অচেনা আজান
একটি ছোট শহরে রাফি নামে এক তরুণ থাকত।পড়াশোনায় ভালো, বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-আড্ডায় সময় কাটাত, কিন্তু নামাজের সময় হলে সে বলত— “আরে, এখন একটু ব্যস্ত আছি, পরে পড়ব।” আরে এখনতো বয়সই হয়নি।
এভাবে “পরে পড়ব” “পরেপড়ব” বলতে বলতে দিন, সপ্তাহ, মাস কেটে গেল। তার বাবা মসজিদে যেতেন নিয়মিত, মায়ের হাতেতসবিহ ঝুলত সারাদিন, কিন্তু রাফি ভাবত—“ধর্ম তো মনের ব্যাপার, নামাজ না পড়লেও আমিখারাপ মানুষ নই।”
হঠাৎ একদিন রাফির বাবা ইন্তিকাল করেন। সে তার বাবার দাফন কাপনের সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করে। তারপর সে অত্যন্ত বেদনা ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে রাতে ঘুমাতে গেল। কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসেনা। বাবার স্মৃতি মনে মনে করতে করতে একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে।
তারপর হঠাৎ ফজরের সময় ঘুম ভাঙল আজানের শব্দে। কিন্তু আজানের ধ্বনি যেন অন্যরকম— এক অচেনা, কাঁপাকণ্ঠে ডাকা হচ্ছে। জানালা খুলে দেখে, পাশের মসজিদের মাইকে নতুন এক মুয়াজ্জিন। কারণআগের মুয়াজ্জিন— তার বাবা— গত দিন ইন্তেকাল করেছিল এবং রাতে তার জানাজা সম্পন্ন হয়েছিল।
রাফি স্তব্ধ হয়ে গেল। বাবার সেই আজান, যা প্রতিদিন শুনেসে ঘুম ভাঙত, আজ আর সেই বাবা নেই।কান্নাভেজা চোখে সে মসজিদের দিকেদৌড়াল। সেদিন সে প্রথমবার নামাজেদাঁড়িয়ে অনুভব করল—ধর্ম শুধু “মনের বিষয়” নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে জীবনের বন্ধন। মনের অজান্তেই তার ইসলামের প্রতি, ধর্মের প্রতি সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল।
সেই দিন থেকে রাফি কখনও আজান শুনে আর বসে থাকেনি।
নৈতিক শিক্ষা: ধর্ম পালনে অবহেলা করা মানে নিজের আত্মার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। একদিন সেই সম্পর্কই হবে একমাত্র আশ্রয়।