নাসিরের সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা। ভার্সিটির ছোট ভাই, পাশের রুমেই থাকতো। আমার শিষ্য হলেও আমাদের মাঝে তর্ক বিতর্ক বেশি হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সে একটু বীতশ্রদ্ধ। শুরুতেই ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখালো, কোন এক হুজুর তার মাদ্রাসার ছাত্রকে ধর্ষণ করেছে। আমার মুখ থেকে শুধু বের হলো,"ইন্না-লিল্লাহ।"
সে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বললো,"আপনি খোজ নিয়ে দেখেন। সারা দেশের মাদ্রাসাগুলোর অবস্থা কি।"
আমি বললাম,"হ্যা। অনেক মাদ্রাসা বা মসজিদের হুজুরদের দ্ধারা এমন অপরাধ হচ্ছে বা হয়েছে। তাই বলে সবাই কি অপরাধী?"
সে জিজ্ঞেস করলো,"এর শাস্তি নিয়ে কিছু বলেন।"
উত্তর দিলাম,"অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। শুধু ওই হুজুরের না। ওই মাদ্রাসার সাথে জড়িত কমিটিরও শাস্তি হওয়া উচিত।"
সে শুনে হাসলো।
আমি আরো যোগ করলাম,"দেখো। সকল ধর্মের মাঝে ইসলামেই এই জিনিসটাকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। কওমে লুত এর কথা তো জানোই।"
সে আরেকটু ব্যঙ্গ করে বললো,"তাহলে হুজুরেরাই কেন এই অপরাধ করে, সেটা বলেন?"
উত্তর দিলাম,"দেখো। শয়তান হুজুরদের পেছনেই বেশি লাগে। উনাদের বিপদগামী করতে পারলে পুরো ইসলামকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়। ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মাঝে বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি করা যায়। এই যেমন তুমি। সরাসরি ইসলামকেই কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে দিয়েছো।"
নাসির হাসলো।
আমি আবার বললাম,"এই অপরাধ অনেক হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। শুধু যে হুজুরেরাই করেছে এমনটা নয়।"
সে বললো,"ভাই। কথা ঘুরায়েন না।"
বললাম,"এইসব ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, গাছের গোড়ায় কেউ পানি দিচ্ছে না। সমস্যার গোড়ায় কেউ যাচ্ছেনা।"
সে বললো,"মাদ্রাসা শিক্ষা উঠিয়ে দিলে হয়না?"
উত্তর দিলাম,"মাদ্রাসা বা এতিমখানায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তো তো গরিব, এতিম এবং মূল ধারার শিক্ষা হতে বঞ্চিত ছেলে-মেয়েরা পড়তে যায়। মানুষের দান-খয়রাতে ওদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখন ওইটা বন্ধ করে দিলে ওরা যাবে কোথায়? তখন তো ওরা পথেঘাটে সন্ত্রাস করে বেড়াবে।"
নাসির বললো,"সমাধান কি তাহলে?"
বললাম,"আগেই তো বললাম, গাছের গোড়ায় পানি ঢালতে হবে। মূল সমস্যাটা খুজে বের করতে হবে।"
সে জানতে চাইলো,"তাহলে বলে দেন। কি করলে এটা বন্ধ হবে।"
বললাম,"তুমি ভালো করেই জানো আমাদের দেশের হুজুরদের একটা বড় অংশ অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান। সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে মসজিদের সেবা করেন। তারা তাদের পরিবার নিয়ে থাকেনা। চাইলেও যখন তখন যেতে পারেন না। দেখা যায়, একবার বাড়ি আসা-যাওয়া করলে দুই মাসের বেতন যাতায়াত ভাড়াতেই শেষ। পরিবারের কাছ থেকে দীর্ঘদিন দূরে থাকার কারণেই এসব অপরাধ সংঘটিত হয়। তাই প্রতিটি মসজিদ-মাদ্রাসাতেই হুজুরদের পরিবার নিয়ে থাকার জন্য ব্যবস্থা করা দরকার। সরকারও চাইলে এগিয়ে আসতে পারে।"
নাসির চুপ করে আছে।
বললাম,"নবীজি সা: এর সাহাবিরা কিন্তু সারাদিন বসে থাকতেন না। তারা ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন। প্রতিটি মসজিদের জমি থাকতে পারে সেখানে চাষ করে হুজুর নিজের জন্য ফসল ফলাবেন। অথবা দোকান থাকতে পারে যেটা চালিয়ে হুজুর তার আয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। তাহলে তাকে আর কয়েক টাকা বেতনের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে হবে না। সাবলম্বী হতে পারবেন। এর বাইরে সরকার চাইলেও তাদের জন্য নানা প্রকারের ব্যবস্থা করতে পারেন।"
নাসির জানতে চাইলো,"শাস্তির কি? সেটা তো বললেনা?"
বললাম,"যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি অবশ্যই চাই। কিন্তু তুমি কি জানো? আমাদের দেশের হুজুরেরা কোন ছুটিই পাননা। তো ওই মাদ্রাসার কমিটির দায়টাও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করি।"
নাসির বললো,"আপনার কি মনে হয়? এটা করলেই এই অপরাধ বন্ধ হয়ে যাবে?"
উত্তর দিলাম,"বন্ধ হবে কি-না সেটা আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এটা করতে পারলে হুজুরদের মাঝে এই অপরাধ কমে আসবে ইনশাআল্লাহ।"
96
View