করিম সাহেব এর কাছে তার বন্ধু রহিম সাহেব আসলেন। তার ছেলেটা এইচএসসি পরীক্ষায় সুবিধা করতে পারেনি। টেনেটুনে জিপিএ-৪.০০ পেয়েছে।
এখন তাকে কোন ভার্সিটিতে দেয়া যায় সেই বিষয়ে পরামর্শ করতে এসেছেন। প্রয়োজনে তিনি দশ-বিশ লাখ টাকা খরচ করতেও প্রস্তুত। ছেলের বয়স হয়েছে বিশ-একুশ। বড় সমস্যা হচ্ছে, সে পড়াশোনা রেখে প্রেম করছে।
তিনি খোজ নিয়ে জেনেছেন মেয়ের বাবা মেয়েকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন। আর এটাই তার ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের উপর ফেলেছে।
করিম সাহেব শুনে খুশি হলেন যে রহিম সাহেব তার ছেলের খুটিনাটি বিষয়ে খোজ রাখেন।
করিম সাহেব বললেন,"ওই দশ-বিশ লাখ টাকা দিয়ে তোমার ছেলেকে একটা ছোটখাটো ব্যবসায় ধরিয়ে দাও। তারপর ওই মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলে ওদের বিয়ে করিয়ে দাও। যেহেতু ওদের পছন্দ আছে, মেয়ের মা-বাবারও তেমন আপত্তি থাকার কথা না।"
রহিম সাহেব প্রশ্ন করলেন,"ছেলে আমার মতো ব্যবসায় করে কি করবে? ব্যবসায়ে কি আছে?"
করিম সাহেব বললেন,"কোন অফিসের পিওন বা কেরানি হওয়ার চেয়ে ব্যবসায় করা অনেক সম্মানের। স্বাধীনতা আছে ব্যবসায়। আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য এবং বরকত।"
রহিম সাহেব একটু দোটানায় পড়ে গেলেন।
প্রশ্ন করলেন,"লোকে কি বলবে?"
করিম সাহেব উত্তর দিলেন,"লোকের কথা দিয়ে কি লাভ? আমি যা বলছি তা করলে তোমার ছেলে সারাজীবন তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। তাছাড়া ব্যবসায় করলে সে আত্মবিশ্বাসী হবে। চাকরি করলে তার চাকর হওয়ার মানসিকতা তৈরি হবে। জীবনের পথে বেশি দূর যেতে পারবেনা।"
রহিম সাহেব বললেন,"তুমি যে কথা বলেছো আমার ছেলেও এমনটাই বলে৷ কিন্তু আমার
স্বপ্ন ছিল ছেলেটাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবো৷ চাকরি-বাকরি করবে৷ মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে।"
করিম সাহেব শুনে হেসে বললেন,"আল্লাহ চাইলে তোমার ব্যবসায় করেও তোমার মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে।
আমার মনে হয়না সবারই উচ্চ শিক্ষা লাগবে। সে এইচএসসি পর্যন্ত পড়েছে, এটাই যথেষ্ট। যদি অসাধারণ রেজাল্ট করতো তবে তাকে উচ্চ শিক্ষায় দিতে পারতে৷ এখন সে উচ্চ শিক্ষায় গেলে সময়ের অপচয় হবে।
দেখো। সে যে রেজাল্ট করেছে তাতে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার বানাতে পারবে বলে মনে হয়না। পড়াশোনা করলে চাকরি পেয়ে সংসার গোছাতে ত্রিশ পেরিয়ে যাবে।
বর্তমানে এদেশে চাকরি হলো সোনার হরিণ। আর চাকরি না পেলে আবার ঘুষ দেওয়া লাগবে। অথবা সেই ঘুরেফিরে ব্যবসাতেই আসবে।
তারপর বিয়ে করাতে হবে। কিন্তু ব্যবসায় করলে সবকিছু এখনই গুছিয়ে নিতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।"
রহিম সাহেব আগে কখনোই এভাবে ভাবেননি। তাই একটু সময় নিয়ে চিন্তা করবেন বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।