মসজিদের শহর ঢাকায় থাকে অলি। সে একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিওনের চাকরি করে। সারাদিনই বাইরে বাইরে থাকতে হয়। সব সময় এই অফিস থেকে সেই অফিস যেতে হয়। সাথে একটা পিঠব্যাগ রাখে। পানি থেকে শুরু করে সবকিছুই সাথে রাখতে হয়। সে প্রতিদিন তার ব্যাগে একটা জায়নামাজ রাখে।
সে কখনো নামাজ ছাড়ে না। অফিসের কাজে অনেক সময়েই ঝামেলা হয়, তবু নামাজ মিস করেনা। সে কখনো নামাজ অফিসে পড়ে, আবার কখনো বাইরে কোন মসজিদে পড়ে। সমস্যা হয় যখন নামাজের সময়ে সে জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকে, আবার অফিসে ফিরে যেতেও সময় লেগে যায়। কারণ ঢাকার বেশিরভাগ মসজিদই নামাজের জন্য নির্ধারিত সময়ের পর তালাবদ্ধ করে রাখা হয়।
আজকেও অলি একই সমস্যায় পড়েছে। তবে ঝামেলা হলো, জায়নামাজটা ব্যবহার করে রাস্তার পাশে নামাজ পড়ে বলে ময়লা হয়ে গেছে। তাই সেটা ধুয়ে দিয়েছিল। ফলে আজ সাথে নিয়ে আসতে পারেনি৷
একটা বিষয় তাকে বড্ড অবাক করে তাকে। এই মসজিদের শহরে কেউ নামাজ পড়তে চেয়েও মসজিদে জায়গা পায়না। সে কয়েকটি মসজিদ কমিটির সাথেও কথা বলার চেষ্টা করেছে। মসজিদগুলোতে এসিসহ নানা ধরনের দামি জিনিস থাকে যার জন্য তালা মারতেই হয়। অলি অবাক হয় এটা ভেবে যে দেশের নব্বই শতাংশ মানুষ মুসলমান হওয়ার পরেও কেন মসজিদ থেকে চুরি হয়। কে দিবে এই প্রশ্নের উত্তর।
সে এক মসজিদের কমিটির সাথে রাগারাগিও করেছিল। প্রশ্ন করেছিল,"এত দামি জিনিস কেন মসজিদে থাকবে? মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে কি এসি থাকার মূল্য বেশি?"
মসজিদ কমিটি অবশ্য তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল। ছোট মুখে বড় কথা কে সহ্য করবে। সামান্য একটা পিওন আবার এত কথা বলবে কেন?
সে কয়েকটি মসজিদের কমিটিকে বলেছে, যেন মসজিদের বারান্দাটা অন্তত খোল রাখা হয় আগুন্তকদের নামাজের জন্য। এটা হয়ত কিছু কিছু মসজিদে রাখাও হয়। কিন্তু সেটাও হাতে গোনা কয়েকটি মসজিদে।
কোন বাসার সামনে খালি জায়গায় নামাজ পড়ে কেউ পছন্দ করে বিষয়টা, আবার কেউ বিরক্ত হয়। কেউ আবার বিরুপ মন্তব্যও করে। রাস্তার পাশে নামাজ পড়া তার পছন্দ না। এমনিতেই ফুটপাত নেই বললেই চলে। যা আছে তাও নানাজনে নানাভাবে দখলে নিয়ে রেখেছে। রাস্তার পাশে অনেক ময়লা থাকে, তাই সেখানে নামাজ পড়া তার পছন্দ নয়।
অনেক খুজে একটা পার্কে এসেছে। এখানে কোথাও নামাজ আদায় করে নিবে। সে মনে মনে ভাবে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মসজিদ ছিল মুসলমানদের সকল কাজের কেন্দ্র। কারণ মুসলমান তার সকল কাজ আল্লাহর জন্য করে। মসজিদ সারাদিন আবাদ হতো। সেখানে দুনিয়াবি সমস্যার সমাধানও আল্লাহর রহমতে পাওয়া যেত। আর বর্তমান মসজিদের সামনে মানুষ একবেলা খাওয়ার জন্য হাত পেতে পাচ টাকা-দশ টাকার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ ভিতরে কিছু মানুষ এসির বাতাস খায়। এটা কেমন ইসলাম আমরা পালন করি যে, মসজিদে এত দামি জিনিস রাখতে হবে, অথচ কেউ নামাজ পড়ার জায়গা পাবেনা?
মুসলিম জাতি যদি একটা শরীরের মতো হয় তবে এত মানুষ না খেয়ে আছে জেনেও আমরা নিজের জন্য এত আয়েশ খুজি?
পার্কের দিকে যেতে যেতে আরেকটা কথা অলির মনে পড়ে যায়। সেদিন নামাজের পর মসজিদের ইমাম সাহেবকে কয়েকজন ধমকাছিল। এসি নষ্ট হয়ে গেছে, সেটা কেন তিনি মেরামত করাননি। এটা কেমন আচরণ, ইমাম সাহেবকে আমরা ইমাম মানি শুধু নামাজের সময়ই?
55
View