রুনু বোনের বাড়ি এসেছে অনেকদিন পর। বাড়ির বাইরে থাকতেই ভেতরের চিতকার চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পেল। একবার ভাবলো, চলে যাবে। চিন্তাভাবনা করে বাড়ির ভিতর গিয়ে দেখে বিরাট কান্ড। তার বোনজামাই ভাগিনাকে প্যাদানি দিচ্ছে। আগের রেজাল্ট ভালো হলেও মোবাইল কিনে দেয়ার পর ইদানীং রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে৷ পড়াশোনা আগের মতো করেনা। তবে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তার মোবাইলে পর্নো পাওয়া গেছে। এটা নিয়েই যত হাঙ্গামা। ভাগিনা একদম চুপসে গেছে। এত মানুষের সামনে তাকে অপমানিত হতে হচ্ছে। সে মাথা নিচু করে বসে আছে। রুনু তাড়াতাড়ি ভাগিনাকে নিয়ে সেখান থেকে সরে পড়তে থাকে। রুনুর পেছনে দুয়েকজন তাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলছিল।
সে উত্তর দেয়, "আপনাদের মোবাইলে খুজলেও এরকম দুয়েকটা ভিডিও পাওয়া যাবে। বাচ্চা মানুষ বলে ওকে সবাই পেয়ে বসেছেন।"
এবার গালাগালির নিশানা হওয়ার আগেই সে ভাগিনাকে নিয়ে কেটে পড়ে। একটা রিকশা নিয়ে দুই কিলোমিটার দূরের একটা জায়গায় চলে যায়। চায়ের দোকানে ২ কাপ চায়ের কথা বলে দুটো চেয়ার নিয়ে একটু দূরে গিয়ে বসে তারা। ভাগিনা এখনো চুপ, কিছুই বলছেনা।
রুনু চায়ের কাপে চুমু দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,"নেশার পর্যায়ে চলে গেছ?"
ভাগিনা মাটির দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে হ্যা সূচক জানালো।
আবার জিজ্ঞেস করলো," গ্রামে এসব কোথায় পাওয়া যায়?
ভাগিনা আস্তে করে বললো,"কম্পিউটারের দোকানে।"
অন্যদিকে তাকিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো, "এর সাথে কি হস্তমৈথুনের অভ্যাস আছে?"
ভাগিনা চুপ মেরে আছে। কিছুই বলছেনা।
একটু স্বাভাবিক করার জন্য বললো," তোমার দোষ নেই। এসব নিয়ে মুরুব্বিদের কেউ তোমার সাথে কথা বলা উচিত ছিল। এখন কেউ তাদের দায়িত্ব নিয়ে মাথা না ঘামালে তাতে আমি তোমার দোষ দেখছিনা।"
একটু থেমে আবার বলা শুরু করলো,"শারীরিক বিষয়গুলো তো আর অস্বীকার করা যায়না। আল্লাহ মানুষকে এটা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এসব স্কুলে শেখানোর চেয়ে পরিবারের বড় কেউ বাচ্চাদের সাথে কথা বললেই ভালো মনে হয় আমার কাছে। আমি যদি বলি, এসব জানার দরকার নেই, সেটাও ভুল হবে। কারণ বাচ্চারা কারো না কারো কাছে থেকে এসব জানবেই। আর এসব পর্ন দেখে বা সিনেমা দেখে শিখলে সেটা অবশ্যই অনেক বড় একটা অসংশোধনীয় ভুল হবে।"
ভাগিনা একটু স্বাভাবিক হলো। জিজ্ঞেস করলো,"কেন ভুল হবে?"
সে উত্তর দিলো,"তুমি সিনেমাতে দেখেছো যে অনেক উচু বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে পড়লেও কিছু হয়না। এটা কি বাস্তব?"
