গ্রামের শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে থাকা ভাঙাচোরা পুরনো বাড়িটা সবাই শুধু “অভিশপ্ত বাড়ি” নামেই চিনত। দিনের বেলাতেও বাতাসে সেখানে একটা অদ্ভুত ঠান্ডা ভাব লেগে থাকত। গ্রামের লোকেরা বলত, বহু বছর আগে সেই বাড়িতে নাকি এক পরিবার রহস্যজনকভাবে মারা যায়। তারপর থেকেই বাড়িটার চারপাশে অদৃশ্য পায়ের শব্দ, কান্না আর ছায়ার দেখা পাওয়া যায়।
একদিন গ্রামের নতুন স্কুলশিক্ষক রিয়াদ সিদ্ধান্ত নিলেন—অভিশপ্ত বাড়ির রহস্য তিনি উদঘাটন করেই ছাড়বেন। তিনি ভূত-প্রেত বিশ্বাস করতেন না। গ্রামের লোকেরা তাঁকে অনেক বোঝালেও তিনি শুনলেন না। রাতের অন্ধকার নামতেই তিনি হাতে টর্চ নিয়ে সেই বাড়ির দিকে হাঁটলেন।
বাড়ির দরজাটা যেই ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন, সঙ্গে সঙ্গে এক প্রবল শীতল হাওয়া তাঁর শরীর ছুঁয়ে গেল। মেঝেতে ভাঙা কাঁচ, দেওয়ালে আঁচড়ের দাগ—সবকিছুতেই একটা অস্বাভাবিকতা। হঠাৎ টর্চের আলো যেন নিজে নিজে নিভে গেল। রিয়াদের বুক ধড়ফড় করে উঠল। দূরে কোথাও যেন কারও পদশব্দ শোনা গেল—ধীরে ধীরে তাঁর দিকেই এগিয়ে আসছে!
তিনি অন্ধকারে হাতড়ে টর্চ ঠিক করতে চেষ্টা করছিলেন। তখনই পিছন থেকে একটা দীর্ঘ নিশ্বাসের মতো শব্দ—“ফিরে যাও…”
রিয়াদ চমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। ভয়ানকভাবে ঠান্ডা একটা বাতাস তাঁর ঘাড়ে লাগল। মনে হচ্ছিল কেউ খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দৌড়ে বের হতে চাইলেন, কিন্তু দরজাটা যেন নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল।
ঘরের ভেতর হঠাৎ ফিসফিস শব্দ—“আমাদের মুক্তি দাও…”
রিয়াদ বুঝতে পারলেন ভয়েই যদি পিছিয়ে যান, তবে সত্য জানতে পারবেন না। তিনি মোমবাতি জ্বালালেন। মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় দেয়ালে হঠাৎ মানুষের ছায়া দেখা গেল—কিন্তু ঘরে কেউ নেই! ছায়াগুলো কাঁদছিল… আর ধীরে ধীরে দেহহীন আকৃতিতে রূপ নিচ্ছিল।
রিয়াদ সাহস করে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কে?”
একটি ম্লান কণ্ঠ ভেসে এলো, “আমরা সেই পরিবার… যে পরিবারকে লোভ আর প্রতারণার কারণে হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের আত্মা বাড়িতে আটকে আছে। সত্য প্রকাশ করো… তাহলে আমরা মুক্তি পাব।”
মোমবাতির আলো হঠাৎ নিভে গেল। অন্ধকারে বাড়িটা যেন কেঁপে উঠল। রিয়াদ প্রাণপণ চেষ্টা করে দরজা খুলে দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। পিছনে তাকাতেই দেখলেন, জানালার ফাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়ামূর্তিগুলো তাঁকেই দেখছে… যেন অপেক্ষায় আছে সত্য প্রকাশের।
পরদিন রিয়াদ গ্রামবাসীদের সেই ঘটনার কথা বললেন। প্রথমে কেউ বিশ্বাস করেনি। পরে বাড়িটির পুরোনো নথিপত্র খোঁজ করে সত্যি একটি হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেল। হত্যাকারীদের ইতিহাস প্রকাশ হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে বাড়ির চারপাশের অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো কমে গেল।
গ্রামবাসীরা বলে—যেদিন সত্য প্রকাশ পেল, সেদিন রাতেই বাড়ি থেকে ফিসফিস শব্দ শোনা যায়—
“ধন্যবাদ…”
তারপর সব নীরব।
কিন্তু রিয়াদ আজও ভাবে—যদি সেদিন দরজাটা আর না খুলত…?
#RohossomoyGolpo #VuterGolpo #BanglaHorrorStory #Suspense #Thriller #GhostStory #MysteriousStory
