পহেলা বৈশাখ। ১৪ এপ্রিল, ২০০০ সাল। ইন্টার পাশ করেছি। ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা হয়ে গেছে। চান্সও পেয়ে গেছি। কিছুদিন পর ভার্সিটির ক্লাশ শুরু হবে। এর আগে অখণ্ড অবসর। মহল্লার এক বন্ধু কাম জুনিয়র বলল, চলেন ৩ দিনের তাবলীগ জামাতে যাই। এর আগে বহুবার বলেছে। এটা সেটা বলে এড়িয়ে গেছি। এবার আর সেই সুযোগ নাই। পূরা ছাই দিয়ে ধরে ফেলেছে। হ্যাঁ বলে দিলাম।
কাকরাইল মসজিদ (প্রধান মার্কাজ) ঠিক করে দেয় কোন জামাত কোথায় যাবে। আমরা চলে গেলাম ঢাকা নিউ মার্কেট কাঁচা বাজার জামে মসজিদ। এই মসজিদটা নিউমার্কেটের পিছনের দিকে, ভিতরেরটার না।
সেটা ছিল আমার ২য় বারের মত তাবলীগের জামাতে যোগদান। এর আগের জামাতে পুরাণ ঢাকায় গেছিলাম। সেই জামাতে গিয়ে পুরাণ ঢাকার মানুষের প্রতি ধারণা চেইঞ্জ হয়ে যায়। আমাদের প্রতি তাদের মহব্বত দেখে আশ্চর্য লেগেছে। মনে হয়, এলাকায় কোন মন্ত্রী এসেছে। কী আদর, কী আপ্যায়ন। সে কথা কোন দিন ভুলতে পারবো না।
তাবলীগ জামাতে ধর্মীয় দিক বাদেও দুইটা বিষয় আমার কাছে খুব আকর্ষনীয় লেগেছে।
প্রথমতঃ কেউ যদি খুব কম টাকায় জীবন যাপন করতে চায়, তাবলীগের বিকল্প নেই। সাথে একটা ডিসিপ্লিন লাইফ উপহার হিসেবে পাবে।
দ্বিতীয়তঃ কারও রুচির অভাব হলে সেখানে যেতে পারে। এমন সুস্বাদু খাবার আমি আর কোথাও খাইনি। খরচ সামান্য, যা রাঁধে তাই অমৃতের মত লাগে।
খুব ভোরে উঠতে হয়। ফজরের নামাজ আদায়, এরপর তালিম (ধর্মীয় আলোচনা), সহি ভাবে কুরআন পাঠ। এরপরেও লম্বা সময় থাকে। রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ব্যাপার থাকে। নাহলে ভোরে উঠা কঠিন।
কিন্তু আমি তো ২ দিনের বৈরাগী। ভাতেরে কই অন্ন। দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। ওরকম সন্ধ্যায় কোনভাবে ঘুম আসে না।
এরকম একদিন। অন্যেরা ঘুমিয়ে গেছে। আমার চোখের ঘুম তখন কেবলই আসমান থেকে রওয়ানা দিয়েছে। তখনও সাধারণ মানুষের কাছে মোবাইল নেই। ইন্টারনেট বহুত দূরের আলাপ। অবসরের প্রধান উপাদান বই পড়া। ভাগ্যিস সাথে কাগজ কলম ছিল। ঘুম আসার আগে লিখে ফেলি একটা ছড়া। ২৫ বছর সেই ছড়াও ঘুমিয়ে ছিল একটা ডায়েরিতে। মাত্র আজ ঘুম ভেঙ্গেছে। ছড়ার কোন নাম দেইনি তখন। একটা নতুন নাম দিলাম, হুজুরের খাজুরে আলাপ।
===============
হুজুরের খাজুরে আলাপ
===============
হুজুর হলেও খাজুর আলাপ
চলছে মোদের হররোজই
এককা দোক্কা খেলব নাকি
ধর্মে ধরব জীবন বাজি।
ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে
চলছে এমন দ্বন্ধ যে,
জীবন যদি ভুল পথে যায়,
তার দায় বা নিবে কে?
চঞ্চল মতি দুর্বার গতি
বাঁধি তারে কোন সুতায়,
অল্প করে গল্পের ছলে
হচ্ছে যে ভুল জীবন খাতায়।
তারচেয়ে ভাল এবার চল,
দ্বীনের সেবায় কায়েম হই,
রতনে রতন খুঁজে
হব এবার আমরা জয়ী।
=====================