পোস্টস

গল্প

প্রতিচ্ছবি

৯ জুন ২০২৪

ফাহ্‌মিদা বারী

মূল লেখক ফাহ্‌মিদা বারী

 

মর্নিংওয়াক শেষে একবার কাঁচাবাজারে ঢুঁ মারে প্রীতি। রোজকার অভ্যাস। নিজের হাতে বেছেবুছে শাকসবজি কেনার মধ্যে অন্যরকম সুখ। 

আশিকের ওপরে মাছ মাংশের ভারটা ছেড়ে দিতে হয়। কারণ মাছের বাজারে ঢুকলে প্রীতি এখনও ঠিকমত শ্বাস নিতে পারে না। লোকজনের গাদাগাদি ভিড়, মাছবিক্রেতার ডাকাডাকি, বটি হাতে বসে থাকা একদল মানুষের আহবান ‘আপা দিয়া যান, ঘচ কইরা কাইটা দেই!’ ...এসবের মধ্যে কেন জানি মাথাটা কাজ করতে চায় না। তাই আশিক নিজের মর্জিমাফিক যা নিয়ে আসে তাতেই প্রীতি খুশি। শুধু সবজির ভারটা সে নিজের ওপরে টেনে নিয়েছে। আশিকের কেনা মিইয়ে পড়া শাক সবজি দেখে অনেকদিন সে মুখ ভার করেছে। গজ গজ করতে করতে বলছে, ‘এসব আনার চেয়ে না আনা ভালো। কয়দিনের শুঁটকি এগুলো কে জানে!’

 

আশিক তার চিরাচরিত জবাব দিয়েছে, ‘যাও না তো বাজারে! শুধু বলেই খালাস!’

দিনের পর দিন একই কথা শুনতে শুনতে শেষমেষ প্রীতিই একদিন বলেছে, ‘আচ্ছা যাও, এখন থেকে আমিই শাকসবজি কিনে আনব। তবু তুমি এসব মরা জিনিস আনবা না বাসায়!’

সেই থেকে শাকসবজিটা প্রীতি নিজেই কেনে। অনেকটা সময় ধরে ঘুরেফিরে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে তবে দোকানীকে পলিথিনের প্যাকেটে ঢোকানোর অনুমতি দেয়। বাসার কাছেই কাঁচাবাজার বসে রোজ। দোকানীরা তাকে দেখতে দেখতে চিনে গেছে। সে যখন হাত দিয়ে টিপেটুপে ওসবের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে, তখন কেউ কেউ আড়ালে হাসি লুকাতে ব্যস্ত থাকে। দুই একজন ফিচেল দোকানদার বলেও ফেলে,‘ও আপা! এত কী দ্যাহেন? সবগুলান তো এক জায়গা থনেই আনছি!’

তা আনুক। প্রীতি জানে, ভালো টাটকা সবজির যে স্বাদ, তা কিছুতেই কয়েকদিনের বাসি সবজি থেকে পাওয়া যায় না। যতই ভালোমত রান্না করা হোক না কেন! 

 

 

এতকিছু সে জেনেছে মায়ের কাছ থেকে। প্রীতির মা-বাবা তাদের সারাটা জীবন গ্রামেই কাটিয়ে দিয়েছে। প্রীতিরও ছেলেবেলা গ্রামেই কেটেছে। ভালো ছাত্রী প্রীতি গ্রামের স্কুল কলেজ থেকেই পাশ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে। সেই থেকে শহরে থাকলেও ওর মনের মধ্যে গ্রাম খুঁটি গেঁড়ে বসে আছে। গ্রামের স্নিগ্ধ সবুজ প্রকৃতি, অবারিত আলোবাতাস আর মুক্ত প্রসন্ন দিনগুলো ওর স্বপ্নে এখনো ফিরে ফিরে আসে। 

