গোপাল ভাঁড়ের গরু হারানোর গল্প অনেকেরই জানা। সংক্ষেপে আরেক বার বলি। খারাপ লাগবে না। আর যারা আগে শুনেছেন, তাদের রিভিশন হয়ে যাবে। যদিও কোন পরীক্ষায় গোপাল ভাঁড় থেকে কখনও প্রশ্ন আসার কথা শোনা যায়নি। আপনারা যারা সবকিছুর মধ্যে অর্থনীতির সন্ধানে থাকেন, তাদের সতর্ক করার জন্য বলে রাখলাম। মানে রিভিশন দিয়েও কোন ফায়দা নেই।
গরু হারিয়ে গেলে গোপাল ভাঁড় দিনভর গরু খুঁজতে থাকে। হয়রান হয়ে যায়। মাথামুথা ঠিক থাকে না। বাড়িতে ফিরে জামাইকে ভাই বলে ডাকা শুরু করে। গোপাল ভাঁড়ের বউ শুনতে পেরে গোপালকে তিরস্কার করে। ওকথা শুনে গোপাল ভাঁড় বলে, গরু হারালে মা এমনি হয়। মাথা ঠিক না থাকলে মানুষ বউকেও মা ডেকে বসে। গল্পটা অনেকটা এরকম। এই গল্প শুনে কত হেসেছি। গোপাল ভাঁড় কত বড় মাপের বলদ।
আমার গল্পটা আজকের সন্ধ্যার। বিকেল থেকে বয়ে চলা দমকা বাতাস, আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামার যে ভং, ওর সব সেই গল্পের গায়ে লেগে আছে। একদম তরতাজা।
টেনিস খেলে ফিরছিলাম। ফিরতে ফিরতে ফরমান এলো, বাসায় পরোটা নাই। রিকশা দাড় করিয়ে দোকানে ঢুকলাম। বের হয়ে দেখি রিকশাওয়ালা নেই। পাশে আরও দুইটা রিকশা দাঁড়ানো। ওদেরকে জিজ্ঞেস করলাম। কিছুই বলতে পারলো না। ভাড়া না নিয়েই চলে গেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ভালো কোন ট্রিপ পেয়ে চলে গেলো? ভাড়া পেলেও আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যেতে পারত। ভাড়া দিয়ে দিতাম। মনটা পানসে হয়ে গেছে।
অন্য আরেকটা রিকশা নেই। সড়ক নিবাসের গেটে নামতে গিয়ে খেয়াল করি। হাতে যে গেঞ্জি (পলো শার্ট) ছিল, সেটা নাই। রিকশায় রেখে দোকানে ঢুকেছিলাম। ওটা নিজের মনে করে নিয়ে চলে গেছে।
গেঞ্জিটা গত রমজানের ঈদে কিনেছিলাম। নেভি ব্লু। রিচম্যান-লুবনান থেকে নেয়া। বেশ কয়েকদিন পরেছি। আরামদায়ক। গতকাল বিকেলেও পরেছিলাম। কিন্তু বিধি বাম। রিকশাওয়ালা নিয়ে চলে গেছে। একরাশ শোক এসে ঘিরে রেখেছে।
আপনারা যারা বিদগ্ধ জন আছেন, নিশ্চয় তাদের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আছে। সামান্য একটা গেঞ্জি নিয়ে গেছে। এটা নিয়ে এত শোকের কিংবা মাতমের কি আছে? আছেরে ভাইরে, যার যায় সেই জানে, সেই বোঝে। গরু হারালে মা এমনি হয়। এই অধমের ব্যথা যদি কিছুটা অনুভব করেন, শোক প্রস্তাব করতে পারেন। ‘প্রস্তাবিত শোক’ শিরোনামেই হতে পারে। সেখানে অন্য যারা আছেন, মনের গোপন কুঠুরিতে বসে চোখের পানি ফেলেন, তাদের জন্যও উন্মুক্ত থাকবে।