নীরবতার গান — প্রথম অংশ
রিশাদ জন্মেছিল ছোট একটি গ্রামে, যেখানে রোদ ঠিকমতো পড়ে না, কিন্তু মানুষের হাসি আলোর চেয়ে উজ্জ্বল। বাবা ছোটবেলায় মারা গিয়েছিল, মা একা হয়ে তাকে বড় করেছেন। ছোটবেলা থেকেই রিশাদের চোখে স্বপ্ন ছিল, মনে অদ্ভুত এক আনন্দ আর কখনও কখনও একাকীত্ব।
গ্রামের পুকুরের ধারে বসে সে ভাবত—একদিন বড় হয়ে সে নিজের নামে কিছু করবে। মা সবসময় বলতেন,
“জীবন হাসি, কষ্ট, দুঃখ আর আশা—সব একসাথে দেয়। তুমি যদি হৃদয় দিয়ে বাঁচো, সবকিছু সহ্য করতে পারবে।”
শৈশব কাটল পড়াশোনা, ছোটখাটো কাজ এবং গ্রামের ছোট খেলাধুলায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় রিশাদ মায়ের জন্য রান্না করত, বাড়ি পরিষ্কার করত। তার জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল ধৈর্য এবং আশা।
স্কুলে প্রথম ভালোবাসার ছোঁয়া পেল রিশাদ। তার চোখে বসন্তের আলো, হাসি যেন ফুল ফোটার মতো। সে নামলো অনিক। অনিকের সঙ্গে প্রথম কথাবার্তায় মনে হলো—জীবনের সব রঙ একসাথে এখানে। তারা বন্ধু থেকে প্রেমে নামল, কিন্তু সুখ স্থায়ী হয় না। অনিকের পরিবার শহরে চলে যাওয়ায় দূরত্বে সম্পর্ক ঝলসে উঠল। রিশাদ প্রথমবার বুঝল—ভালোবাসা শুধু আনন্দ নয়, কষ্টও দেয়।
কলেজে ওঠার পর রিশাদ একা শহরে। প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙে বইয়ের দোকানে কাজ, বিকেলে কলেজ। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হলো—জীবন কঠিন, কিন্তু তার হৃদয় অদম্য। সে বন্ধু বানাল নতুন শহরের মানুষদের সঙ্গে, হাসি, কষ্ট, গল্প—সব ভাগাভাগি করল।
একদিন লাইব্রেরিতে একটি মেয়েকে দেখল। ভেজা চুল, গভীর চোখ, নিঃশব্দ হাসি। মেয়েটির নাম আরিয়া। প্রথমবার দেখলেই মনে হলো—এই মানুষটি যেন তার হারানো প্রিয় সঙ্গীর রূপ।
রিশাদ প্রথমবার বুঝল—জীবন শুধু নিজের জন্য নয়, হৃদয়ের গভীরতা অনুভব করলেই প্রকৃত আনন্দ পাওয়া যায়।