মা শরিফা বেগমের নিজের হাতে লাগানো এক চিলতে সবজি বাগান ছিল। সেই বাগান থেকে বেছে বেছে কচি সবজি তুলে এনে মা কী যে মজা করে লাবড়া রান্না করত! ডুমা ডুমা করে আলু পটল বেগুন ঝিঙে কেটে নিয়ে সেগুলোকে সরিষা তেলে পাঁচফোড়নের মধ্যে ছেড়ে দিত মা। লবণ হলুদ আর কাঁচামরিচে ভালো করে কষিয়ে মা তাতে মেশাত সরিষা আর পোস্ত বাটা। নামানোর আগ দিয়ে তাতে ছড়িয়ে দিত হাতে বানানো খাঁটি গাওয়া ঘি। ওহ! তোফা! সেই স্বাদ যেন এখনো মুখে লেগে আছে! 

প্রীতি প্রতিদিন উন্মুখের মতো চেয়ে থাকত মায়ের রান্নায় ব্যস্ত দুই হাতের দিকে। সেই দুই হাতের ওঠানামা দেখতে দেখতে ও বলত, ‘মা তোমার তরকারির স্বাদ এত বেশি লাগে ক্যান?’

মা হাসত। মুক্তোর মতো সাদা দাঁতের ঝিলিক তুলে বলত, ‘রান্নার আসল স্বাদ হইল মা তরকারির গুণে! তাজা তরকারি দিবা তাইলেই না স্বাদ হইব! দুইদিনের বাসি তরকারিতে কি আর তাজার স্বাদ হয়রে মা?’

 

সেই থেকে প্রীতির হয়েছে ভালোই এক জ্বালা। টাটকা সবজি ছাড়া সে যেন স্বাদই খুঁজে পায় না! 

আশিক ওকে নিয়ে মজা করে। তার তো মুখের কথা ফুরাতেই চায় না, ‘এত ফ্রেশ ফ্রেশ করলে তো গ্রামে গিয়ে থাকতে হয়! ঢাকায় আসতে আসতে তরকারি বাসি হবে না? তোমার মতো কাস্টমারদের জ্বালাতেই তো সবজি বিক্রেতারা সারাক্ষণ সবজিতে পানি মেশায়!’

আশিক বকর বকর করলেও ছেলেমেয়ে দুটি কিন্তু ঠিকই মায়ের মতো টাটকা সব্জির মজা বুঝতে শিখেছে। ছেলেটা সেদিন ভাত খেতে খেতে বলছিল, ‘মা তোমার রান্না এত মজা লাগে কেন?’

 

প্রীতি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। ঠিক যেন মাকে বলা ওর সেই কথারই প্রতিধ্বনি! মেয়েটা রান্নার সময় আশেপাশে ঘুরঘুর করে। প্রীতি জোর করে ওকে রান্নাঘর থেকে বের করে। বলে, ‘সময় হলে সেই তো সব মেয়েকেই হাঁড়ি ঠেলতে হয়। এখন থেকেই রান্নাঘরে আসার দরকার নাই!’

 

ঠিক এই কথাগুলোই মা ওকে বলত একসময়। ‘অখনই রান্নাঘরে ঘুরঘুর করোস ক্যা? যখন দিন আইব নিজেই সব শিখা ফেলবি। অখন যা বই নিয়া বস!’

প্রীতি তবু যেত না। ওর মেয়েটাও যায় না। বলে, ‘তোমার কাছ থেকে দুই একটা আইটেম শিখে রাখছি মা। যখন হাঁড়ি ঠেলার ভার আসবে তখন যাতে কথা শুনতে না হয়!’ 

