রনি আর শাকিল রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মাঝে মাঝে ওরা আড্ডা দেয়, গল্পগুজব করে। শাকিলের মন খারাপ। বউ কিছু একটা নিয়ে রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে। বেচারা বড্ড ঝামেলায় আছে।
লাভ ম্যারেজ ছিলো না, তবে ওরাই নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছিল। আজকাল কিছুতেই দুজনের মাঝে মিল হচ্ছেনা। ওর বউ কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে গেছে ইদানীং, সবকিছুতেই খিটখিট করে।
শাকিলের এসব দেখার সময় নেই। অফিসে বসের প্যারা নিতেই জীবন শেষ। সে প্রায় দিনই বাইরে খাবার খায় ঝামেলা এড়ানোর জন্য। রনি বুঝায় নতুন মা হয়েছে, হয়তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনা। তাছাড়া, মা হওয়ার সময় মেয়েদের হরমোনাল ব্যালেন্স উল্টাপাল্টা হয় কিছুটা, তখন মেজাজের কিছু ঠিক থাকেনা।
শাকিল বুঝতে পারে, কিন্তু অফিসের কাজের চাপেই সে নাজেহাল। বাসায় গিয়ে বাচ্চা কোলে নেয়ার সময় পায়না। একটা কাজের লোক খুজছে অনেকদিন, পাচ্ছেনা।
রনি মজা করে বললো,"এসব চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুদি দোকান দে গিয়ে। যে চাকরি করে বউ-বাচ্চাকে সময় দেয়া যায়না সে চাকরি করার মানে হয়না।"
শাকিল অফিসের কলিগের সাথে বেড়াতে গিয়েছিল। ছবিগুলো দেখায় রনিকে। মেয়ে কলিগদের সাথেই ছবি বেশি। দেখতে একটু সুন্দর বলে মেয়েরা তার প্রতি বেশিই আগ্রহী। সেও মজা নিচ্ছে। এর মাঝে বলিউড অভিনেত্রীর প্রায় উলঙ্গ একটা ছবিও আছে। শাকিল তাড়াতাড়ি সরিয়ে ফেললো সেটা। রনি খেয়াল করলো শাকিল পাশের টেবিলে বসা একটা মেয়েকে হা গিলে খাচ্ছিলো।
রনি বললো,"দোস্ত। আমি মনে হয় আচ করতে পারছি তোর সমস্যার গোড়ায় কি আছে। যদিও অনেকগুলো কারণ ছাড়া পারিবারিক কলহ হয়না।"
শাকিল যেন মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে। সে বুঝতে পারছে রনি তাকে কি বলবে।
সে বললো,"আমার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে চলে যাইসনা আবার।"
রনি বললো,"সিদ্ধান্তে যাচ্ছিনা। যা দেখতে পাচ্ছি তাতে শুধু অনুমান করছি। আমার মনে হয় তোর চরিত্রের বিচ্যুতি বা স্খলন ঘটেছে। তুই বাসায় বউ রেখে দুপুরে সুন্দরী কলিগের সাথে লাঞ্চ করছিস প্রতিদিন।"
শাকিল বললো,"এটা কি আর কেউ করেনা? তাদের সবার পারিবারিক কলহ লাগে? আর এই মেয়েটার সাথে তো আমার শুধু বন্ধুত্ব রয়েছে, আর কিছুইনা।"
রনি বললো,"কার বাসায় কলহ নেই সেটা তো আর আমরা জানিনা। আমি বিশ্বাস করি কারো চরিত্রের স্খলন ঘটলে তার কোন না কোন সমস্যা হবেই। আর তুই তো নিজেই বলতি যে ছেলে আর মেয়েতে কখনো বন্ধুত্ব হয়না। ওই মেয়েকে নিয়ে তোমার মনে কি আছে সেটা তো আমি জানিনা। আর প্রতিদিন একসাথে লাঞ্চ করার পরেও যদি বলো যে তোমার মনে কিছুই হয়না, তাহলে তোর পুরুষত্ব পরীক্ষা করার জন্য ডাক্তারের কাছে যা।"
শাকিল শান্ত হয়ে গেছে৷ সে জানে সে তলে তলে চুরি করছে নিজের গোডানেই।
সে জানতে চাইলো,"কেন সমস্যাগুলো হয়? কি মনে হয় তোর?"
রনি উত্তর দিলো,"আমি বিশ্বাস করি, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ছোটখাটো চারিত্রিক স্খলন ঘটলে এরকম সমস্যা দিয়ে সাবধান করেন যেন সীমা লঙ্ঘন করার আগেই ঠিক পথে ফিরে আসে।"
শাকিল জানতে চাইলো,"তুই কি বলতে চাস যে আমি আল্লাহর প্রিয় বান্দা?"
রনি জবাব দিলো,"অবশ্যই। তুই তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর বাইরে না ঘুরে পরিবারকে সময় দিয়ে দেখ, তোর নিজেরও ভালো লাগবে।"
শাকিল নিচের দিকে চেয়ে আছে। রনি আবার বললো,"সীমা লঙ্ঘনকারীদের দলে যাইস না। নিজের ভিতরে থাকা সমস্যাগুলো খুজে বের করে সংশোধন করে ফেল। দেখবি, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসবে৷"
শাকিল বললো,"হ্যা। আমি ঠিক হয়ে যাবো। কিন্তু বাসায় তো আজকাল যেতে মন চায়না। সব সময় আক্রমণ করার জন্য সে প্রস্তুত থাকে। সারাদিন বকবক করে৷"
রনি বললো,"তুই ছাড়া কে আছে যাকে সে বলবে?আর এটা মেয়ে সুলভ আচরণ। যখন তার বলা শেষ হয়ে যাবে তখন নিজ থেকেই শান্ত হয়ে যাবে। তুই প্রতি আক্রমণ করিস না। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবি। আর লজিক খাটিয়ে তার ভুল ধরতে যাইস না। সব ঠিক হয়ে যাব।"
চলে যাবে এমন সময় রনি আবার ডাক দিয়ে বললো,"রাতে নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে প্রথমে মাফ চাইবি। তারপর সাহায্য চাইবি। যদি মন থেকে চাইতে পারোস মনে হয়না আর কোন সমস্যা থাকবে।"
29
View