Posts

উপন্যাস

চাঁদের আলোয় লুকিয়ে থাকা গান"

December 1, 2025

niloy

14
View

এক সময়কার কথা, যখন আকাশ এবং পৃথিবীর মধ্যে দূরত্ব ছিল খুব কম, তখন 'রূপা' নামে এক ছোট্ট মেয়ে এক পাহাড়ি গ্রামে বাস করত। রূপার বয়স সাত বছর, আর তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু ছিল তার গ্রামের পেছনের বন। কিন্তু রূপার বিশেষত্ব ছিল অন্যখানে—সে জন্ম থেকেই কথা বলতে পারত না।

রূপা কথা বলতে না পারলেও, তার হাতে ছিল অদ্ভুত জাদু। সে যখন খুব খুশি হতো, তখন তার হাতে থাকা পুরাতন একটি বাঁশের বাঁশি (যা সে বনে কুড়িয়ে পেয়েছিল) নিজে থেকেই বেজে উঠত। সেই সুর এত মিষ্টি ছিল যে, বনের পাখিরাও গান গাওয়া থামিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত। গ্রামের লোকেদের বিশ্বাস ছিল, এই বাঁশির সুর চাঁদের আলো থেকে তৈরি।

একদিন, গভীর রাতে গ্রাম থেকে প্রায় সব আলো নিভে গিয়েছিল। গ্রামের প্রধান ফসলভর্তি গুদামে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। সবাই যখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়, তখন রূপা ছুটে গেল বনের ধারে। সে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তার ছোট বাঁশিটি ঠোঁটে রাখল। ভয়ে তার হাত কাঁপছিল, কিন্তু সে যখন চোখ বন্ধ করে সব ভয় এক করে বাঁশিতে ফুঁ দিলো, তখন কোনো সুর বের হলো না।

রূপা হতাশ হয়ে বাঁশিটা ছুঁড়ে ফেলে দিতে যাচ্ছিল, এমন সময় সে অনুভব করল তার হাতের তালুতে গরম কিছু একটা নড়ছে। সে দেখল, বাঁশিটার ভেতর থেকে ছোট্ট একটা জোনাকি পোকা বেরিয়ে আসছে। জোনাকিটা ফিসফিস করে বলল, "রূপা, সুর তো তোমার মনে লুকিয়ে আছে, বাঁশিতে নয়। ভয়কে সরিয়ে দাও, আর সেই সুর বের করো যা তুমি বলতে পারো না।"

রূপা বুঝল। সে বাঁশিটি তুলে নিল এবং সব চিন্তা ভুলে কেবল তার গ্রামের প্রতি ভালোবাসা আর গুদাম বাঁচানোর ইচ্ছাকে মনে রেখে ফুঁ দিলো। এবার যে সুর বের হলো, তা ছিল আগেকার যেকোনো সুরের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। সেই সুর আগুনের শিখাকে যেন শান্ত করে দিল এবং মুহূর্তের মধ্যে এক তীব্র দমকা হাওয়া এসে আগুন নিভিয়ে দিল!

পরের দিন সকালে, গ্রামের লোক রূপাকে অভিনন্দন জানাতে এলো। গ্রামের প্রধান রূপার হাতে সেই বাঁশিটি তুলে দিয়ে বললেন, "রূপা, তোমার সুরই আমাদের গ্রামকে বাঁচিয়েছে। তুমি কথা না বললেও, তোমার ভালোবাসার সুর হাজারো কথার চেয়েও শক্তিশালী।"

এরপর থেকে রূপা আর কখনো তার নীরবতাকে নিজের দুর্বলতা মনে করেনি। সে বুঝেছিল, পৃথিবীতে এমন কিছু অনুভূতি আছে যা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায় না, তা কেবল মন থেকে আসা সুরে প্রকাশ পায়।

Comments

    Please login to post comment. Login