।অনেকেই সামাদ আলীর দূরাবস্তার কথা চিন্তা করে জয়নালের লেখাপড়ায় সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।কি একটা বৃত্তিও যেন পায়।কলেজে ভর্তি হয় জয়নাল।ইন্টারমিডিয়েটে আগের মতো ফলাফল আর করতে পারে নি।কলেজে একটা ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত হয়।ভালো বক্তৃতা দিতে পারতো।সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার বক্তৃতা শুনতো।এভাবে সংগঠনের একটি ভালো পদ পেয়ে যায়।জয়নালের বেশ নামডাক হয়।একই কলেজে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হয় জয়নাল।সাথে রাজনীতিও চলতে থাকে।নানাভাবে তখন তার হাতে পয়সা কড়ি আসতে থাকে।বাড়ীতেও বাবার নামে টাকা পাঠায়।সামাদ আলী মুর্খসুর্খ মানুষ।এতো কিছু বুঝেন না।চাকরীবাকরী পাওয়ার আগেই এভাবে যে ছেলে টাকা পাঠাতে পারে সে ধারণা তার ছিল না।ছেলের টাকায় কয়েক বিঘা জমিও কিনে ফেলেন সামাদ আলী।জয়নাল স্নাতক পরীক্ষায়ও যথারীতি পাশ করে।কিন্তু সার্টিফিকেটের মান আগের চেয়ে কমেছে। সে সময় দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়।বাংলাদেশ নতুন দল নামে একটা পার্টি ক্ষমতায় আসে।জনতা পার্টির নেতা কর্মীরা অনেকটা আত্মগোপনে চলে যেতে বাধ্য হয়।জয়নাল কিংবা তার দলের কারো তখন তেমন দামটাম নাই।কেউ পাত্তা দেয়।নতুন দলের নেতাকর্মীদের কথা মতো সবকিছু হয়।ঠিক সেই সময়েই জাহানারা বেগমের বাবা তমিজউদ্দিন সামাদ মিয়ার কাছে নিজের মনের কথাটা জানান।জয়নালকে মেয়ের জামাই করতে চান শুনে সামাদ আলী শুরুতে আমতা আমতা করলেও শেষ পর্যন্ত মত দিয়ে দেন।জাহানারার রূপ গুনের বর্ণনা তখন এলাকার মানুষের মুখে মুখে। শুধু মেয়ের এসব দিক চিন্তা করেই সামাদ আলী রাজী হয়ে যান।তমিজুদ্দিনের কাছে কোনো দাবী দাওয়া করেন নি।তারপরও তমিজউদ্দিন তার আত্মীয় স্বজনদের সহযোগীতায় যতোটুকু পারেন বিয়ের অনুষ্টানটি সুন্দর করতে কার্পণ্য করেন নি। বিয়ের পরের বছরই রাবিয়ার জন্ম। জয়নালও তখন দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বোল পাল্টে ফেলে নতুন দলে যোগদান করে।সাংগঠিনিক দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে নতুন দলের নিশ্চিন্তপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি জয়নালকে আহসানপুর ইউনিয়ন কমিটির একটি গুরুত্বপূর্ন পদে আসীন করেন।অল্পদিনেই সভাপতির সুনজরে পড়ে জয়নাল।সুসম্পর্ক প্রতিষ্টা হয় দুজনের মধ্যে।আহসানপুর ইউনিয়ন নতুন দলের সভাপতির উপর মনে মনে খাপ্পা ছিলেন নিশ্চিন্তপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি।প্রতিশোধ নেওয়ার নেশায় উন্মত্ত হয়ে থাকা উপজেলা সভাপতি চক্রান্ত করে জেলা সভাপতিকে হাত করে আহসানপুর ইউনিয়ন সভাপতি আব্দুল মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করেন।ওই পদে তিনি বসিয়ে দেন জয়নালকে।অনেকে আপত্তি করলেও উপজেলা সভাপতির দাপটে শেষ পর্যন্ত নীরব হয়ে যান সবাই।জয়নালেরও দাপট বাড়ে।বাড়ে উচ্চাকাঙ্খা।এলাকার প্রতিটি গ্রামের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে জয়নাল।ইউনিয়নের সবাই একনামে তাকে চেনে।ঠিক তখন দেশে ইউপি নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু হয়।প্রচার হয় দল থেকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন এবং প্রতীক দেওয়া হবে।জয়নাল সুযোগ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে।এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করে দেয় জয়নাল।পয়সাও ঢালতে থাকে।