Posts

গল্প

“দৃষ্টির সীমানা”

December 2, 2025

Biswajit Roy

Original Author জিত

17
View

🌟 শিরোনাম: “দৃষ্টির সীমানা”

(এক মানুষের ভুল–বুঝা থেকে আলো খোঁজার যাত্রা)


---

📖 ভূমিকা

মানুষ কতভাবে বদলায়—কেউ সময়ের চাপে, কেউ কষ্টে, আর কেউ সত্য দেখে।
এই গল্প এমন একজন মানুষের, যার দৃষ্টি ভুল ছিল, কিন্তু হৃদয় ছিল সৎ।
যে মানুষ জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা পেল এমন এক জায়গায়,
যেখানে সমাজ সাধারণত তাকাতেও ভয় পায়।


---

✨ অধ্যায় – ১: একজন নীতিবান মানুষের অস্বস্তি

অরিন্দম রায়। বয়স প্রায় চল্লিশ।
ছোট একটি শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।
লোকেরা তাকে উদাহরণ হিসেবে দেখায়—
কৌভাগ্যবশত দু’একজন বলে,
“লোকটা একটু অদ্ভুত, কিন্তু মানুষ হিসেবে একদম সোনার মতো।”

অরিন্দমের সততা ছিল তার সবচেয়ে বড় পরিচয়—
ঝগড়া নেই, মিথ্যে নেই, কারও ক্ষতি নেই।
কিন্তু তার ভিতরে এক গোপন লজ্জা ছিল—
মেয়েদের দিকে তাকানো থেকে নিজেকে আটকাতে পারে না।
দৃষ্টিতে কোনো কামনা নয়,
বরং একধরনের কৌতূহল—
“মানুষের শরীর কিভাবে গল্প বলে?”
তার মনে হতো শরীরের ভাঁজে মানুষের জীবন লেখা আছে।

তবে সে জানত—
সমাজ এটা পছন্দ করে না।
তাই তার এই দোষটাই তাকে সবচেয়ে বেশি পুড়াতো।


---

✨ অধ্যায় – ২: ভুল বোঝাবুঝির শহর

অরিন্দমের এই অভ্যাস তাকে এক অদ্ভুত জায়গায় টেনে নিয়ে গেল—
শহরের রেড–লাইট এলাকা।

লোকেরা যায় পাপ করতে,
অরিন্দম যেত মানুষের শরীরে লুকানো জীবন চিনতে।

কেউ ভাবত সে খারাপ লোক।
কেউ বিদ্রূপ করত।
কেউ বলত,
“ভদ্রতার মুখোশ পরে এসেছে এখানে!”

কিন্তু সে জানত,
তার উদ্দেশ্য নোংরা নয়।
একদিন সে বলেছিল এক বন্ধুকে—
“মানুষের শরীরও একটা বই। শুধু পাঠক লাগে।”

বন্ধু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল,
কিন্তু অরিন্দমের ভেতরে এই কথাটাই তাকে সামনে নিয়ে যাচ্ছিল।


---

✨ অধ্যায় – ৩: পতিতালয়ের আলো–অন্ধকার

এই এলাকায় অরিন্দম শিখল—
এখানে হাসির আড়ালে কান্না থাকে,
সাজের আড়ালে লুকানো থাকে ক্ষত,
একটি শরীর কখনো কখনো পুরো জীবনের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

একজন নারী তাকে বলেছিল—
“আমার দাম শরীর। আমার নামের দাম শূন্য।”

এই কথাটি অরিন্দমের ভিতরটা দোল খাইয়ে গেল।
সে বুঝল,
মানুষের শরীরকে দেখার দৃষ্টির মধ্যে সমাজ কত ভয়ংকর অন্যায় লুকিয়ে রেখেছে।


---

✨ অধ্যায় – ৪: শিল্পীর জাগরণ

একদিন এক মেয়ের চোখে সে দেখল—
দারিদ্র্য নয়,
ভয় নয়,
বরং এক অদ্ভুত আগুন।
একটা ভাঙা জীবনকে আগলে রাখা দৃঢ়তা।

অরিন্দম সেই চোখ আঁকল।

তার প্রথম ছবি—
“অগ্নিশিখা”

মেয়ের চোখ,
হালকা ছায়ার মতো শরীর,
আর গভীর যন্ত্রণা,
যাকে অরিন্দম আলো বানিয়ে তুলল।

ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করা মাত্র
মানুষ যেন পাগল হয়ে গেল!
হাজার হাজার শেয়ার,
মেয়েদের কাছ থেকে বার্তা—
“আমাদের শক্তি দেখানো উচিত ছিল কেউ।”

মিনিটে মিনিটে ভাইরাল হয়ে গেল অরিন্দম।


---

✨ অধ্যায় – ৫: খ্যাতির ঝড় ও মানুষের পতন

খ্যাতি আসলে আশীর্বাদও, আবার অভিশাপও।
যে মানুষ গতকাল সাধারণ ছিল,
আজ সে গ্যালারির তারকা।

মিডিয়া তাকে তুলে ধরে—
“অবহেলিতদের শিল্পী”,
“নারী শক্তির মুখপাত্র”,
“দেখার নতুন দৃষ্টি”।

অরিন্দমও নিজেকে বদলায়—
আচরণে, পোশাকে, কথায়…
সে বুঝে বা না বুঝে অহংকারের দিকে এগিয়ে যায়।

