— অদেখা ব্যথার শহর
শহরটা এত আলোয় ভরা,
কিন্তু মানুষের ভিতরটা অন্ধকার।
এখানে সবাই বেঁচে থাকে,
কেউই বাঁচে না।
কারণ এই শহরে একটা সত্য খুব চুপচাপ ছড়িয়ে আছে—
কেউ… কোথাও… ভালো নেই।
১. মায়া — যে সবচেয়ে বেশি হাসে
মায়ার হাসিটা ছিল শহরের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস।
বন্ধুরা বলত,
“তুই হাসলে মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে।”
কিন্তু রাতে দরজা বন্ধ হলেই
মায়া মোবাইলের স্ক্রিনে নিজের মুখ দেখে বলে—
“আমি ঠিক নেই। কেউ জানে না।”
ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা—
“মরে গেলে সবাই অবাক হবে—কারণ আমি তো সবসময় হাসতাম।”
২. রিদোয়ান — যে সবসময় শক্ত থাকার অভিনয় করে
লোকেরা বলে—
“এই ছেলেটা পাহাড়ের মতো শক্ত।”
কিন্তু তার মনের ভিতরে পাহাড় নয়—
ধসে যাওয়া মাটি।
রাতে তার মাথার ভেতর বাজে তিনটা শব্দ—
“দেনা… চাপ… আমি?”
আর বালিশ ভিজে থাকে,
কিন্তু ঘর শুকনোই থাকে।
কারণ সে কান্না করলেও
কেউ শোনে না,
শুনতেও চায় না।
৩. সায়মাম — সবচেয়ে শান্ত, কিন্তু ভিতরে সবচেয়ে যন্ত্রণায়
সায়মাম এমন মানুষ,
যে সবার কথা শোনে।
সবার কান্না ধরে।
সবার সমস্যার পাশে দাঁড়ায়।
কিন্তু তার নিজের সমস্যা?
সেগুলো শোনার সময়
কোনো মানুষই পায়নি।
সে তাই চুপ হয়ে গেছে।
চুপচাপ এতটাই,
যে তার নীরবতা
ধীরে ধীরে তাকে খেয়ে ফেলছিল।
একদিন তার কণ্ঠে শুধু একটা শব্দ রইল—
“কেউ আছে?”
কিন্তু উত্তর এল না।
৪. চারজনের কোনোদিন দেখা হয়নি
তাদের গল্প আলাদা,
জীবন আলাদা,
পথ আলাদা।
কিন্তু তাদের ব্যথা—
একই।
অদৃশ্য ক্ষত।
যে ক্ষত দিনের আলোয় ধরা পড়ে না।
তারা জানে না,
একই শহরে আর তিনজন মানুষ
ঠিক তাদের মতোই
শ্বাস নিতে নিতে ভেঙে পড়ছে।
শেষ রাত
শহরটা তখনো গরম,
হিউম্যান-ট্রাফিক তখনো ব্যস্ত,
লোকজন তখনো হাসছে—
হাসির মতো দেখতে কিছু একটা মুখে টেনে।
ঠিক একই রাতে
মায়া ছাদের ধারে দাঁড়িয়ে,
রিদোয়ান বাসস্ট্যান্ডে মাথা নিচু করে,
সায়মাম ঘরের অন্ধকারে—
একই আকাশের দিকে তাকাল।
চারজন চার জায়গায় দাঁড়িয়ে
একটাই কথা ভাবছিল—
“আমি একা ভেঙে যাচ্ছি।”
কিন্তু তারা জানত না—
তাদের এই ব্যথা
শুধু তাদের না,
এই শহরের সবারই।
এই শহরটা আসলে একটা মুখোশের জঙ্গল—
যেখানে হাসি মানে সুখ নয়,
চুপ থাকা মানে শান্তি নয়,
আর বেঁচে থাকা মানে ভালো থাকা নয়।
শেষ লাইন
সেই রাতেই
চারজনের মনে একই সত্য কাঁপল—
**“কেউ কোথাও ভালো নেই…
সবাই শুধু ভালো থাকার অভিনয় করছে।”**
কিন্তু তবু,
একটা ছোট দয়া,
একটা ছোট শুনে নেওয়া,
একটা ছোট ছোঁয়া—
হয়তো কাউকে আবার
“ভালো নেই” থেকে
“ভালো লাগছে”-তে ফিরিয়ে আনতে পারত।