ভাগিনা মাথা নেড়ে জানালো যে এটা অবাস্তব।
সে আবার বলতে শুরু করলো,"এটাই সমস্যা। সিনেমা হোক বা পর্ণ হোক, যা দেখায় তার সবটাই অভিনয়। বাস্তবতার সাথে কোন মিল নেই। যারা দেখে তারা ভাবে, এসবই বাস্তব। এসব মিথ্যা এবং আজগুবি কাহিনি দেখে তরুন প্রজন্ম একদম ধংস হয়ে যাবে।"
ভাগিনা মূল কথাটা ধরতে পারলেও পরিস্কার হয়নি৷ রুনু আবার বলা শুরু করলো,"একটা জিনিস সঠিক ব্যক্তি থেকে জানলে যেমন ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকেনা। তেমনি ভুল জায়গা বা ব্যক্তি থেকে জানা আর নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দেয়া একই কথা।"
দুই কাপ চা শেষ করে আবার আরো দুই কাপ নিয়ে বসলো। আবার বলা শুরু করলো," আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনো। এসব বিকৃত জিনিস যারা দেখে তারা ভাবে যে, এর সটাই ঠিক। তাদের মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়। তারা নানা প্রকারের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। দেখো, এই ভুল কাজ করার জন্য আল্লাহ তোমাকে আজ অপমানিত করেছেন। তোমার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। কোথাও শান্তি পাবেনা। এই অপরাধের শাস্তি অনেক। ধীরে ধীরে ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাবে মন, আত্মা, মনুষ্যত্ব এবং বিবেক। তাই সাবধান।"
ভাগিনা বুঝতে পারলো এবং লজ্জিত হলো।
রুনু তখনও শেষ করেনি। সে আবার বললো," হস্তমৈথুন নিয়ে আজকালকার ডাক্তাররাও কথা বলতে চায়না। বেশিরভাগই এর পক্ষে কথা বলে। এটা আসলেই একটা ভয়ানক ব্যাধির নাম।"
এর কয়েকটা খারাপ দিক সম্পর্কে বলি, শুনো,"
১। কেউ যখন হস্তমৈথুন করে তার শক্ত এবং ঠান্ডা হাত দিয়ে তার নিজের গোপনাঙ্গে ঘর্ষণ করে। তার গোপানাঙ্গের ভিতরের অনেক নরম টিস্যু থাকে যা ছিড়ে যেতে পারে। ছিড়ে যায়ও৷ ফলে সারা জীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর ফলে, বিয়ের পর স্ত্রীর কাছে লজ্জিত হতে হয়।
২। অপরদিকে, কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে যায়, তখন স্ত্রীর গোপনাঙ্গের একটা তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং সেখানকার একটা আল্লাহ প্রদত্ত আলাদা পরিস্থিতি আছে। আল্লাহ স্বামী-স্ত্রীকে এমনভাবেই একে অপরের পারফেক্ট পরিপূরক হিসেবে তৈরি করেছেন। যে ব্যক্তি নিজের হাতের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং পরিস্থিতির সাথে অভ্যাস করে নিয়েছে সে তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে যেতে পারবেনা। শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।
জীবনের জন্য স্ত্রীর কাছে লজ্জিত থাকবে।
৩। কেউ যখন হস্তমৈথুন করে তখন একটা জিনিসই চিন্তা করে সেটা হলো কিভাবে তাড়াতাড়ি শেষ করা যায়। তাছাড়া, হস্তমৈথুন জিনিসটাই এমন। কেউ এসে পড়ল কি-না, কেউ দেখে ফেললো কি-না এসব চিন্তা করে সে তাড়াতাড়ি করে। যে এটার সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায় সে স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে গিয়েও ওইটাই হবে। কারণ, একই কাজ বার বার করার কারণে তার মাসল মেমরি বিল্ড আপ হবে। স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে।