বন্ধুরা বলে—
“তুই আর আগের মত নেই।”

অরিন্দম থামে না।
সে ভাবে—
“মানুষ বড় হলে তাকে বদলাতেই হয়।”
কিন্তু সে ভুল বুঝে—
বড় হওয়া মানে মানুষ থেকে দূরে যাওয়া নয়।


---

✨ অধ্যায় – ৬: সত্যের মুখোমুখি

একদিন অনেক দিন পর সে আবার গেল রেড–লাইট এলাকায়।
তার মনে হয়েছিল—
বিখ্যাত হওয়ার মূল জায়গা তো এটাই।
দেখবে, বুঝবে, আবার ছবি আঁকবে।

কিন্তু সেদিন সে দেখল এক অদ্ভুত দৃশ্য।

একটি মেয়ে নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে,
শরীর যেন ক্লান্ত,
কিন্তু চোখে প্রচণ্ড তীব্রতা।

অরিন্দম জিজ্ঞেস করল,
“তুমি এখানে কেন?”

মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলল—
“কারণ আমাকে এখানে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সমাজ দেখে আমার শরীর, নাম দেখে না।”

অরিন্দম আবার প্রশ্ন করল,
“আমার ছবি কি তোমাদের শক্তি দেয়?”

মেয়েটি হাসলো—
তবে সে হাসি বিদ্রুপের।

“আপনারা সবাই একই!
আমাদের শরীরকে দেখলেন, গল্প বানালেন, নাম কামালেন, তারপর চলে গেলেন!
আমাদের কষ্ট কাউকে বদলায় না।
কষ্ট শুধু কষ্টই থাকে।”

অরিন্দম প্রথমবার সত্য শুনল—
নির্মম, তীব্র,
কিন্তু সত্য।

সে বুঝল—
তার ছবি মানুষকে শক্তি দেয়নি,
তার কাজ শুধু দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
পরিবর্তন শুরু হয়নি।


---

✨ অধ্যায় – ৭: জীবন বদলে দেওয়ার দৃশ্য

মেয়েটি হঠাৎ বলল—
“চলুন, আপনাকে কিছু দেখাই।”

সে অরিন্দমকে নিয়ে গেল একটি অন্ধকার ঘরে—
যেখানে কয়েকজন মেয়েশিশু বসে আছে।
বয়স ১২–১৩ বছর।
হাত কাঁপছে, মুখে ভয়।

মেয়েটি বলল—
“এসব মেয়েরাও আপনার ছবির ‘কাহিনি’।
আপনি কি পারবেন এদের জীবন বদলাতে?
নাকি আরেকটা ছবি এঁকে ভাইরাল করবেন?”

অরিন্দম ভেঙে পড়ল।
তার ভিতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
সে প্রথমবার বুঝল,
শরীর দেখা আর মানুষ দেখা—এটা এক জিনিস নয়।

ওই ছোট মেয়েদের চোখে সে দেখল—
নিজের সমস্ত ভুল, সমস্ত অহংকার, সমস্ত অন্ধত্ব।

এই দৃশ্যই তার জীবন পাল্টে দিল।


---

✨ অধ্যায় – ৮: দান ও নির্বাসন

পরের দিন অরিন্দম তার সব সম্পদ,
সব ইনকাম,
সব চিত্র বিক্রির টাকা—
মেয়েসন্তানদের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা সংস্থায় দান করে দিল।

সে মিডিয়ার সামনে এসে বলল—
“আমি ভুল করেছিলাম।
মানুষ দেখা শেখেন।”

তারপর আলো থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল।
বাড়ি বদলালো, শহর বদলালো, জীবন বদলালো।


---

✨ অধ্যায় – ৯: পথচলার একজন শিক্ষক

অরিন্দম এখন গ্রাম–বাংলা ঘুরে বেড়ায়—
স্কুলে, কলেজে, জনসভায়।

মানুষ তাকে ডাকতে শুরু করল—
“দৃষ্টিগুরু”।

সে গল্প বলে তরুণদের—
“মানুষের শরীর নয়,
মানুষের আত্মা দেখতে শেখো।
যে দেখে মর্যাদা,
সে-ই সত্যিকারের মানুষ।”

সে বলত—
“ভুল করলে ভয় নেই। কিন্তু ভুল বুঝলে সব বদলে যায়।”

তরুণেরা তাকে শুনে প্রেরণা পায়।
মেয়েরা তাকে দেখে মনে সাহস পায়।


---

✨ অধ্যায় – ১০: উপসংহার – দৃষ্টির সীমানা পেরোনো মানুষ

জীবনের শেষে এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞেস করেছিল—
“আপনি কি এখন সুখী?”

অরিন্দম শান্তভাবে বলেছিল—
“হ্যাঁ।
কারণ আমি এখন মানুষকে দেখি,
শরীরকে নয়।
আমি দৃষ্টি বদলেছি—
দৃষ্টি বদলালে সবই বদলে যায়।”

এটাই তার উত্তর,
এটাই তার শিক্ষা,
এটাই তার আলো।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Biswajit Roy 2 days ago

    এই লেখাটি সবাইকে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি দেখবেন এখানে মানুষের জীবন কীভাবে পাল্টায়।