এত পড়ালেখা শেখার পরেও হাঁড়ি ঠেলার কাজে অপটু হলেই কথা শুনতে হয়! প্রীতি মনে মনে হাসে। সময় বদলেছে, কিন্তু সময়ের রীতিগুলো হুবহু একইরকম আছে। 

 

মর্নিংওয়াক থেকে ফিরে এক কাপ চা হাতে নিয়ে খবরের কাগজটা আদ্যোপান্ত পড়ে ফেলাটাও প্রীতির প্রতিদিনের মুখস্থ অভ্যাস। ছেলেমেয়ে আর বরের ঘুম থেকে উঠতে আরেকটু দেরি হয়। ওরা উঠতে উঠতেই প্রীতি খবরের কাগজ আর চা দুটোই রেলিশ করে শেষ করে সকালের নাস্তা বানাতে বসে। তারপর ওরা যার যার কাজে বেরিয়ে পড়লে প্রীতি রান্নাবান্না শুরু করে। ব্যস্ততা দিয়ে শুরু হওয়া দিনটাতে আর আয়েশ করার তেমন ফাঁকফোকর মেলে না। তাই সকালের এই একান্ত নিজের করে পাওয়া সময়টুকু প্রীতির বড় আরাধ্য। 

নিজের হাতে তৈরি এক চিলতে বারান্দাবাগানে বসানো দোলনাটাতে দোল খেতে খেতে প্রীতি খবরের কাগজ পড়ে। ওর মতো হাউজওয়াইফদের প্রিয় পাতা হচ্ছে বিনোদন পাতা। কারো কারো দৌড় বড়জোর সাহিত্য পাতা পর্যন্ত। কিন্তু প্রীতির ভালো লাগে আর্টিকেলগুলো পড়তে। বিচিত্র বিষয়ে লেখা সাপ্তাহিক নিয়মিত আর্টিকেলগুলো খুব মন দিয়ে পড়ে সে। পড়তে পড়তে কত কী যে মনে হয়! 

 

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ওর বিষয় ছিল জার্নালিজম। ইচ্ছে ছিল পাশ করে একটা পত্রিকার সঙ্গে জুড়ে যাবে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র থাকা অবস্থাতেই কাজ শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু প্রীতির ভাগ্য এতটা সুপ্রসন্ন হয়নি। ওকে ইউনিভার্সিটির পাঠ চুকানোর আগেই সংসার নামক গ্যাঁড়াকলে এসে পড়তে হয়েছিল। ভাগ্যদেবী কেন যেন ওকে ঘাড় ধরেই টেনে এনে এই জায়গাতে ফেলে দিয়েছিল, ওর ইচ্ছার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই!

সেদিনের কথা এখনো পরিষ্কার মনে আছে প্রীতির। ক্লাস শেষে হলে ফিরতেই রুমমেট খবর দেয়, ওর গ্রাম থেকে কে নাকি দেখা করতে এসেছে। ভিজিটরস রুমে বসে আছে। সেইসময় মোবাইলের যুগ ছিল না। গ্রাম থেকে এসেছে শুনেই প্রীতি পড়িমরি করে ছুট লাগায়। গিয়ে দেখে ওদের পাশের বাড়ির রহমান চাচা। বাবা মারা যাওয়ার পরে এই চাচা আর তার পরিবার নানাভাবে প্রীতির পরিবারকে সাহায্য করে এসেছে। ইনি না থাকলে প্রীতি হয়ত এত সহজে আজকের এই অবস্থানে আসতে পারত না। 

চাচা মুখ কালো করে জানাল, গতকাল রাত থেকে প্রীতির মায়ের শরীরটা খারাপ। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। রাতেই তাকে নিয়ে সদরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এসব করতে গিয়ে প্রীতিকে খবর দিতে দেরি হয়ে গেছে। অবস্থা বেশি ভালো না। সিভিয়ার হার্ট এ্যাটাক। ডাক্তাররা তেমন আশার কথা শোনাতে পারেনি। 

 

তারপর কীভাবে হলে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়েছে, সেখান থেকে লঞ্চে করে সদর, সদর থেকে ভ্যানে করে গ্রামে... প্রীতির স্মৃতিতে সেসবের বিস্তারিত কোনো খুঁটিনাটি নেই। শুধু মনে আছে, মাকে দেখার পরে মনে হয়েছিল জীবনটা বুঝি ওখানেই থমকে গিয়েছে। আর সামনে যাওয়ার কোনো পথই খোলা রইল না! 

