Posts

গল্প

আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকে নিয়ে হাসি তামাশা

November 23, 2025

Md. Anwar kadir

31
View

রাজু লক্ষ্য করলো স্কুল থেকে আসার পর তার মেয়েকে খুব খুশি দেখাচ্ছে
সে একা একাই অত্যন্ত হাসছে। প্রথমে পাত্তা না দিলেও পরে সে এত হাসাহাসির কারণ জিজ্ঞেস করলো মেয়েকে। 
আসলে তার একটা ক্লাসমেট বান্ধবী আছে, দেখতে অত্যন্ত কালো। সে এতটাই কালো যে তাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে, এমনকি শিক্ষকরাও মজা করেন। একজন বয়স্ক শিক্ষক তো মজা করে ওর নাম দিয়েছে 'মা কালী'। 
সে হিন্দু মেয়ে, তারপরও কেউ তাকে 'মা কালী' বললে রেগে যায়। 
ফলে যা হয়েছে তা হলো, সবাই তাকে আরো বেশি ব্যঙ্গ করে 'মা কালী' বলে ডাকে।
তো আজকে সকালে সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় পানি জমেছে কোথাও কোথাও। সেই মেয়েটা জমে থাকা কাদায় পড়ে গিয়ে খুবই হাস্যকর অবস্থা হয়েছে। সেটা কয়েকজন ভিডিও করে রেখেছে। ছবিও তুলেছে।
সেটা মনে করেই সে বারবার হাসছে। 
রাজু তার মেয়েকে কাছে ডেকে বসতে বললো। 
তারপর জিজ্ঞেস করলো,"সে যখন পড়ে গেছে, আপনি কি তাকে উঠে দাড়াতে সাহায্য করেছেন?"
মেয়ে উত্তর দিলো,"ওকে সাহায্য করতে গেলে তো আমার হাতেও কাদা লাগবে।"
রাজু বললো,"যদি ওই মেয়ে না পড়ে গিয়ে আপনার সবচেয়ে কাছের কোন বান্ধবী পড়ে যেতো? তখনও কি সাহায্য করতেন না?"
মেয়ে উত্তর দিলো,"তখন তো অবশ্যই এগিয়ে যেতাম।"
রাজু বললো,"দেখেন মা। কারো দু:খ-কষ্ট দেখে একজন মুসলিম কখনও আনন্দ পেতে পারেনা। আর সামান্য ছোট একটা ভালো কাজ আপনাকে আল্লাহর কাছে প্রিয় করে তুলতে পারে।"
মেয়ে বললো,"কিন্তু বাবা! সে তো কালো মেয়ে!"
রাজু বললো,"আপনি তো তার মন দেখেননি। তার মন হয়ত অনেক ভালো। যেমন, হযরত বেলাল রা:, যার উপর আল্লাহ অনেক সন্তুষ্ট ছিলেন।"
মেয়ে বললো,"সে অনেক মেধাবী কিন্তু! তার রেজাল্ট আমার চেয়েও ভালো।"
রাজু বললো,"মাশাআল্লাহ! দেখেছেন? তার উপর আল্লাহ হয়ত বেশি সন্তুষ্ট! তার সাথে বন্ধুত্ব করেন, লাভ হবে। হয়ত তার কাছ থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারবেন যদি আল্লাহ চান।"
মেয়ে বললো,"তাকে নিয়ে মজা করলে সমস্যা কি?"
রাজু উত্তর দিলো,"মহান আল্লাহ সূরা আত্-তীনের ৪নং আয়াতে বলেছেন, 'আমি মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।' 
এরপর আমাদের এমন দু:সাহস কিভাবে হয় যে তার সৃষ্টি মানুষকে নিয়ে হাসি তামাশা করি? আপনি কি পারবেন কোন কিছু সৃষ্টি করতে?"
মেয়ে চুপ করে আছে। 
রাজু বললো,"আমরা যখন কোন মানুষের বাহ্যিক আকৃতি বা রঙ নিয়ে হাসি তামাশা করি, তখন আল্লাহর কোরানের সেই বাণীকে নিয়েই হাসি তামাশা করছি। এটা কি আল্লাহ ক্ষমা করবেন?"
মেয়ে উত্তর দিলো,"আমি তো আগে জানতাম না। আর সবাই যে ওকে নিয়ে মজা করে?"
রাজু বললো,"হয়ত বাকিরাও আপনার মতো বিষয়টি জানেনা। আপনার দায়িত্ব সবাইকে বুঝানো। সবাইকে হয়ত বুঝাতেও পারবেন না। তবে যাদেরকে পারেন, তাদেরকে বুঝাবেন।"
মেয়ে সায় দিলো,"সে তাই করবে।"
রাজু বললো,"কারো বিপদে দাড়িয়ে মজা দেখা কিন্তু মুসলমানদের কাজ নয়। আর ভিডিও করা বা ছবি তুলে তাকে অপদস্ত করাও তো কবিরা গুনাহ। আপনি কাউকে কোনভাবে কষ্ট দিলে সেটা আল্লাহও ক্ষমা করবেন না। আল্লাহর ওই বান্দার কাছ থেকেই ক্ষমা নিতে হবে। তাই সাবধান।"
একটু থেমে রাজু আবার বললো
,"মনে করেন, কেউ কাউকে কষ্ট দিলো, এবং মৃত্যুর আগে তাদের মাঝে আর দেখা হলোনা। এবার পরকালে এটার হিসাব বুঝিয়ে দিতে হবে। ভাবা যায়?"
সেদিন মেয়ে বাজারের খাটো নাপিতকে নিয়েও হহাসাহাসি করেছিলো। বেচারা একটা চেয়ারে দাড়িয়ে লোকের চুল কাটে। সে কথাটাও মনে করিয়ে দিলো মেয়েকে। 
এমনিতেই খাটো হওয়ার জন্য তাকে সব কাজেই অনেক কষ্ট করতে হয়। তারপর কেউ তাকে নিয়ে মজা করলে সে অবশ্যই কষ্ট পাবে। আর আল্লাহ অবশ্যই তার বান্দার কষ্ট প্রদানকারীকে ক্ষমা করবেন না যতক্ষন না সেই বান্দা তাকে ক্ষমা করেন। 


 

Comments

    Please login to post comment. Login