Posts

চিন্তা

যান্ত্রিক এই শহরে আমরা যন্ত্র মানব

October 24, 2023

KhoobDoob

Original Author হিমাংশু

আমি মানুষ দেখছি"
-
যান্ত্রিক এই শহরে আমরা যন্ত্র মানব।

সারাদিনে অফিস বাদে কিছুই করা হয়নি, হঠাৎ করে মনে হল কিছু একটা করা দরকার। কি করা যায়, তখন মনে হল আজকে মানুষ দেখবো। কোন কিছু চমৎকার ভাবে অবলোকন করতে দাড়াতে হবে এক কোনায় সবার দৃষ্টির বাইরে। কারো নজরে পরলেও যাতে ভেবে নেয় লোকটা কারো জন্য অপেক্ষা করছে। 

দাড়িয়ে আছি কিছুই চোখে পড়ছে না, যা দেখে আমার চোখ কিছুটা শান্তি অনুভব করবে। এমন সময় দেখি তিন লেনের রাস্তা পার হচ্ছে একটা ছেলে একটা মেয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে। ছেলেটা এক হাত দিয়ে বেশ শক্ত করেই মেয়েটার হাতটা ধরে রাখছে বোঝা যাচ্ছিল, অন্য হাত দিয়ে গাড়ি থামাচ্ছিল ইশারা করে। 

আমি বোঝার ট্রাই করছিলাম এরা কি প্রেমিক যুগল নাকি অর্ধাঙ্গ-অর্ধাঙ্গিনী। রাস্তা পার করে এসে আমি যেই পাশটায় দাড়িয়েছি ঐ পাশ দিয়ে চলে গেল। তখন এদের থেকে খুব বেশী দূরে ছিলাম না আমি। ঘ্রান শুনে বুঝতে পারছিলাম সরি, ঘ্রান তোহ শোনা যায় না অনুভব করে বুঝতে পারছিলাম এরা প্রেমিক যুগল। 

তখন মনে হচ্ছিল এরা জানে না সারাজীবন একসাথে থাকতে পারবে কি না অথচ কি যত্ন নিয়ে রাস্ত পার হচ্ছিল ।
এই লাইনটা এমনও হতে পারে ছেলেটা মেয়েটার সাথে কিছু দিন কাটাল তারপরে অন্য একটা মেয়ে বা মেয়েটা অন্য একটা ছেলে। তাহলে এই যে যত্ন নিয়ে রাস্তা পার হওয়া, দুজন দুজনকে শক্ত করে ধরে রাখার দুঈ মিনিটের ব্যাখ্যা কি। ভাবতে ভাবতেই দেখি হইচই, কাহিনী কি...বুঝা গেল এখানে একটা ছিনতাই এর ঘটনা ঘটেছে। পাম্পের সামনে থেকে ফোন নিয়া দৌড় দিছে কিন্তু বেশী দূর যাইতে পারে নাই, খাইছে ধরা। আমার মনযোগে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলো তবে এখনো আগ্রহ হারাইনি আরো কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকবো। দাড়িয়ে থেকে এক দৃষ্টিতে মানুষের ছোটাছুটি দেখছি, এক পর্যায়ে গিয়ে মনে হল মানুষ গুলোকে চেনা চেনা লাগছে। বোঝাই যাচ্ছিল ব্রেইন অনবরত মানুষের ছবি নিতে নিতে ওভার ল্যাপ করছিল। 

আমার একাকিত্ব যাপনে কিছুটা সময় সঙ্গ দিয়েছে আমার বন্ধু মিতা। ওর সাথে ওরই একটা ফ্রেন্ড ছিল, আমাদের ঝালমুড়ি খাওয়ালো। ওরা চলে যাওয়ার পড়ে আবার আমি একাকিত্ব উদযাপন শুরু করলাম।

এবার পকেট থেকে ফোন বের করলাম, পার্থ রিপ্লাই দিছে ভাই কই আপনে। আমি আগেই ওরে মেসেজ দিয়ে রাখছিলাম। বললো ভাই ওই যে চায়ের দোকানের সামনে দেখা হইছিল ওখানে আইসা দাড়ান আমি আসতেছি বিশ পঁচিশ মিনিট লাগবো আসতে। 

এই ছেলেটা একটা চমৎকার। চমৎকার ছেলেটা আসুক, ততক্ষন আরো কিছু গল্প দেখবো ভাবছি, ঘাড় ঘুরাতেই ব্যাথা ফিল করলাম, আমি মিন লক হয়ে গেছে। দাড়িয়ে থাকা আর পসিবল হচ্ছে না, খারাপ লাগতে শুরু করেছে। বাসায় যাওয়া দরকার কিন্তু বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। ইদানীং বেশ একা লাগে নিজেকে। আগ্রহ-অনাগ্রহ বিষয়গুলো কেমন ঝাপসা হয়ে ধরা দেয়। মস্তিষ্কের এই বিড়বিড় শেষ হলো পার্থের ফোনে। 

ছেলেটার সাথে গল্প করে বেশ আরাম পাওয়া যায়। পার্থর মধ্যে শ্রোতা এবং বক্তা দুইটি গুনই বিদ্যমান। দু'জনের প্যাশন নিয়ে আমরা অনেক সময় গল্প করার পরে টং দোকান থেকে দুইকাপ লেবু চা নিলাম। চুমুকেই বোঝা গেল বিট লবনও দেওয়া হইছে। খাইতে খারাপ লাগছিল না, আর আশেপাশে দেখেও বোঝা যাচ্ছিল এইখানে এই চায়ের কদর অতিমাত্রায়।

বাসায় ফেরার জন্য রওনা দিলাম, ব্যাডমিন্টন খেলা দেখতে দেখতে। রাস্তার এপাশ-ওপাশ করে অনেকগুলি মাঠ বানিয়েছে, প্রতিদিনই ব্যাডমিন্টনের আসর বসে এখানে। পকেট থেকে ফোন বের করতেই ফোন আসলো, হয়তো এই কলের জন্যই এত আয়োজন। আরো খানিকটা সময় আমি বাইরে কাটিয়েছি ফোন কলের মানুষটার সাথে, তার সাথে আরও একটা মানুষ ছিল সেও আমার খুব প্রিয় এবং শ্রদ্ধার। 

এবার সত্যিই ঘরে ফিরব, আবার ব্যাথাটা টের পাচ্ছি। এদিক ওদিক তাকানো যাবে না, সোজা বাসায়। কলিং বেল চাপতেই দরজা খুললো পাশের রুমের আন্টি, দরজার মধ্যে যেই মাথা ঢুকাইলাম শুটকির বিকট গন্ধে বমি চলে আসার উপক্রম কিন্ত হলো না কারন ডাইনিং রুম থেকে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রুমে ঢুকছি।

দরজা লাগিয়ে দেওয়ার পরও ফাঁক দিয়ে কিছু গন্ধ ঢুকছিল তবে এখন আর খারাপ লাগছে না। ঘাড়ের ব্যাথাটাও মনে হয় উপশম লাগছে। এটা কি এই শুঁটকির গন্ধের কারনে...

তবে আমি চাচ্ছি না এখন ব্যাথাটা কমে যাক, ব্যাথাটা উপভোগ করতে চাই। চারদিকে মানুষ অনেক চাপা যন্ত্রনা ভোগ করছে সেই যন্ত্রনার কাছে আমার এই ঘাড় ব্যাথার যন্ত্রনা কিছুই না |||

Comments

    Please login to post comment. Login