Posts

চিন্তা

ভাষা নিয়ে ভাসা ভাসা আলাপ

November 13, 2025

সাজিদ রহমান

45
View

ইংরেজি বলতে পারা নিয়ে সামাজিক মাধ্যম সরগরম। ভাবলাম, তাওয়া গরম থাকতে থাকতে আমি কিছু কথা সেঁকে নেই। তাওয়া গরমের একটা অন্য গল্প আছে। আজ আর সেদিকে না যাই। 

আগে একটা চিন্তা মাথায় আসতো। সারা দুনিয়ার লোক ইংরেজি বোঝে। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। এরকম একটা কমন ভাষা না থাকলে কী দাঁড়াত, ভেবে দেখেছেন? পৃথিবী আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, নিশ্চয় অনেকখানি পিছিয়ে থাকতো। ফ্রেঞ্চ, জার্মান, স্প্যানিশ যত চেষ্টা করুক, ইংরেজির ধারে কাছে যাওয়ার সুযোগ নাই। 

ইংরেজি শুধু একটি ভাষা নয়, একটি বিশেষ জ্ঞান, টেকনিক্যাল টুলস। যেটা জানা থাকলে একজনের জন্য অনেক দরোজাই খুলে যায়। ইংরেজি ভাষা জানা, ইংরেজিতে কথা বলতে পারা মানে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা। 

আবার না জানলেও অসুবিধা নেই, জীবন কোন কিছুর জন্য থেমে থাকে না। 

২। 
ছোটবেলায় ভাবতাম, খুব ইংরেজি পারি। কিন্তু যতদিন যায়, বুঝতে পারি, কত কম বুঝি। নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতাম, ইংরেজি কম পারি সেটা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু অবাক লাগে, প্রায় ১৫ বছর ইংরেজি শিখেও ২ লাইন ইংরেজি কইতে পারিনা। শুধু আমি নই, প্রায় ৯০% এর একই অবস্থা। এটা আমাদের ব্যর্থতা, নাকি সিস্টেমের গলদ, নাকি ২ পক্ষের? 

৩। 
প্রায় বুড়া বয়সে ইংল্যান্ড যাই। দুবাই এ ট্রানজিট। এয়ারপোর্টে ওয়াশরুমে ঢুকেছি। ক্লিনার কাজ করছে। সে কোন ভূমিকা ছাড়াই হিন্দিতে আলাপ শুরু করলো। সেই লোকরে বললাম, আমি বাংলাদেশী, তোমার ভাষা বুঝিনা। 

ভার্সিটিতে ডর্মে ঠাই পেলাম। স্টাগহিল কোর্ট ২২ তে। একজন পিওর ইংরেজ, ১ জন ইন্ডিয়ান, ১ জন পাকিস্তানী, ১ জন চাইনিজ, ১ জন ব্রাজিলিয়ান (পরে আরও ১ জন)। ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানী ২ জনই আমার সাথে হিন্দি/উর্দুতে কথা বলার চেষ্টা করে। ছোটবেলা থেকে হিন্দি সিনেমা দেখি, পাড়ায় অনেক উর্দুভাষী মানুষ ছিল। মোটামুটি ভালোই বুঝি, ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলতেও পারি। কিন্তু ওদের সাথে যথারীতি ইংরেজিতে বাৎচিত করি। যতটুকু ইংরেজি পারি ওটুক দিয়েই। 

শুধু লন্ডনের রাস্তায় নয়, অনেক দেশেরই শহরে ঘুরলে, চামড়ার রং দেখে অনায়াসে লোকজন হিন্দি ভাষা অফার করে। ওদের ধারণা ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের হলেই হিন্দি বুঝবে। এটাকে বলিউড ইফেক্ট বলা যেতে পারে। 

৪। 
একজন লোক যদি ভীষণ প্রতিপত্তির অধিকারী হয়, অনেক দূরের লোকজনও তাঁকে নিজের আত্মীয় পরিচয় দেয়। একইভাবে এর উল্টাটাও সত্য। 

একটি দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়, তাঁর সব জিনিসই মূল্যবান হয়ে দাঁড়ায়। যতটুকু জানি, মেসি ইংরেজি বলতে পারেনা বললেই চলে। এরপরও সারা দুনিয়ায় লক্ষ লক্ষ ইংরেজি শব্দ লেখা হয় তাঁকে নিয়ে। 

দুই বন্দোপাধ্যায় অর্থাৎ মানিক ও বিভূতিভূষণ, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস, জীবনানন্দ দাস, কাজী নজরুল ইসলামেরা যা সৃষ্টি করে গেছেন সেসব কালেভদ্রে অন্য ভাষায় অনূদিত হয়। চর্চা হয়না বললেই চলে। আজ আমরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ হলে বাংলা সাহিত্যের কত প্রেমিক প্রবর জুটত, গুণে শেষ করা যেতোনা। আমাদের সংস্কৃতি, আচার ব্যবহারও দুনিয়ার সেরাদের মধ্যে ঠাই পেয়ে যেত আশা করি।

ভাষার মর্যাদার সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যতদিন আমাদের অর্থনীতি সবল থেকে প্রবল না হয়, ততদিন ইংরেজি না জানায় হীনমন্যতা থাকবে। আর অর্থনীতি উন্নত হওয়ার আগে ইংরেজি এমনিতে শেখা হয়ে যাবে।

Comments

    Please login to post comment. Login