তিরিশ বছর বয়সি রবি ঠাকুর জমিদারি দেখতে এসে দশটি বছর পূর্ববঙ্গে কাটিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে দেবেন্দ্রনাথ সংকল্প করেছেন, জমিদারি আর এজমালি রাখবেন না। নানান কারণ এবং জোড়াসাঁকোর বাড়িতেও রবি ঠাকুর ঠাঁই নিতে চান না বলে অবশেষে তাকে শান্তিনিকেতনে বসতি স্থাপন করতে হলো।
তাই বলে বাংলাদেশের সাথে তাঁর যোগসূত্র হারিয়ে যায় নি। তিনি প্রায় প্রায়ই বাংলাদেশে আসতেন থাকতেন এবং তাঁর রচনায় বাংলাকে নিয়ে যেতেন।
রবি ঠাকুরের কাছে সাজাদপুর, শিলাইদহ এবং পতিসরই ছিল তাঁর গোটা বাংলাদেশ। রবীন্দ্র গবেষক আহমেদ রফিকের লেখা থেকে জানা যায়-
"ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের জীবনে গ্রামবাংলার নদী, বিশেষ করে প্রিয়সঙ্গিনী পদ্মা যে কতটা প্রভাব রেখেছে তার পরিচয় মিলে যেমন ছিন্নপত্রাবলীতে, তেমনি তাঁর স্মৃতিচারণমূলক ভাষণে বা লেখায়। ... নদীমাতৃক গ্রামবাংলা নিয়ে রবীন্দ্রনাথের দ্বিমাত্রিক আবেগ প্রসঙ্গে কবি নিজে অনেক কথার পর দুটো বাক্যে তাঁর ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন এই বলে :
'আমাদের দুটো জীবন আছে- একটা মনুষ্যলোকে, আর-একটা ভাবলোকে। সেই ভাবলোকের জীবনবৃত্তান্তের অনেকগুলি পৃষ্ঠা আমি পদ্মার উপরকার আকাশে লিখে গেছি' (পত্রসংখ্যা ১৪০)।