গত মে মাসের কথা। মাত্রই ঢাকায় এসেছি। শিকড় উপড়িয়ে, স্বপরিবারে। নতুন একটা বাসায় থিতু হওয়া দুই দু গুণে চাট্টি খানা কথা নয়। এর উপর সেই মুহুর্তে আমি সেনাপতি, আমিই বরকন্দাজ। পূরা 'ওয়ান ম্যান আর্মি' শো। শুধু খোদার গজব নেমে আসার বাকি।
যথারীতি শুক্রবার সকাল আসে। টাউনহল বাজারে ঢু মারি। মাছের বাজারে ঢুকেছি। অমনি একটা টিভি ক্যামেরা আমাকে খুঁজে পেয়েছে।কয়েক দিন পর কুরবানির ঈদ। গরু বাদ দিয়ে খোঁজ নিতে এসেছে কাঁচা বাজারের। বেশ মোটাসোটা বলে সহজে ওদের নজরে পড়ে যাই।
এখানে একটা ছোট করে ফুটনোট যোগ করা দরকার। সুদূর অতীতেও যখন টেলি সামাদ ফিগার ছিল, তখনও ওরা বেশ খুঁজে পেত আমাকে। পহেলা বৈশাখে ঘুরতে গিয়ে, কমলাপুরে ট্রেনের টিকেট কাটতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে হয়েছে। এরপর প্রজাতন্ত্রের কর্মে বহু বহুবার বক্তব্য দিতে হয়েছে। অনেকেই ক্যামেরা এড়িয়ে চলে, নিরাপদে থাকে। এর বিপরীতে বুঝে না বুঝে নিজের বুকে থুতু ছিটিয়ে বারবার ক্যামেরা-গানের সামনে দাঁড়িয়ে যাই।
টাউনহল বাজারের সেই ক্যামেরা আমাকে খুঁজে পায়।হাতেনাতে মফিজ কট।এরপর বুম আমার সামনে ধরে সোজা জিজ্ঞেস করে, গত সপ্তাহের তুলনায় আজকের (সেদিনের) বাজার দর কেমন?
আগের সপ্তাহে ছিলাম ঢাকা থেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও দূরে। এমন এক প্রশ্ন করে বসে, আমার কমন পড়েনা। কিন্তু একবার যখন দাঁড়িয়ে গেছি, কিছু না কিছু তো বলতেই হয়।
২।
কী উত্তর দিবো ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো, এর জন্য বাজার অর্থনীতির জনক এডাম স্মিথ হওয়ার কোন দরকার নেই। কাঁচা বাজারের দরের কী হয়? কিছু জিনিসের দাম কমে, কিছু বাড়ে। যেই ভাবা, সেই ডেলিভারি। ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলার চেষ্টা করলাম। বলার সময় এটাও খেয়াল করলাম, আমি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি। আউল ফাউল বলে উজবুক হওয়া যাবে না।
এরপর একদিন দুইদিন যায়। ইউটিউবে খুঁজি। অন এয়ারে গেলো কীনা। নাহ, কোন হদিস নেই। টুকটাক অভিজ্ঞতা থেকে জানি, ক্যামেরায় ধারণ হলেই অন এয়ারে যাবে, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। এরপর বেমালুম ভুলে গেছি। কারণ একটাই, ঢাকার এই জীবনের খুশিতে। ঠেলায়।
৩।
পরশুদিন এক জুনিয়রের সাথে আলাপ হচ্ছে।সে বলল টিভিতে আমাকে দেখেছে। এরপরই নাকি কাঁচা বাজারে জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। পোলাপাইন এর দুষ্টমি আগেও চলত, আগামীতেও চলবে। আমি নিশ্চিত।
কিন্তু, আমাকে কেন টিভিতে দেখাবে? আমি আর লিংক করতে পারি না।
অবশেষ মনে পড়লো। মাছ বাজারে দাঁড়িয়ে দেয়া সামান্য দুইটা কথা। ৬ মাস আগের কথা কী মনে থাকে।
৪।
ওমা, একী চমৎকার কাণ্ড,
ঘুমিয়ে গেছি হরিনাকুণ্ড।
৬ মাসের আগের ধারণকৃত ভিডিও এই সময়ের বলে বেশ চলছে। টাউন হল বাজারও হয়ে গেছে মহাখালী কাঁচাবাজার।
টিভি চ্যানেলে দেখাচ্ছে। ঠিকই দেখাচ্ছে। হয়তবা।
প্রত্যেক মানুষের নাকি জড়ুয়া আছে। সেই টিভির কল্যাণে সেই জড়ুয়ার সন্ধান পেয়ে গেছি। কিন্তু সাক্ষাৎ হয়নি। তারও আমার মত একটি গেঞ্জি আছে। আমার মত করে কথা বলে।
মহাখালী কাঁচা বাজারে যাওয়া আসা করে। তাহলে এর আশেপাশেই থাকে হয়ত। ভাই ও বোনেরা আমার, আর যারা আমার কিছুই হন না, ভবিষ্যতেও হওয়ার সুযোগ নেই, তাদের সকলের প্রতি অনুরোধ, আমার সেই জড়ুয়ার খোঁজ দিন।
খুঁজে পেলে তিন জনে মিলে একদিন ওয়েস্টিনে গিয়ে ইচ্ছেমত খেয়ে আসবো। যে খুঁজে বের করবেন, তিনি ওয়েস্টিনের বিল দিবেন।
ওইরকম একটি ঐতিহাসিক মুহুর্তের সাক্ষী হওয়া দুই দুগুণে চাট্টিখানা কথা নয়।
37
View