🩸 “মৃত হাসির কলেজ”

🩸 “মৃত হাসির কলেজ”

চরিত্র

• শোভো – সাহসী, যুক্তিবাদী, তিনজনের দলের নেতা
  
   
• হামিদ – ভীতু, কিন্তু কৌতূহলী
  
   
• সাকিব – মাঝামাঝি; ভয় পায়, কিন্তু বন্ধুদের ছেড়ে যায় না
  
   

শহরের প্রান্তে একটি পুরনো কলেজ— নাম কেউ এখন আর ঠিক মনে রাখে না।
দেখলে মনে হয়, দেয়ালে যেন পুরনো সময়ের ক্লান্তি জমে আছে। ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ছে, জানালায় মাকড়সার জাল, আর করিডরের শেষ প্রান্তে একটা কালো দরজা— যেখানে কেউ খুব একটা যায় না।

গুজব আছে— রাতে ১২টা বাজলে দ্বিতীয় তলার শেষ রুম থেকে ভেসে আসে এক মেয়ের হাসি।
লোকজন বলে, বহু বছর আগে এখানেই এক ছাত্রী নিজেকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল। কারণ—ভালোবাসার বিশ্বাসঘাতকতা।
আর সেই মেয়েটি আজও নাকি শান্তি পায়নি।

সেদিন দুপুরে তিন বন্ধু—শোভো, হামিদ, আর সাকিব— চুপিচুপি ঠিক করল, আজ কলেজে বাং দিবে না, বরং পেছনের পুরনো গেটে লুকিয়ে থেকে রাতটা কাটাবে কলেজের ভেতরে।

"আজ জানবো আসলে গুজবটা সত্যি না মিথ্যে!" শোভো বলেছিল ঠোঁটে একরাশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে।

বিকেল থেকে তারা কলেজের পেছনের ঝোপে লুকিয়ে ছিল। সূর্য ডুবল, আলো নিভল, চুপচাপ রাত নেমে এল চারপাশে।

রাত ১১:২৫ বাজল। তারা টর্চলাইট জ্বালিয়ে কলেজে ঢুকল।

হাওয়া ঠান্ডা, কিন্তু ভেতরে যেন ঘাম বেরোচ্ছে শরীর থেকে। নিচতলার ক্লাসরুমে হালকা ধুলো উড়ছে, বাতাসে একটা গন্ধ—পচা বই আর পুরনো কাঠের।

তারা একে একে তিনটি ক্লাস ঘুরে দেখল। দ্বিতীয় ক্লাসে এসে দেখে, একটা জানালা আধখোলা।

জানালার বাইরে — কবরস্থান। নিস্তব্ধ, শুধু একটা বাতাসের ঝাপটা এসে জানালার পর্দা নড়াচ্ছে।

সাকিব ফিসফিস করে বলল, "হামিদ, জানালাটা লাগা ভাই… হাওয়া ঢুকছে।"

হামিদ কাঁপা হাতে এগিয়ে গেল। তার চোখ জানালার বাইরে। অন্ধকারের ভেতর মনে হলো — কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

সে blink করল — কিছু নেই। হয়তো চোখের ভুল।

ঠিক তখনই শোভো নিচু গলায় বলল, "চল তাড়াতাড়ি উপরে যাই… ১২টা হতে আর বেশি সময় নেই।"

দ্বিতীয় তলার শেষ রুমে পৌঁছে তিনজন থমকে গেল। দরজাটা বন্ধ, কিন্তু ভিতর থেকে আসছে কিছু শব্দ — হালকা হাসি… তারপর কান্না… তারপর আবার হাসি!

শোভো দরজা ঠেলে খুলল।

ভেতরে কেউ নেই। কিন্তু ক্লাসের মাঝখানে একটা পুরনো দোলনা চেয়ার, নিজে নিজেই দুলছে।

কেউ বাতাস দেয়নি, তবুও চেয়ারটা আস্তে আস্তে “কড়… কড়…” শব্দ করছে।

হামিদের টর্চলাইট কাঁপছে। তার শ্বাস দ্রুত হচ্ছে।

হঠাৎ — দেয়ালের ঘড়ি টং করে বাজল। ১২:০০ AM

আর তখনই পুরো ঘর জুড়ে এক ভয়ানক হাসি! যেন কেউ ছাদের ওপর থেকে নিচে ঝাঁপ দিল, হাসতে হাসতে, কাঁদতে কাঁদতে…

টর্চলাইট নিভে গেল।

এক মুহূর্তে পুরো অন্ধকার।

“শোভো... সাকিব…” হামিদের কণ্ঠ কাঁপছে, “তোমরা কোথায়…?”

ঠিক পেছন থেকে কেউ ফিসফিস করল, “তুমি জানালাটা লাগাওনি, তাই আমি এসেছি…”

শীতল একটা নিঃশ্বাস হামিদের ঘাড়ে লাগল। সে ঘুরে তাকালো— কেউ নেই!
শুধু একটা মেয়ের লম্বা ছায়া, কালো চুলে ঢাকা মুখ, আর ঠোঁটে রক্তমাখা হাসি।

এক মুহূর্তেই হামিদ চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

পরদিন সকালে শোভো আর সাকিব হামিদকে মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পায়।
তার চোখ খোলা, মুখে সেই একই জমাট হাসি— যেন মৃত্যুর আগের ভয় এখনো মুখে আঁকা।

তারা দৌড়ে যায় হামিদের বাড়িতে, সব খুলে বলে। হামিদকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।

কিন্তু… ডাক্তার বেরিয়ে এসে শুধু একটাই কথা বলল — “মৃত।”

হামিদের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই, কিন্তু তার বুকের মধ্যে গভীর কালো দাগ — যেন কেউ ভিতর থেকে তাকে পুড়িয়ে দিয়েছে।

 সংক্ষিপ্ত সারমারি: শহরের প্রান্তে এক পুরনো কলেজ—যার শেষ রুমে রাত ১২টায় ভেসে আসে এক মৃত মেয়ের হাসি।

সাহসী তিন বন্ধু রাতে কলেজে প্রবেশ করে সত্যতা যাচাই করতে যায়, কিন্তু তারা যা পায়, তা কল্পনারও বাইরে: দুলতে থাকা একটি চেয়ার, রক্তমাখা হাসি আর এক অদ্ভুত ছায়া।

পরদিন সকালে বন্ধুরা হামিদকে অচেতন অবস্থায় পায়—দেখে মনে হয়, মৃত্যু ভেতর থেকে তাকে স্পর্শ করেছে।