আর স্ত্রীর কাছে লজ্জিত হবে।
৪। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আল্লাহ প্রদত্ত। অত্যন্ত সুন্দর। সেখানে পারস্পরিক শারীরিক ও মানসিক বোঝাপড়ার বিষয় থাকে। এটা একটা লম্বা প্রক্রিয়া। তো যে হস্তমৈথুন করে খুব দ্রুততার সাথে শেষ করার অভ্যাস করে রেখেছে সে তো শুরুতেই ধরা খাবেই খাবে। সে এই প্রক্রিয়ার শেষ পর্যন্ত কখনোই যেতে পারবেনা।
সম্পর্ক তৈরি হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। ফলাফল ওই একটাই, স্ত্রীর কাছে লজ্জিত হবে।
আল্লাহর সামনে তো মাথা নত হবেই। ইহকাল-পরকাল দুটোর ঝুঁকিতে পড়বে।
তাই, সাবধান।।
৫। অত্যন্ত ভয়াবহ বিষয় হলো এসব নিয়ে তেমন কেউ কথা বলেনা। এমনকি ডাক্তাররাও পরিস্কার করে কথা বলার সাহস রাখেনা। কারণ কম বেশি সব ডাক্তারই নানা প্রকারের উপহার পায়। অথচ, বর্তমানে পুরুষের শারীরিক সমস্যা নিয়ে বিশাল একটা বাণিজ্যিক মেডিকেল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে৷
যারা খারাপ ভিডিও দেখে তাদের creativity পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। সে হয়ত কিছুক্ষণের জন্য দেখবে চিন্তা করে অনলাইনে যায় কিন্তু একবার শুরু করলে তারপর ঘন্টার পর ঘন্টা চলে যায়। কোন হুশ থাকেনা। তার মাথায় ওই জিনিসটাই ঘুরপাক খায়। সে সব মেয়েদেরকেই ওইভাবে দেখে। মেয়েদেরকে আর সম্মান করতে পারেনা। ধর্ষণের মানসিকতা তৈরি হয় তার মনে। কাউকে সম্মান করতে পারেনা। পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনা। তার হয়ত জীবনে অনেক কিছু করতে পারার সম্ভাবনা ছিল। নতুন করে দেখানোর মানসিকতা এবং শক্তি ফুরিয়ে যায়। সব নষ্ট হয়।"
ভাগিনা এবার বললো,"কিন্তু এটা তো অভ্যাস হয়ে গেছে। নেশা হয়ে গেছে। এটা থেকে বের হবো কিভাবে?"
রুনু বললো,"এর উত্তর তোমাকেই দিতে হবে। নিজেকে জিজ্ঞেস করো,"কিভাবে বের হতে পারবে এটা থেকে।"
রুনু পরামর্শ দিয়ে বললো,"১। পাচ ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে শুরু করো।
২। বাটন মোবাইলে ফিরে যাও।
৩। পড়া টেবিল তোমার ঘরে না রেখে বসার ঘরে নিয়ে আসো, সবার সামনে থাকলে শয়তান দূরে থাকবে।
৪। যখনই পর্ন দেখতে বা হস্তমৈথুনের ইচ্ছা হবে, নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিবে যে, এটার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব অপেক্ষা করছে।
৫৷ খারাপ বন্ধুদের ছেড়ে দাও। এমন বন্ধু তৈরি করো যারা নামাজ পড়ে এবং ভালো।"
ভাগিনা মাথা নেড়ে সায় দিল, সে তাই করবে।
সে এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। কিন্তু সে বাড়ি ফিরে যেতে চাচ্ছেনা।
রুনু বললো,"তুমি নিজেকে বলো, তুমি অপরাধ করেছো বলেই অপমানিত হয়েছো। আর কিছু না। আর সংশোধন করবে বলে নিজের সাথে আর আল্লাহর সাথে ওয়াদা করো।"
ভাগিনা তাই করলো।
ততক্ষণে আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে। রুনু ভাগিনাকে নিয়ে মসজিদের দিকে চলতে শুরু করলো।