ছাত্রজীবনে কেনা কিছু জমিও বিক্রী করে দেয়।মানুষের কিছু উপকারও করতে থাকে।দরিদ্রদের সাহায্য,কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে মেয়ে দিতে সহযোগীতা,অসুস্থের চিকিৎসায় সহায়তা অব্যাহত রাখে।এলাকায় জয়নালের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভালো এবং সৎমানুষ হিসাবে।ততদিনে তার কেনা জমিজমার খুব অল্পই অবশিষ্ট থাকে।সকলের মুখেমুখে জয়নালের নাম ফিরে।নির্বাচন ঘনিয়ে আসে।এলাকার অনেক লোক জয়নাল কে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে অনুরোধ করে।উপজেলা সভাপতির সমর্থন ও দোয়া থাকায় জয়নাল সহজেই দলীয় টিকেট পেয়ে যায়।আরো কয়েকজন প্রার্থী হয়।তবে জয়নাল এদের গননায় ধরতে রাজী নয়। দল থেকে বহিস্কৃত আব্দুল মিয়াও অপমানের প্রতিশোধ নিতে প্রার্থী হন।আব্দুল মিয়া পয়সাওয়ালা ধণাঢ্য মানুষ।তার পেছনেও অনেক লোক জুটে যায়।জমে উঠে লড়াই।জয়নালের চেয়ে আব্দুল আলীও কম নয়।পুরো আহসানপুর ইউনিয়নের লোকজন দুইভাগে ভাগ হয়ে পড়ে।একভাগ জয়নালের সাথে।আরেক গ্রুপ আব্দুল আলীর সাথে।দুজনেই সমানতালে টাকা ঢালতে থাকে।অনেকেই জয়নালের হয়ে টাকা খরচ করতে থাকে।আশা একটাই।ক্ষমতাসীন দলের নেতা চেয়ারম্যান হলে এলাকায় উন্নয়ন যেমন হবে পকেটেও কিছু না কিছু আসবে।ক্রমেই আব্দুল আলীর অবস্থান শক্ত হতে থাকে।যেখানে যাক আব্দুল আলী তাকে অন্যায্যভাবে দল থেকে বহিস্কার করার কথা বলে মানুষের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করে।মানুষজনও সমবেদনা জানায়।আড়ালে আবডালে উপজেলা সভাপতির নিন্দা-মন্দ করেন!স্থানীয় পত্রপত্রিকায় আব্দুল আলীর নির্বাচনী শো ডাউনের খবরাখবর প্রচারিত হতে থাকে।জেলা সভাপতিও এসব দেখে বিচলিত হন।প্রথমবার দলের প্রতীক পাওয়া ব্যক্তি যদি ফেল মারে তবে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের দূরদর্শীতা ও বিচক্ষণতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে।এবং আব্দুল আলী পাশ করলে তখন এমন কথাও সামনে আসবে যে অন্যায্যভাবে আব্দুল আলীকে বহিষ্কার করা মোটেও ঠিক হয় ন। জেলা সভাপতি উপজেলা সভাপতির সাথে পরামর্শ করে জয়নালকে যে করেই হউক নির্বাচনে জেতাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সাংগঠনিক কাজ করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিলেন।বিশাল সভার আয়োজন করা হলো।প্রধান অতিথি জেলা সভাপতি।সভার দিন ব্যাপক লোকসমাগম হলো।প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় আহসানপুর ইউনিয়নে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেওযার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জয়নালের জন্য ভোট চাইলেন।সভাপতির বক্তৃতায় প্রতিক্রিয়া হলো।রাতারাতি দৃশ্যপট বদলে গেলো।লোকজন ধারণা করলো ক্ষমতাসীন দলের লোক চেয়ারম্যান না হলে উন্নয়ন হবে না।তারা এতকাল ধরে এমনটাই দেখে আসছে।নির্বাচন হলো।সুন্দর সুষ্টু নির্বাচন।কোনো অনিয়মের লেশমাত্রও দেখা গেল না। ভোট গণনার পর দেখা গেলো জয়নাল আব্দুল আলীর চেয়ে কয়েকশ' ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেলো।
মনের দুঃখে আব্দুল আলী রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়ে ধর্মকর্মে মন দিলো।আব্দুল আলী তাবলীগ জামাতে শরীক হয়ে দ্বীনের কাজে জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
জয়নাল চেয়ারম্যান হওয়ার পর সাধারণ পাবলিকের স্বপ্নভঙ্গ হলো।তারা তাদের ইউনিয়নে তেমন কোনো উন্নয়ন দেখতে পেলো না। দিনেদিনে জয়নালের সহায়সম্পদ বাড়তে লাগলো।জয়নালের দাপট এবং ক্ষমতাও বহুগুন বেড়ে গেলো।কেউ প্রতিবাদী হতে সাহস পেলো না।এভাবেই কেটে গেলো পাঁচটি বছর।পরের নির্বাচনেও দল জয়নালকেই মনোনয়ন দিল।
