বন্ধু উজ্জলের বাড়িতে এসেছি। ছোটখাটো একটা ব্যবসায় করে, ভালোই চলছে ওর৷ ছেলেটার বয়স ৫বছর আর মেয়েটার ৩বছর। আজকে সে সারাদিন ফ্রি আছে, তাই আমার সাথে আড্ডা দিতে চাইলো, আর আমারও কোন কাজ ছিলো না।
দুপুরের দিকে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা আসলো ওকে খুজতে। ওর স্ত্রী এসে জানালো ব্যাংক কর্মকর্তার কথা। বাচ্চা দুটো আমার পাশে বসে খেলছিল। ওরা সেই ব্যাংক কর্মকর্তার সাথে খেলতে যেতে চাচ্ছিলো। ওদের বাবা-মা আটকালো।
বন্ধু উজ্জ্ল তো তার স্ত্রীর উপর রেগে আগুন। কেন ব্যাংক কর্মকর্তাকে বললো যে বাসায় আছে। তবে ওর স্ত্রী ওকে শান্ত করে বললো, যে সে শুধু তাকে বসতে দিয়েছে, বলেনি যে তার স্বামী বাড়িতে আছে। আমি তো অবাক। ছুটির দিনে ব্যাংক কর্মকর্তা কেন আসবে?
উজ্জ্বল তার স্ত্রীকে বলে দিতে বললো যে, সে বাড়ি নেই। ওর ছেলেটা বললো,"বাবা। তুমি তো বাড়িতে আছো। কেন মিথ্যে বলছো?"
উজ্জ্বল ছেলেকে ধমক দিলো। বুঝতে পারছি। সে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় করছে, এখন ফেরত দিতে বেশি সময় লাগছে।
বললাম,"দোস্ত। তোর ব্যবসায় তো ভালোই চলছে। তবে কেন এমন করছিস?"
সে বললো, বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এটাই করে থাকে। আর এই পরামর্শটাও কোন এক বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই সে পেয়েছে।
বললাম, "ব্যাংক মামলা করলে ঝামেলায় পড়বি৷ আর বড় ব্যবসায়ীরা তো রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে কাজে লাগায়। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ঘুষ দিয়ে খুশি রাখে। ঘুষের টাকা দিয়ে ওরা নারীবাজী করে বেড়ায়, আরো কত কি খারাপ কাজ। কেন টাকা দিয়ে অন্যের পাপের অংশ কিনবি?"
সে উত্তর দিলো,"এত ভালো হয়ে তো দুনিয়াতে থাকা যাবেনারে বোকা।"
আমি বললাম,"দুনিয়াতে তো আমরা থাকার জন্য আসিনি বন্ধু। এটা স্বল্পকালীন যাত্রা। যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে।"
এমন সময় ওর মেয়ে কান্না করতে করতে আসলো৷ ওর ভাই ওকে মেরেছে। অপরাধীকে সামনে আনার পর সে সরাসরি অপরাধের কথা অস্বীকার করছে। সাক্ষী থাকার পরে।
আমি বললাম,"মিথ্যে বলতে হয়না বাবু। সত্য বললে কেউ তোমাকে শাস্তি দিবেনা।"
ছেলে জবাব দিলো,"একটু আগে তো বাবা মাকে মিথ্যে কথা বলতে বললো?"
সবাই থতমত খেয়ে গেলাম। পরে উজ্জলকে বুঝালাম যে, ব্যাংক ওকে যে টাকা দিয়েছে ব্যবসায় করার জন্য সেটা ব্যাংকের টাকা না৷ হয়ত কোন গরীব দুখী রেখেছে। সে ফেরত না দিলে ব্যাংক কোথা থেকে ফেরত দিবে?
আরো বুঝালাম ব্যবসায় করতে চাইলে নিজের টাকায় করো। সুদের উপর টাকা নিয়ে ব্যবসায় করে যদি বড় ধরনের লস খাও তখন তো বাড়ি-ঘরসহ যাবে।
10
View