মা অনেক কষ্টে নিজের শেষ কয়েকটি কথা প্রীতিকে বলে যেতে পেরেছিল। ‘মা... আমি না থাকলে তরে কেডায় দেখব! রহমান ভাই একটা বিয়া ঠিক করছিল তোর লাইগা। আমিই এদ্দিন মত দেই নাই। ভাবছি তর পড়াডা শেষ হোক। পরে দেখা যাইব! আর পরে দেখনের দিন তো থাকল নারে মা! আমি চইলা গেলে তুই তো একেবারে একা হইয়া যাইবি!’ 

 

মা চলে গিয়েছিল দুই দিন পরেই... প্রীতিকে সত্যি সত্যি ভীষণ একা করে দিয়ে। রহমান চাচার খুঁজে আনা সেই পাত্রই হলো আশিক। ব্যস্ত কর্পোরেট চাকুরে আশিক বউ হিসেবে শিক্ষিত সুন্দরী কাউকে খুঁজছিল। বউয়ের পড়ালেখা কিংবা চাকরিবাকরির ব্যপারে তার মাথাব্যথা ছিল না। তাই প্রীতিরও আর পড়াশুনা শেষ করা হয়নি কিংবা জার্নালিজমের সেই অধরা শখটাও আর পথ খুঁজে পায়নি। 

 

চা শেষ করে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ে প্রীতি। আর দেরি করার জো নেই। আশিকের জন্য ব্রেড টোস্ট আর ডিম পোজ বানাতে বসতে হবে। সেই টোস্টের মাত্রা একেবারে পারফেক্ট হওয়া চাই। বেশি পুড়ে গেলেও চলবে না, আবার মুচমুচে না হলেও হবে না। আশিকের ভাষ্যমতে,মুখে দিলেই যেন মিহি মোলায়েম ছন্দে কুড়মুড় করতে করতে মুখের ভেতরে তাদের যবনিকাপাত হয়। বাপরে! এই অসাধ্যসাধন করতে কম বেগ পেতে হয়নি প্রীতিকে। বেগ পেতে পেতে এখন সে একদম সেই পারফেক্ট ব্রেড টোস্ট বানিয়ে দেয় আশিককে।  

ছেলেমেয়েদুটো অবশ্য ঝামেলা দেয় না তেমন। সেই গতানুগতিক দুধ আর সিরিয়াল। রোজ এই একই জিনিস কীভাবে যে খায় ভেবে পায় না প্রীতি। ডিমের পোজ করতে করতে মনে হলো আজ ওদেরকে ফুলকপির পরোটা বানিয়ে খাওয়ালে কেমন হয়? নতুন আইটেম। মুখে রুচবে কী না বলা মুশকিল। তবু চেষ্টা করা যেতে পারে একবার। 

 

এই বিশেষ পরোটা একসময় প্রীতির খুব প্রিয় ছিল। মা এত দারুণ করে ফুলকপির পরোটা বানাত! ফুলকপি কুচি কুচি করে কেটে সেটাকে অল্প তেলে পেঁয়াজ কাঁচামরিচ আর রসুন কুচি দিয়ে একটু ভেজে নিয়ে পরোটার জন্য তৈরি করা লেচির মধ্যে ঢুকিয়ে কায়দা করে বেলে নেওয়া। কাজ অল্প, কিন্তু এটুকু কাজেই দেখাতে হয় নিখুঁত মুন্সিয়ানা। তবেই না তৈরি হয় আসল জিনিস! 

