তোমাদের শিশুরা ঠিক তোমাদের শিশু নয়,
জীবনের প্রতি জীবনের যে প্রবল পিপাসা— ওরা তার-ই বংশধর।
যদিও তোমাদের মাধ্যমে ওরা পৃথিবীতে আসে,
কিন্তু তোমাদের ইচ্ছা পূরণের জন্য নয়।
তোমাদের সঙ্গে ওরা থাকতে পারে,
কিন্তু ওদের উপর তোমাদের কোনো কর্তৃত্ব নেই।
তোমরা শুধু পার তোমাদের স্নেহ-মমতাটুকু
ওদের দিতে, কিন্তু তোমরা তোমাদের চিন্তা
ওদের উপর চাপাতে পার না।
ওদেরও নিজস্ব-ভাবনা আছে,
তোমাদের সঙ্গে তা না-ও মিলতে পারে।
তোমরা ওদের শরীরকে একটা আশ্রয় দিতে পার,
কিন্তু ওদের সত্তাকে নয়।
ওদের সত্তা থাকে- অনাগত ভবিষ্যতের এক নির্জন-নীড়ে,
তোমরা সেখানে কোনোদিনও পৌঁছাতে পারবে না,
এমনকি স্বপ্নের ভেতরেও না।
তোমরা ওদের মত হওয়ার প্রবল চেষ্টা করতে পার,
কিন্তু তোমরা যে-রকম— ওদেরকে সে-রকম
মানুষ হিসেবে তৈরি করতে যেও না।
কারণ জীবন তো এমন— যে কখনও পিছনে ফিরে যায় না,
কিংবা গতকালের অপেক্ষাতেও সে থাকে না।
তুমি সেই ধনুক— আর তোমার শিশুরা ক্ষিপ্র-তীর,
তোমার উৎস থেকেই ওরা এগিয়ে যাচ্ছে সামনে।
অন্তহীন পথের উপর যে দাগ দেওয়া আছে
তীরন্দাজের দৃষ্টিও তার উপর।
এবং তিনি (পালনকর্তা) তাঁর অসীম ক্ষমতায়
তোমাকে আনত করেন— যেন তাঁর (লালনকর্তার) তীর
দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু তীরন্দাজের হাতে তোমার এ প্রণতি হোক
নিছক আনন্দের জন্য—
উড়ন্ত একটা তীরও
তিনি যেভাবে ভালোবাসেন,
একটি সুস্থির ধনুককেও সেভাবেই।
(লেবানিজ কবি ও শিল্পী কাহলিল জিবরান (১৮৮৩-১৯৩১)-এর কবিতার বই ‘দ্য প্রফেট’ (১৯২৩) এর 'অন চিলড্রেন' থেকে ট্রান্সক্রিয়েটেড। )