এলাকায় বলাবলি আছে মনোনয়ন আনতে জয়নাল ঘাটে ঘাটে বিস্তর টাকা খরচ করেছে।
ভোটারদের মিথ্যা আশ্বাসে বিভ্রান্ত করে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে জয়নাল আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলো। তার ক্ষমতার দাপট বহুগুন বৃদ্ধি পেলো।এলাকায় দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন কর্মকান্ডও দেখা গেলো।জনগন খুশীই হলো।এভাবে চলতে থাকার পর একপর্যায়ে সারা দেশে এক সর্বনাশা মরণব্যাধি ছড়িয়ে পড়লো।শুধু দেশেই নয় বহির্বিশ্বেরও দুইশ'র বেশী দেশে এই রোগে হাজার হাজার লোক মরতে লাগলো।উন্নত দেশগুলো রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেতে লাগলো।মৃত্যুর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেলো।সরকার সারাদেশ লকডাউন ঘোষণা করে দিল।যানবাহণ গণ-পরিবহণ বন্ধ হয়ে গেলো।শহর থেকে লোকজন গ্রামের দিকে ছুটতে লাগলো।যে যেভাবে পারে গ্রামে পৌঁছাতে লাগলো।কর্মসংস্থান কমে গেলো।নিম্ন আয়ের মানুষজন বিপাকে পড়ে গেলো।সরকার যথাসাধ্য ত্রাণ সাহায্য অব্যাহত রাখলো।দাবী উঠলো কিছু মানুষ এমনও আছে যারা ক্যামেরার সামনে বা লাইনে দাঁড়িয়ে সাহায্য নিতে পারে না। সদাশয় সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলো এসব নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র ও কর্মহীণ অস্বচ্ছল মানুষেদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ সাহায্য দিবে।সারা দেশে এরকম মানুষদের তালিকা করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।পত্রপত্রিকায় খবর বের হলো সরকার সারাদেশের ৫০ লাখ মানুষকে এই অর্থ সাহায্য দেবে।যতোদিন পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটে ততোদিনই সাহায্য দেওয়া হবে। দেশের মানুষ আশার আলো দেখতে পেলো।এমন মহতী উদ্যোগের জন্য সবাই সরকারকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। শেষদিকে এসে খবর পাওয়া গেলো কিছুকিছু জায়গায় তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে।দুইশ একশ নামের বিপরীতে একটি মাত্র মোবাইল নম্বর প্রদান করার তথ্য সাংবাদিকরা দেশবাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন।সেসব তালিকা সংশোধনের জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগের খবরে সবাই আবার আশাবাদী হয়ে উঠলো।
জাহানারা বেগম তার আদরের জেদী মেয়ে রাবিয়ার মন খারাপের বিষয়টিতে যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়লেন।চিন্তা আরো বেড়ে গেলো যখন দেখতে পেলেন আজ সকাল থেকেই বারবার বলার পরও রাবিয়া কিছুই খাচ্ছে না।দুপুরও এভাবে কেটে গেলো।বেল গড়ালো।বিকাল হলো।রাবিয়া কিছুই খাচ্ছে না।রাবিয়ার কোনো অসুখ করে নি তো?জাহানারা বেগমের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো।এদিকে রাবিয়ার বাবা জয়নালও আজ দুইদিন বাড়ীতে আসেন না।জাহানারা ধরেই নিয়েছেন কাজের চাপে হয়তো কোথাও আটকে গেছেন।গতকাল একবার ফোন দিয়েছিল।শুধু এটুকুই বলেছে জরুরী কাজে জেলা সদরে যাচ্ছে।জয়নালকে ফোন দিয়ে রাবিয়ার এই উদাস বিষণ্ণতার কথা জানাবেন কি না ভাবতে লাগলেন জাহানারা।আবার তিনি রাবিয়ার রুমে গেলেন।কেন সকাল থেকে রাবিয়া কিছুই খাচ্ছে না জানতে চাইলেন।রাবিয়া নিরব।তার চোখ দুটো ফোলাফোলা। মুখে কিছুই বলছে না রাবিয়া।চেহারায় অজ্ঞাত ঝড়ের পূর্বাভাস!