 

কাজ করতে করতে আনমনা হয়ে যায় প্রীতি। আজ বারবার মায়ের কথা মনে পড়ছে কেন কে জানে! মাকে হারিয়েছে কত বছর হলো? মা যখন চলে গেল, তখন ও তেইশ বছরের কচি এক তরুণী। আর আজ সে ছেচল্লিশ বছরের প্রৌঢ়া নারী। জীবন এই এতগুলো বছরে কত যে বাঁক বদলেছে! মাকে বড্ড দরকার ছিল এই সময়গুলোতে! অথচ সব চাওয়াপাওয়ার উর্ধে চলে গিয়ে মা কেমন দূর থেকে মুচকি হাসছে ওকে দেখে! মনে মনে হয়ত ভাবছে... ‘দ্যাখ! কী সুন্দর একা একাই সামলে নিলি সবকিছু! বলেছিলাম না? একদিন ঐ তো হাঁড়িই ঠেলতে হবে। আগেভাগে কেন এত তোড়জোড়!’

চোখে পানি আসে প্রীতির। আশেপাশে কেউ নেই তাই সেই অশ্রুকে সে আটকাতে যায় না! ঝরুক না! কিছু অশ্রু ঋণ জমে আছে মায়ের। শোধ করা দরকার। স্বামী ছেলেমেয়ে পরিবেষ্টিত প্রীতির এত সময় কই কান্না করার? 

 

 

‘এ কী মা? তুমি কাঁদছ কেন?’ 

আপনমনে কাজ করতে করতে কখন যে অন্য এক ভুবনে চলে গিয়েছিল প্রীতি! ছেলের বিস্ময়ভরা ডাক শুনে চমকে তাকাল। 

 

‘তুই? তুই কখন এলি? আজ এত জলদি জলদি ঘুম ভেঙে গেল?’ বলতে বলতে এক হাতে তড়িঘড়ি করে চোখের পানিটুকু মুছতে চায় প্রীতি।  

 

‘উঁহু! সেই কথা পরে! আগে বলো কাঁদছিলে কেন?’

 

প্রীতি আর লুকোচুরি করে না। সত্যি কথাই বলে ফেলে ছেলেকে। ‘মাকে খুব মনে পড়ছিল। কতদিন দেখি না মাকে! মায়ের কণ্ঠস্বর খুব শুনতে ইচ্ছে করে। ভুলেই গেছি মা কেমন করে কথা বলত!’ 

ছেলে আর বলার মতো কথা খুঁজে পায় না। মাকে জড়িয়ে ধরে গভীর আবেগে। 

 

নাস্তার টেবিলে ছেলেমেয়ের কাছে ব্যাপক হিট করে প্রীতির ফুলকপি পরোটা। ছেলে খেতে খেতে বলে, ‘মা, আজ তোমার এই ফুলকপি পরোটার রেসিপি ইউটিউবে ছাড়ব। দাঁড়াও আগে খেয়ে নিই। তারপর শুরু হবে!’ 

 

‘ইউটিউবে ছাড়বি মানে? সেটা আবার কী?’

 

‘তুমি ধারাবর্ণনা দিতে দিতে বানাবে। আমি ভিডিও করে ইউটিউবে দিব। তোমার একটা চ্যানেল খুলে দিব।’ 

 

যেই বলা সেই কাজ। প্রীতিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ছেলেমেয়ে দুজনে মিলে প্রীতিকে দিয়ে আরেকবার ফুলকপি পরোটা বানিয়ে সেটার ধারাবর্ণনা করিয়ে নিলো। তারপর সেই ভিডিও ছেড়ে দিলো ইউটিউবে। ভয়ানক লজ্জা নিয়ে সেই ভিডিও দেখতে বসে প্রীতির কী যেন মনে পড়ে গেল বারবার। 

 

সেই একই কথা বলার ভঙ্গি, কথা বলতে বলতে হাত দুটোকে বিশেষ ভঙ্গিতে নাড়ানো... আর একেবারে সেই একই কণ্ঠস্বর! যে কণ্ঠস্বরকে সে খুঁজে ফিরছে আজ এই তেইশটি বছর ধরে! একেবারে ওর মায়ের কণ্ঠস্বর! 

 

কী আশ্চর্য! ওর মাঝেই মা লুকিয়ে রেখেছে নিজেকে। প্রীতি এতদিন তা জানতেই পারেনি!