জাহানারা বেগম গলার স্বর চড়িয়ে বললেন,রাবিয়া তোর কী হয়েছে?সকাল থেকে এখনো কিছুই মুখে তুলছিস না।কি হয়েছে আমাকে বল তো! রাবিয়ার মুখে কথা নেই।চেহারা কঠিন।জাহানারা বেগম বললেন,রাখ্ আমি এক্ষুণি তোর বাবাকে ফোন দিয়ে সব বলছি।মানুষটা সারাদিন মানুষের সেবা করতে গিয়ে নাওয়াখাওয়া ভুলে গিয়ে দিনরাত কাজ করে।কাজের চাপে ঠিকমতো বাড়ীতেও আসতে পারছেনা ইদানিং!বলেই মোবাইলে ডায়াল করলেন জাহানারা।অপরপ্রান্তে সাড়াশব্দ নেই।বুঝাই যাচ্ছে ফোন বন্ধ।মোবাইল অপারেটর বলছে এই মুহুর্তে সংযেগ দেওয়া সম্ভব নয়।অনুগ্রহ করে একটু পরে আবার ডায়াল করুন।যতোবার কল দিচ্ছেন ততোবার একই কথা।
জাহানারা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন।মায়ের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে রাবিয়া চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।হাউমাউ করে কাঁদতেই লাগলো।কি হয়েছে রাবিয়া?জাহানারা বেগমের এমন প্রশ্নে রাবিয়া জানায় উপকারভোগীদের তালিকা তৈরীতে অনিয়মের অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তার বাবাকে আজ একঘন্টা আগে গোয়েন্দারা আটক করেছেন।বলেই তার মোবাইলের স্ক্রীনে ভাসতে থাকা অনলাইন পোর্টাল দৈনিক আশার আলো.কমে প্রকাশিত সংবাদটা তার মাকে দেখতে দিলো।গতরাতেই সে একই নিউজ পোর্টালে তার বাবাকে জেলা প্রশাসক অফিসে তলব করার খবর জেনেছিল।
এতোক্ষণে জাহানারা বেগম আসল বিষয়টি বুঝতে পারলেন।কেন রাবিয়া সকাল থেকে মন খারাপ করে আছে বুঝতে পারলেন।
তিনি তড়িঘড়ি করে পরিচিত শুভাকাঙ্খীদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করতে লাগলেন।অনেকের নম্বর বন্ধ পেলেন।অনেকে বারবার ডায়াল হলেও ফোন রিসিভ করছিলেন না।জাহানারার মনে পড়লো এদের অনেকেই রাতদিন জয়নাল চেয়ারম্যানের সাথে সাথে থাকে।জয়নালের সব কথায় 'ঠিক' 'ঠিক' করে।
অবশেষে অনেকবার ডায়াল করার পর উপজেলা সভাপতি ফোন ধরলেন।জাহানারা বেগমের কাছে সব শুনে এটুকুই বললেন,সরকার এখন এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থানে।দূর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় নেই।এই মুহুর্তে আমি জয়নালের জন্য কিছুই করতে পারবো না।
দুঃখিত।বলে ফোন কেটে দিলেন।
আর মনে মনে বললেন, বেশ পাখা গজিয়েছিল জয়নালের।উপজেলা সভাপতি হওয়ার খায়েশ না কি হয়েছিল।পিপিলীকার পাখা গজায় পুড়িবার তরে!মাইনকা চিপায় ফালাইছি শালারে!
জাহানারা বেগম পরদিন জেলা সদরে গিয়ে কোনো ভালো উকিলের সাথে পরামর্শ করে কি করা যায় দেখবেন।শুনেছেন মহামারীর কারনে কোর্ট কাচারী বন্ধ।তবে ভার্চুয়াল কোর্ট আছে। সেখানেই জামিনের আবেদন করতে হবে।